সাঈদা মুনীর : ঢেঁড়স প্রতিদিন খাওয়া উচিত, এই সবজিটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি স্বাস্থ্যকরও । গবেষকদের মতে, ঢেঁড়সে উপস্থিত ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস এবং আরও সব পুষ্টিকর উপাদান শরীরের অন্দরে প্রবেশ করার পর নানাবিধ উপকারে লেগে থাকে। শুধু তাই নয়, একাধিক রোগে থেকে শরীরকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা নেয় এই সবজিটি। তাই তো সেই ১২ শতাব্দীর আগে থেকে এই সবজিটি খাচ্ছি আমরা। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে জানা যায়, ইজিপ্টের বাসিন্দারা প্রথম এই সবজটির চাষ শুরু করেন। তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা মিশরের সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে যায় মধ্যপ্রাচ্যের বাকি দেশ এবং উত্তর আফ্রিকাতেও। আমেরিকায় ঢেঁড়সের প্রবেশ ঘটে আফ্রিকান দাসেদের হাত ধরে, ১৭০০ সালে। একই সময়ে ইউরোপ এবং আমাদের দেশেও ঢেঁড়স খাওয়া রীতিমতো শুরু হয়ে গেছে। আর আজ তো শুধু ভারত নয়, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, গ্রীস, টার্কি, ক্যারিবিয়ান দ্বীপ, ইউরোপ এবং আমেরিকাতে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ঢেঁড়স।
আসলে ঢেঁড়সের অন্দরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার, ভিটামিন এ, সি এবং ফলেট। সেই সঙ্গে রয়েছে ভিটামিন কে, বি, আয়রন, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, মেঙ্গানিজ,ম্যাগনেসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিটা ক্যারোটিন। এইসবকটি উপাদান একযোগে ডায়াবেটিস, অ্যাস্থেমা, অ্যানিমিয়া, ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার সহ একাধিক রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে প্রতিদিন এই সবজিটি খেলে একদিকে যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে,
ঢেঁড়সে উপস্থিত ফলেট হাড়ের গঠনে উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই কারণেই তো ৪০-এর পর থেকে প্রতিটি মহিলার নিয়ম করে ঢেঁড়স খাওয়া উচিত।
প্রতি বছর নতুন করে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তের সংখ্যাটাও লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষণা বলছে ,প্রতিদিন ৬-৮ টা ঢেঁড়স খেলে শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদন চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে।
শরীরে উপস্থিত বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর মধ্যে দিয়ে হার্টকে সুস্থ রাখতে ঢেঁড়সের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এই সবজিটি ফাইবার সমৃদ্ধি। কনস্টিপেশন, বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো রোগের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, একাধিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে যদি নিয়মিত ঢেঁড়স খাওয়া যায়, তাহলে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশেই হ্রাস পায়।
এই সবজিটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এতটাই শক্তিশালী করে তোলে যে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারি অ্যালার্জেনরা কোনও ধরনের ক্ষতি করার সুযোগই পায় না
ঢেঁড়স থাকা বিটা ক্যারোটিন এবং লুটেইন একদিকে যেমন দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে সাহায্য করে, তেমনি ছানি এবং গøুকোমার মতো রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।
অতিরিক্ত ওজন কমাতে প্রতিদিনের ডায়েটে ঢেঁড়স অর্ন্তভূক্ত মাস্ট! কারণ এই সবজিটির অন্দরে থাকা ফাইবার অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা যেমন কমে। সেই সঙ্গে বারে বারে খাওয়ার ইচ্ছাও চলে যায়। ফলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।সূত্র: ইন্ডয়িান টাইমস।
আপনার মতামত লিখুন :