শিরোনাম
◈ পাকিস্তানের মুশতাক আহমেদ বাংলাদেশের নতুন স্পিন কোচ ◈ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কারিকুলাম যুগোপযোগী করার তাগিদ রাষ্ট্রপতির ◈ ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনা, সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন ◈ সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণেই সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে: মির্জা ফখরুল ◈ বাংলাদেশের রাজনীতির অবনতি দুঃখজনক: পিটার হাস ◈ সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বাড়লো ১০ টাকা  ◈ নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান শিল্পমন্ত্রীর  ◈ প্রচণ্ড গরম থেকেই ঘটতে পারে মানবদেহের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ◈ অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি  ◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৭:১৭ সকাল
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৭:১৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভোটারদের মন জয়ে নানা কৌশলে আপ্রাণ চেষ্টা প্রার্থী ও কর্মীদের

ডেস্ক রিপোর্ট : আনুষ্ঠানিক প্রচারের ষষ্ঠ দিনে জমে উঠেছে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়াচ্ছে যেন তাদের কণ্ঠে। ভোটারদের মন জয় করতে নানা কৌশলে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মীরা। গত শুক্রবার ভোটারদের মন কাড়তে মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজে শরিক হয়ে ভোট প্রার্থনা করতে প্রার্থীদের দেখা গেছে। তবে কাউন্সিলর প্রার্থীরাই মাঠ গরম করে রেখেছেন সবচেয়ে বেশি। কারণ তারা সংখ্যায় বেশি। সম্মিলিতভাবে তাদের কর্মীর সংখ্যাও বেশি। অনেকটা পাল্লা দিয়ে তারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন। প্রধান সড়কসহ অলিগলিতে চলছে মাইকিং।

গানে, কবিতায় ও ছড়ায় মাইকে নানা ভঙ্গিমা চলছে প্রচার। সিটি কর্পোরেশনের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত কোথাও সামান্যতম নীরবতা নেই। চলছে মাইকিং, একটি ভোটের মূল্য আছে, ভোট দিবেন না যাকে তাকে, অমুক ভাই ভাল লোক জয়ের মালা তারই হোক, আল্লাহ যদি থাকে সহায় অমুক মার্কার হবে জয়।

নগরের পাড়া-মহল্লা ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো এখন পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে। প্রধান সড়কের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ঝুলছে পোস্টারের মালা। দেখে মনে হয় যেন পোস্টারের অলঙ্কার দিয়ে সাজানো হয়েছে রংপুর মহানগরকে।

তবে, এবারের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, বিপুলসংখ্যক নারী কর্মী নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নেমেছে। প্রার্থীদের পরিবারের কোন মহিলা সদস্যই ঘরে বসে নেই। সকাল হতেই তারা দল বেঁধে প্রচারে বেরিয়ে পড়ছেন। ঘুরছেন পাড়ায় পাড়ায় ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। শুধু তাই নয় দৈনিক মজুরির বিনিময়ে প্রচারের কাজ করছেন শ্রমিক ও নি¤œবিত্ত পরিবারের মহিলারা। প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী এলাকা থেকে শ্রমিক ও নি¤œবিত্ত পরিবারের মহিলাদের সংগ্রহ করে তাদের প্রচারের কাজে নামিয়ে দিয়েছেন। জনপ্রতি দৈনিক ২/৩শ’ করে টাকা দিচ্ছেন। প্রচার কাজে নিয়োজিত মহিলারা সকাল হলেই প্রার্থীর বাড়িতে ছুটছেন। সেখানেই সকালের নাস্তা সেরে কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন এবং প্রচারপত্র বিলি করছেন। অনেকে আবার একই সঙ্গে মেয়র এবং কাউন্সিলরের প্রচারের কাজ করছেন। ফলে তিনি দ্বিগুণ আয় করছেন। আবার দৈনিক ২/৩শ’ টাকা আয়ের লোভে অনেক বাসা-বাড়ির কাজের বুয়ারা প্রচারের কাজে নেমে পড়েছেন। ধাপ ইঞ্জিনিয়ার পাড়ার একটি ফ্লাটের গৃহকর্ত্রী তাহমিনা বেগম জানান, প্রচার শুরুর দিন থেকে তার কাজের বুয়া কাজে আসছে না। ওই কাজের বুয়া জানিয়েছে, ভোটের দিন পর্যন্ত সে কাজে আসবে না। কারণ সে ভোটের প্রচার করে দৈনিক পায় ৩শ’ টাকা। বাসা-বাড়িতে কাজ করে এক মাসে পায় মাত্র ১০০০/ টাকা। তাছাড়া, প্রার্থী জিতলে ভোটের পর আরও অনেক কিছু পাওয়ার আশা আছে। তাই এখন বাসা-বাড়িতে কাজের বুয়ার সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

অপরদিকে, নির্বাচনী প্রচার কাজে জড়িত হয়ে ভবঘুরে বেকারদের দিনকাল ভাল কাটছে। তারাই এখন প্রার্থীদের সবচেয়ে প্রিয়পাত্র। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তারা প্রার্থীদের পেছনে ছায়ার মতো লেগে আছে, স্লোগান দিচ্ছে, পোস্টার সাঁটাচ্ছে। নগদ টাকা পাচ্ছে। প্রচার এবং ফুর্তি দুটোই চলছে সমান তালে। এদের চাহিদা মেটাতে প্রার্থীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু কোন উপায় নেই। আপাতত জামাই আদর এদের ন্যায্য পাওনা।

তবে, রসিক নির্বাচনে এ পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রচার-প্রচারণা চলছে।

এবারই প্রথম রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। আর এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা (লাঙল), আওয়ামী লীগের সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু (নৌকা), বিএনপির কাওসার জামান বাবলা (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এটিএম গোলাম মোস্তফা বাবু (হাতপাখা), বাসদের আবদুল কুদ্দুস (মই) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সেলিম আখতার (আম) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হোসেইন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ (হাতি) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

প্রার্থীরা তাদের গণ-সংযোগের তিক্ত অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়ে বলছেন, সিটির সঙ্গে যুক্ত হওয়া ইউনিয়নগুলোতে প্রচার চালাতে গিয়ে নানা রকম প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। নানারকম গালমন্দও শুনতে হচ্ছে। কারণ বাস্তবে ওই এলাকাগুলোর কোন উন্নয়ন হয়নি। সিটির কোন সুবিধাই তারা পায়নি। প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের আস্থা অর্জন করা মুস্কিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রার্থীরা ভোট পেতে ছড়াচ্ছেন প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি। ভোটাররা আর প্রতিশ্রুতিতে ভুলতে রাজি না। নির্বাচিত হলে মেয়র ও কাউন্সিলররা এলাকার সমস্যা সমাধানে কী করতে চান, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা চান তারা। নগরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার মাছুদুর রহমান টুকুল বলেন, গত নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পর কোন প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করেননি সাবেক মেয়র। এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়নি। এবার আর প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করি না। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার আমীর আলী বলেন, ‘ভোটের আগে প্রার্থীরা অনেক কথাই বলে। ভোট শেষ হলে আর দেখা পাওয়া যায় না। তাই এবারের ভোট দেয়ার ব্যাপারে ভোটাররা অনেক হিসাব-নিকাশ করছেন।

আগামী ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন, ৩৩টি ওয়ার্ডে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৫ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

রংপুর সিটি করপোরেশনে ওয়ার্ড আছে ৩৩টি। সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১১টি। তিন লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৬ পুরুষ এবং ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৮ জন নারী। গত ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্র ১৯৩টি, ভোটকক্ষ ১ হাজার ১১১২টি। ৩ হাজার ৬৫২ জন নির্বাচন কর্মকর্তা এ নির্বাচনে কাজ করবেন। পাঁচবছর আগে রংপুর সিটির ভোটার ছিল ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২। জনকণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়