শিরোনাম
◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৬:৫০ সকাল
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৬:৫০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা

ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরিতে লেগেছে রাজনৈতিক আঁচড়। স্বাধীনতার ৪৭ বছরে দেশের রাজনৈতিক অবস্থার অনেক পটপরিবর্তন হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরিতেও। বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন দল তাদের পক্ষের লোকদের এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে নিয়েছে নানা অনিয়মের আশ্রয়, যার ধারাবাহিকতায় সাতবার তালিকা সংশোধিত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের। প্রতিবার তালিকা তৈরিতে সংযোজন হয়েছে নতুন নতুন মুক্তিযোদ্ধার নাম। আবার বাদও দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও অনেকে এ তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন।

গত জানুয়ারিতে নতুন করে আবারও মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকাভুক্ত করতে যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হলেও হাইকোর্টের আদেশে তা স্থাগিত রয়েছে। সর্বশেষ এপ্রিলের শুরুতে স্থ’িগতাদেশ তুলে নেওয়া হয়। তার পরও প্রায় ১৫০ উপজেলার ওপর এ স্থগিতাদেশ রয়েছে বলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) সূত্রে জানা যায়। তাই এ প্রক্রিয়া কবে শেষ হবে তার কোনো সঠিক তথ্য দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

গবেষক ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে-নাতিরাও সরকারি চাকরিসহ বিভিন্ন সুযোগ পাচ্ছেন। সরকার শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেওয়া চালু করে ছেলে-নাতিদের সুবিধা দেওয়া বন্ধ করে দেয়, তবে অনেকে আর এ তালিকায় যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখাবে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে অনেকে নানা মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এটা সরকারকেই ভেবে দেখতে হবে বলেও মত দেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দুই বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু হলেও নানা জটিলতায় তা ভেস্তে যেতে বসেছে। যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন ও আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছে জামুকা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। এসব অভিযোগে যাচাই-বাছাই কমিটিগুলো দফায় দফায় সংশোধন করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, যাচাই-বাছাই কমিটি নিয়ে যত অভিযোগ পড়েছে, এর মূলে রয়েছে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদগুলোর নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধ। এর ফলে এক পরে কাউকে কমিটিতে রাখা হলে অন্যপ ওই ব্যক্তিকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বলে অভিযোগ দিচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে যত অভিযোগ পড়ছে, এর মূলে রয়েছে অর্থনৈতিক কারণ। অভিযোগ রয়েছে, অনেকের বিরুদ্ধে জামুকায় অভিযোগ দাখিল করে আবার তার কাছেই চাঁদা দাবি করছেন অভিযোগকারী। এ ছাড়া অনেকে অনলাইন সম্পর্কে অভিজ্ঞ না হওয়াও তালিকা থেকে বাদ পড়ার কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষকদের মতে, সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়। আর এতে নতুন নতুন নাম যুক্ত হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়। এতে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা বেড়েছে। কোনো কোনো এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বিভিন্ন পদেও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ঢুকছে। একই সঙ্গে এসব কারণে অনেক সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধাও বাতিল হয়ে যাচ্ছেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের মামলায় সহায়তাকারী হাইকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব বলেন, এ প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে নানা অভিযোগ এনে মুক্তিযোদ্ধারা মামলা করা শুরু করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট প্রথমে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেন। যদিও পরবর্তী সময়ে এই স্থগিতাদেশ তুলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১৫০টি উপজেলার ওপর এ স্থগিতাদেশ আছে। আর প্রতিদিনই নতুন নতুন করে অনেক উপজেলা থেকে মামলা হচ্ছে।

জামুকার মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, কিছু কিছু উপজেলার অভিযোগ রয়েছে, যার কারণে পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা যাচ্ছে না। অভিযোগগুলো খাতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে পূর্ণাঙ্গ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা কবে শেষ হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ ট্রাস্ট সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালে এরশাদ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। এ ল্েয একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। এর আওতায় ১৯৮৬-৮৭ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় গঠিত মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সংগৃহীত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের (ইবিআরসি) তালিকা এবং ভারত থেকে প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৮, যা জাতীয় তালিকা হিসেবে পরিচিত।
অন্যদিকে ১৯৮৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর জেনারেল আমিন আহমদ চৌধুরী বীরবিক্রম ইবিআরসিতে রাখা ভারত সরকার থেকে প্রাপ্ত তালিকা সংগ্রহ করে, যা ইবিআরসি বা মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা বলে পরিচিত। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা ৬৯ হাজার ৮৩৩।

তার পর ১৯৯৪ সালে বিএনপি সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের তৎকালীন আহ্বায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ জ ম আমিনুল হক বীরউত্তম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নির্বাচন পরিচালনায় ভোটার সূচক তালিকা প্রণয়ন করেন, যাতে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৮৬ হাজার।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭৯০ মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়ন করা হয়, যা মুক্তিবার্তা (সবুজ) হিসেবে পরিচিত। পরে আরও যাচাই-বাছাই করে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫২ জনের আরেকটি তালিকা করা হয়, যা মুক্তিবার্তা (লাল) হিসেবে পরিচিত।

২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট সরকারের আমলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. সা’দত হুসাইনকে আহ্বায়ক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মমতাজ উদ্দিনকে সদস্যসচিব করে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় কমিটি করা হয়। এ কমিটি ২ লাখ ১০ হাজার ৫৮১ জনকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে এবং এ থেকে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৮৮৯ জনের তালিকার গেজেট প্রণয়ন করা হয়। বর্তমানে গেজেট আকারে প্রকাশিত তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ১৫ হাজার।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার মতায় এসে অভিযোগ করে, চারদলীয় জোট আমলে ৭০ হাজারের বেশি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছে। এর পর তারাও জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের নিয়ে কমিটি করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়।

কিন্তু দেখা যায়, আওয়ামী লীগ মতায় এসে একইভাবে নতুন করে আরও সাড়ে ১১ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেয়। বর্তমান সরকার মতায় এসে নিয়ম লঙ্ঘন করে গেজেট প্রকাশ করায় ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন, বিশেষ গেরিলা বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের ২ হাজার ৩৬৭ জনের তালিকাসহ মোট ৩ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সনদ ইতোমধ্যে বাতিল করে দেয়। পরে এ নিয়ে হাইকোর্টে রিট হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় বিভ্রান্তি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মিজানুর রহমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নাম ওঠানোর ক্ষেত্রে লাল মুক্তি বার্তায় মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকাভুক্ত আছে কিনা, প্রধানমন্ত্রীর স্বারিত সনদ এবং ভারতের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকাভুক্ত আছে কিনা, তা যাছাই করে তালিকাভুক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু অনেক মুক্তিযোদ্ধাই এ সংক্রান্ত দলিল ও কাগজপত্র দাখিল করতে ব্যর্থ হন। আবার অনেকের আবেদনে নাম, ঠিকানা, বাবার নাম ভুলসহ সংশ্লিষ্ট দলিল ও কাগজ দাখিলে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। এসব কারণে তালিকা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়েছে। দৈনিক আমাদের সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়