শিরোনাম
◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে: অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৯:১৮ সকাল
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৯:১৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাইরে অপরাধী ভেতরে দালাল

ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীর আগারগাঁওয়ের সরকারি ৭টি হাসপাতাল ঘিরে গড়ে উঠেছে অপরাধ চক্র। হাসপাতালগুলোর চিকিত্সক, কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে রোগী ও তাদের স্বজনরা প্রতিনিয়তই এই সব অপরাধীদের হাতে হেনস্থা হচ্ছেন। কখনও ছিনতাই, কখনও মারধরের শিকার হচ্ছেন তারা। আর এসব অপকর্ম হচ্ছে দিনের আলোয়। সর্বশেষ গত ২৯ নভেম্বর হাসপাতালের সামনেই ছিনতাইকারীরা জাতীয় হূদরোগ হাসপাতালের একজন চিকিত্সকের হাতের ব্যাগ ধরে টান দেয়। এতে তিনি নিচে পড়ে যান। ৫ দিন চিকিত্সাধীন থাকার পর ৫ ডিসেম্বর তার মৃত্যু ঘটে। অন্যদিকে হাসপাতালগুলোর ভেতরে দালালদের উত্পাতে অতিষ্ঠ রোগী ও তাদের স্বজনরা। এই ৭টি সরকারি হাসপাতালের আশপাশে অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে উঠেছে।

এমনকি দালালরা বাসা-বাড়িতেও রোগীদের নিয়ে গেলে হাতুরে ডাক্তাররা চিকিত্সা দিচ্ছেন। র্যাবের পক্ষ থেকে প্রায়ই ওইসব হাসপাতালের আশপাশে কিংবা চত্বরে অভিযান চালিয়ে রোগী ভাগিয়ে নেওয়া দালালদের আটক করে। তারা সহজে আবার জামিনে বেরিয়ে আসে। এসেই আবার পুরোদমে সেই দালালি ব্যবস্যা প্রকাশ্যে চালিয়ে যেতে থাকে। অপরদিকে ওই সাতটি হাসপাতালের আশপাশে গড়ে উঠেছে অনেক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এগুলো এই সাতটি হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। এক শ্রেণির চিকিত্সক রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে ওইসব ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন। এই পরীক্ষা নিরীক্ষা বাবদ প্রতি ডাক্তার ৫০ থেকে ৬০ ভাগ কমিশন পান। যারা এই কমিশন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করবে তারাই এর সঙ্গে জড়িত। যার কারণে কমিশন ও দালালি ব্যবসা প্রকাশ্যেই চলছে। দালালদের পক্ষ থেকে দু’জন বলেন, এই দালালির টাকা শুধু আমরাই খাই না এলাকার বড় ভাইদেরকে (কতিপয় রাজনৈতিক নেতা) দেই। এই বড়ভাইদের ছত্রছায়ায় তারা এই ব্যবসা করে থাকেন বলে জানায়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যতই আমাদের আটক করে বড় ভাইয়রা আমাদের শেষ ভরসা। আমরা সব জায়গা থেকে সহজেই খালাস পেয়ে যাই বড় ভাইদের কারণে। ওইসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মালিকরা নিয়মিত মাসোহারা এসব বড় ভাইদের দিয়ে থাকেন।

আগারগাঁও এলাকায় পাশাপাশি ৭টি সরকারি হাসপাতাল। এগুলো হল- সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হাসপাতাল, জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউট, কিডনী ইনস্টিটিউট, মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, শিশু হাসপাতাল, জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল (পঙ্গু হাসপাতাল), চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল। প্রতিদিন শত শত রোগী এই হাসপাতালগুলোতে চিকিত্সা নিতে আসেন। রোগী ও তাদের স্বজনরা জেনে বা না জেনে হাসপাতালের ভেতরে দালালদের খপ্পড়ে পড়ছেন। এই দালালরা রোগীদের ফুসলিয়ে বাইরের বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি ওই হাসপাতালগুলোর মান খুবই খারাপ। কোনো কোনোটি বাসার মধ্যে। নেই কোনো চিকিত্সক, নেই সেবিকাও। ফলে ওই সব জায়গায় গিয়ে রোগীরা বিপাকে পড়ছেন।

এক পর্যায়ে সেখান থেকে বের হতে চাইলেও ওই দালালরা তাদের বের হতে দেয় না। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শুধু দালাল নয়, হাসপাতালগুলোর এক শ্রেণির ডাক্তার, কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। র্যাব মাঝে মাঝে ওই সব ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা বা সিলগালা করলেও ওই সাতটি হাসপাতালের সার্বিক পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। তাই চিকিত্সার নামে এইসব হাসপাতালে আসা নিরীহ রোগীরা প্রতারকদের খপ্পড়ে পড়ে সর্বসান্ত হচ্ছেন। সাতটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব কথা স্বীকার করেছেন। তারা বলেন, দালালরা এতই শক্তিশালী যে কর্তৃপক্ষ তাদের নাম প্রকাশ করতেও ভয় পায়।

এদিকে গত ২৯ নভেম্বর হূদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিত্সক ডা. ফরহাদ আলম হাসপাতালের কয়েকটি এনজিওগ্রাম করে বেলা ৩টার দিকে রিক্সায় করে মোহাম্মদপুরের বাসায় ফিরছিলেন। হাসপাতালের ঠিক উল্টোদিকে কলেজ গেইটের পাশে এক ছিনতাইকারী ফরহাদের হাতের ব্যাগ ধরে টান দেয়। এতে তিনি নিচে পড়ে যান। ছিনতাইকারীরা তার ব্যাগ, মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হূদরোগ হাসপাতালে ভর্তি করে। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিত্সাধীন থাকার পর ৫ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। ডা. ফরহাদের বাবাও একজন চিকিত্সক। তার নাম ডা. বাহার আলম। ফরহাদের এক ছেলে, এক মেয়ে। তাদের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ।

জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউটের স্বাচিপের আহ্বায়ক ডা. কাজল কর্মকার বলেন, যেদিন ফরহাদ মারা যান ওই দিন সকালেই আমরা মানববন্ধন করেছি। মৃত্যুর পর স্বাচিপের সদস্য সচিব ডা. পিযূস বিশ্বাস বাদি হয়ে একটা মামলা করেছেন। পুলিশের সঙ্গেও এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। কার্ডিয়াক সোসাইটির সম্মেলনেও তার জন্য শোক প্রস্তাব আনা হয়েছে। আমরা তার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শুধু এই চিকিত্সক নন, রোগীর স্বজনরা প্রতিনিয়তই এই ধরনের ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। দূর-দূরান্তের রোগী হওয়ার কারণে ঝামেলা এড়াতে তারা পুলিশেও রিপোর্ট করেন না। এ কারণে ছিনতাইকারীরাও বেপরোয়া।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘আমাদের কাছে যারা এ সব বিষয় নিয়ে রিপোর্ট করে আমরা তাদের অভিযোগকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে তদন্ত করি। আর হাসপাতালগুলোতে মাঝে মধ্যেই অভিযান চালানো হয়। অনেকগুলো সরকারি হাসপাতাল এক জায়গায় থাকায় পুলিশের টহলটিম সবসময় ওই এলাকায় থাকে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়তই আমরা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।’

একজন রোগীর স্বজন বলেন, গত এক সপ্তাহে এলাকায় তার জানামতে, ৫/৭টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। সন্ধ্যার পর ওই এলাকা নির্জন থাকে। ফলে অপরাধীরা নির্বিঘ্নে ছিনতাই করে পালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে অভিযোগ করেও লাভ হয় না।

হূদরোগ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান বলেন, আমরা ডা. ফরহাদের পরিবারের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি। এই ছিনতাইকারীদের কারণে আমরা হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রোগী-স্বজনদের নিয়ে সব সময় উদ্বেগ আতঙ্কে থাকি। বিষয়টা আমরা পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি। ইত্তেফাক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়