ডেস্ক রিপোর্ট: আজ ৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়েছিল।
নেত্রকোনা: এই দিনে নেত্রকোনা শহরের নাগড়া কৃষি ফার্মে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধের মাধ্যমেই নেত্রকোনা পাক হানাদার মুক্ত হয়। ওই সময় তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তারা হলেন আবু খাঁ, আব্দুর রশিদ এবং আব্দুস সাত্তার। আহত হন মুক্তিযোদ্ধা আবু সিদ্দিক আহমেদ। দিনটি বিভিন্ন কর্মসূচিতে পালিত হবে।
ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ): ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর রাতে একযোগে মুক্তিযোদ্ধাদের থানা আক্রমণের ভয়াবহতায় ভীত হয়ে পাক হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকাররা গভীর রাতে সুকৌশলে থানা থেকে পালিয়ে যায়। ৯ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় ঈশ্বরগঞ্জ। দিনটি ঈশ্বরগঞ্জবাসীর কাছে অত্যন্ত গর্ব ও আনন্দের।
ত্রিশাল (ময়মনসিংহ): ৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে মেজর আফসার বাহিনীর যুদ্ধকালীন কমান্ডার আনছার উদ্দিন ও কমান্ডার আব্দুল বারীর নেতৃত্বে নওধার হয়ে সুতিয়া নদী পার হয়ে ত্রিশাল থানায় মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করে। ভোর পর্যন্ত গোলাগুলি শেষে রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক ও তত্কালীন ত্রিশাল থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি জৈমত আলী ৯ ডিসেম্বর সকালে স্থানীয় নজরুল একাডেমি মাঠে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
দাউদকান্দি (কুমিল্লা): ৭ ডিসেম্বর রাতে সীমান্তবর্তী কুমিল্লা বিমান বন্দর এলাকায় অবস্থানরত পাক সেনাদের ঘাঁটির উপর মিত্র বাহিনী ও মুক্তি বাহিনী হামলা শুরু করে। ৮ ডিসেম্বর প্রথমত টমছম ব্রিজ এবং পরে টাউন হল এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীন বাংলায় মুক্ত আকাশে পতাকা উড়ায়। তবে ৯ ডিসেম্বরই পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হয় দাউদকান্দি। দিবসটি উপলেক্ষ উপজেলা সদরে ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে জারিফ আলী শিশুপার্কে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণসভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
গফরগাঁও (ময়মনসিংহ): ৫ ডিসেম্বর উপজেলার মশাখালী স্টেশনের দক্ষিণে শীলা নদের নিয়ন্ত্রণ নেন মুক্তিযোদ্ধারা। সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ী হলে পাকহানাদার বাহিনী পিছনে হটে যখন গফরগাঁও সদরে আশ্রয় নেয় তখন ইকবাল-ই-কামালের নেতৃত্বে কামাল কোম্পানি এবং আফসার বাহিনীর ব্যোম সিরাজের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীর পিছু ধাওয়া করে গফরগাঁও সদরসহ পুরো উপজেলা হানাদার মুক্ত করেন। ৯ ডিসেম্বর ভোরের সোনালী সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মুক্তির উল্লাসে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হয় এবং হানাদার মুক্ত হয় গফরগাঁও।
কুমারখালি (কুষ্টিয়া): ৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদেরকে সংগঠিত করে কুমারখালি শহরের চারপাশ ঘিরে পাক বাহিনীর ক্যাম্প (বর্তমানে কুমারখালি উপজেলা পরিষদ) আক্রমণ করে। দীর্ঘসময় যুদ্ধের পর পাক বাহিনী টিকতে না পেরে পালিয়ে কুষ্টিয়ার পথে রওনা হয়। পাক বাহিনীর বহনকারী ট্রেন চড়াইকোল হাতিসাঁকো এলাকায় এলে বিস্ফোরক দিয়ে রেল লাইন উড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এরপর পাকবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়। শহর হানাদার মুক্ত হওয়ার পর সর্বস্তরের জনতা এবং মুক্তিযোদ্ধারা রাস্তায় নেমে আনন্দ মিছিল বের করে।
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) : জেলায় প্রথম স্বাধীন পতাকা উড়ে আড়াইহাজারে। প্রতিবছর বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
৯ ডিসেম্বর উপজেলার পাঁচরুখী ব্রিজ, ডহরগাঁও এবং মেঘনা নদী দিয়ে অপারেশন চালানো হয়। প্রবল প্রতিরোধের মুখে পাকবাহিনী ওই সময় আড়াইহাজার থানা এলাকা ছেড়ে ভুলতা দিয়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা থানা সদরের ডাকবাংলোয় পাকবাহিনীর ক্যাম্প দখল করে নেয়। সেই সঙ্গে স্বাধীন দেশের পতাকা উড়িয়ে আনন্দ উল্লাস করেন।
তিতাস (কুমিল্লা):আজ তিতাস মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আর মিত্র বাহিনীর যৌথ আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী দাউদকান্দি থেকে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা উড়িয়ে দেয় স্বাধীন বাংলার লাল সবুজ পতাকা। দিবসটি পালন উপলক্ষে তিতাস উপজেলায় নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। সূত্র: ইত্তেফাক
আপনার মতামত লিখুন :