নাফরুল হাসান: স্বাধীনতার ৪৬ বছরে প্রাথমিক থেকে উচ্চ স্তর পর্যন্ত বেড়েছে বিভিন্ন ক্যাটাগরির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বৃদ্ধি পেয়েছে শিক্ষিতদের সংখ্যাও। তবে সে তুলনায় বাড়েনি কর্মসংস্থান। এজন্য কারিগরি শিক্ষিতের হার কম হওয়াই কারণ হিসেবে দেখছেন গবেষকরা। এদিকে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন বেকার শ্রমশক্তি দীর্ঘমেয়াদে কর্মসংস্থানের বাইরে অবস্থান করলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থমকে দাঁড়াবে।
সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করারও সুযোগ পান না, এমন মানুষদের বেকার বলছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। এ মানদণ্ডে বিবিএস'র সর্বশেষ তথ্য বলছে, বাংলাদেশে এখন ১৫ বছরের বেশি বয়সী কর্মক্ষম মানুষ আছেন ১০ কোটি ৬১ লাখ। আর সপ্তাহে ৪০ ঘন্টার কম কাজ করে এমন সংখ্যা রয়েছে ১৮ লাখ। এরমধ্যে ৫ কোটি ৯৫ লাখ নিযুক্ত আছেন বিভিন্ন কাজে। তবুও সব মিলিয়ে প্রকৃত বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখের উপরে।তবে এর কারণ হিসেবে গবেষকরা বলছেন, ‘বিভিন্ন খাতে প্রয়োজন থাকা স্বত্বেও আধুনিক শিল্প সংশ্লিষ্ট দক্ষতা না থাকায় কাজে আসছে না এসব জনশক্তি।’
এ সম্পর্কে রামরুর সহযোগী অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘সরকারী ইমেজ তৈরি করতে হবে। জনগণকে বোঝাতে হবে এই কারিগরি শিক্ষা নিলে শুধু দেশে নয় বিদেশেও বিভিন্ন চাকরী ক্ষেত্রে ভাল ফল পাওয়া যাবে।’
এদিকে বিটাকের পরিচালক সৈয়দ মাে. ইহসানুল করিম বলেন, ‘শুধু কারিগরি মানুষ বানালেন কিন্তু শিল্পের মধ্যে তার চাহিদা না থাকে তাহলে আরেকটা সমস্যার তৈরি হবে। আমাদের শিল্পায়ন ও শিল্পে নিয়োজিত মানুষকে শিক্ষিত করা উভয় জরুরী।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এরইমধ্যে ৫টি টাস্কফোর্স গঠন করলেও দেশে কারিগরি দক্ষতার হার এখনো ১০ শতাংশ এবং এ শিক্ষায় ভর্তির হার মাত্র ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে সার্বিক উন্নয়ন ধরে রাখতে দক্ষতার হার বাড়ানোর পরামর্শ অর্থনীতিবিদ ও গবেষকদের। কারিগরি শিক্ষায় ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং-এ বাংলাদেশ ১৪৯ এর মধ্যে ১১৪ নম্বর।
এ সম্পর্কে রামরুর সহযোগী অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘২০৩০ সালে জিডিপি ৭ দশমিক ৫ এর উপরে রাখতে হলে আমাদের দেশে ৬৫ লক্ষ দক্ষ শ্রমিকের দরকার। আমাদের চাহিদা কোথায় হচ্ছে সেই অনুযায়ী কারিগরি শিক্ষা দিয়ে শ্রমিক আনতে পারবো কি না তা যাচাই করা উচিত।’
বাংলাদেশে প্রতিবছর ২২ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করলেও চাকরী পায় মাত্র ৭ লাখ। কোন ধরনের শিক্ষার সুযোগ পাননি এমন মানুষের মধ্যে বেকার রয়েছেন মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ। সেখানে উচ্চ শিক্ষিতের মধ্যে বেকারের সংখ্যা ১০ শতাংশ। গবেষকরা বলছেন, শ্রমবাজারের চাহিদা মাথায় রেখে শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বয় না করলে এ সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে। এক্ষেত্রে কর্মস্থানের হার ২ শতাংশ বাড়ানো গেলে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া সম্ভব।
সূত্র : সময় টিভি
আপনার মতামত লিখুন :