শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৯:১৫ সকাল
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৯:১৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কালার অব ফ্রিডম

ডেস্ক রিপোর্ট : ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের উত্তর প্রদেশে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে দেওয়ার পর কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের উদ্যোগে যে আর্ট ক্যাম্প হয়েছিল, সেখানেই শিল্পী শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে পরিচয় সাংবাদিক অজয় রায়ের। ভারতীয় এই সাংবাদিক এখন বার্তা সংস্থা এপির কলকাতা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।

ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা নাইট উপাধি পাওয়া বাংলাদেশের গর্ব শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদকে নিয়ে ভারতীয় সাংবাদিক অজয় রায় প্রায় ২৫ বছরের চেষ্টায় তৈরি করেছেন ‘কালার অব ফ্রিডম’ নামের একটি তথ্যচিত্র, যা ঢাকায় প্রদর্শনের অপেক্ষায় আছে।

অজয় রায় জানান, কলকাতার ওই আর্ট ক্যাম্প উপলক্ষে ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ নামের একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেন। সে সময় শাহাবুদ্দিন তাঁকে প্যারিসে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। শাহাবুদ্দিনকে নিয়ে তৈরি হয় আরো একটি ডকুমেন্টারি-‘সেলিব্রেশন অব ফ্রিডম’। অজয় রায় বলেন, এগুলো হচ্ছে ছোট ছোট ব্লকের কাজ। ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ ছবিটা ছিল দুর্যোগপূর্ণ সেই সময়ে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে শিল্পীদের একটি প্রতিবাদের ছবি। আর ‘সেলিব্রেশন অব ফ্রিডম’ হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে প্যারিসে গিয়ে শিল্পী একাকী কিভাবে সেখানে কাজ করছেন, তাঁর নিঃসঙ্গতা, কাজের স্বাধীনতা-এসব নিয়ে।

‘কালার অব ফ্রিডম’ সম্পর্কে অজয় রায় বলেন, ‘উনার সঙ্গে ২৫ বছর ধরে লেগে আছি। মূল আকর্ষণ মুক্তিযুদ্ধ।  উনি যেখানে যেতেন-সিঙ্গাপুর, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে; আমিও পৌঁছে যেতাম। একজন ব্যক্তির ডকুমেন্টারি একদিনে হয় না। আমি উনার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার আলগী গ্রামেও গিয়েছি। আগরতলায় যেখানে অবস্থান নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, যেখানে যখন সুযোগ পেয়েছি চিত্রশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন ভাই সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছি। উনিও সহযোগিতা করেছেন। ভাবির কাছ থেকেও সহযোগিতা পেয়েছি। উনার ছোট মেয়ে চর্যা যখন ছোট ছিল তখন তাকে কোলে নিয়ে ঘুরেছি। প্যারিসের সব জায়গায় উনি আমাকে নিয়ে গেছেন। সেখানে তিনি নিজের বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। আমি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিইনি, কিন্তু এ যুদ্ধে নানাভাবে যুক্ত ছিলাম। ’

অজয় রায় আরো বলেন, ‘আমার এ ডকুমেন্টারির জন্য মুম্বাইয়ে ভারতের ন্যাশনাল আর্কাইভ থেকে মুক্তিযুদ্ধের অনেক ফুটেজও পেয়ে যাই। সেগুলো নিয়ে উনার সঙ্গে বসে প্রয়োজনীয় অংশগুলো বেছে নিই। এ কাজ করার সময় আমার মনে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সেই সময়ের মধ্যেই আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি। উনার আঁকার মধ্যে ঢুকে গেছি। এ কাজের জন্য কম করে হলেও ২২ বার আমি প্যারিসে গিয়েছি। এপিতে কাজ করার সুবাদে আমি লন্ডনে যাওয়ার সুযোগ পাই। আর লন্ডনে গেলেই প্যারিসে উনার কাছে পৌঁছে যাই। ’

‘কালার অব ফ্রিডম’ ফিল্মটা এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের। প্রায় এক বছর আগে এর কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও এর প্রদর্শন হয়নি। বিদেশি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আর্কাইভে সংরক্ষণের জন্য এ ফিল্মের কপি সংগ্রহ করেছে। আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে এটি সংগ্রহের আগ্রহ জানিয়ে চিঠি লিখেছে। অজয় রায় বলেন, ‘এই ছবিটা প্রথমে ঢাকাতেই দেখাতে হবে। এ বিষয়ে অনেকের অনুরোধ রয়েছে। এরপর কলকাতায় দেখানোর জন্য শিল্পীকে অনুরোধ করব। ’

অজয় রায় জানান, কয়েক বছর আগে চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ আগরতলার মেলাঘরে গিয়ে বিশাল ক্যানভাসে মুক্তিযুদ্ধের ছবি এঁকেছিলেন। ‘কালার অব ফ্রিডম’-এ তারও ছবি আছে। সে সময় হারিকেনের সলতের কালি আর আইভরি পেনসিল দিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর যে ছবি এঁকেছিলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে স্টেনগান হাতে তাঁর ছবি, প্যারিসে যেখানে বসে তৈরি হয়েছিল তাঁর প্রথম চিত্রকর্মটি, শাহাবুদ্দিন সম্পর্কে বিদেশের বিখ্যাত চিত্রকলা সমালোচকদের মূল্যায়ন, শিল্পী সম্পর্কে ভারতের রাষ্ট্রপতির বক্তব্য—এসব বিষয় স্থান পেয়েছে ‘কালার অব ফ্রিডম’-এ।

অজয় রায় গত ১ ডিসেম্বর ঢাকায় এসেছেন। তিনি জানান, এর আগে গত এপ্রিলে ঢাকায় এসেছিলেন ‘দ্য টেলস অব তিস্তা’ ছবি নিয়ে। সে সময় শিল্পকলা একাডেমিতে এবং লালমনিরহাটে ছবিটির প্রদর্শন হয়।

অজয় রায়ের জন্মস্থান বাংলাদেশের ফরিদপুরে। তিনি পড়াশোনা করেছেন টাঙ্গাইলের করটিয়া সা’দত কলেজ ও ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজে। বাবা ও ভাইবোন দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর মাকে নিয়ে বাংলাদেশেই ছিলেন তিনি। একাত্তরে তিনি ভারতে যাওয়ার পর আর ফিরতে দেননি। এর পরও বাংলাদেশকে নিজের দেশই ভাবেন অজয় রায়।

অজয় রায় ও তাঁর তথ্যচিত্র নির্মাণ প্রসঙ্গে শিল্পী শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার পর কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের উদ্যোগে যে আর্ট ক্যাম্প হয় সেখানে তাঁর সঙ্গে আমার দেখা। ওখানে যাওয়ার পর ছোট ক্যানভাসের বদলে বড় ক্যানভাসে আঁকার উদ্যোগ নিই। ব্যথা-বেদনা সব ঠেলে ফেলে ভালোবাসার বিষয়টি বড় করে ফুটিয়ে তুলতে চাই। ফিগারটা তো একটা প্রিটেস্ট। ওই সময় থেকে উনি পেছনে পেছনে ঘুরছেন। উনাকে সঙ্গে নিয়ে একটি পরিবার তৈরি হয়ে গেল। অনেকবার উনি প্যারিসে গিয়েছেন। বিষয়টি এত সহজ নয়। রাজা-বাদশাহর ছেলে হলে ওকে। বারবার যাওয়া তাঁদের জন্য সহজ। অজয়দার সঙ্গে ভালোবাসার একটা বিষয় তৈরি হয়েছে। মনের যে ব্যথা-বেদনা, আকাঙ্ক্ষা, শূন্যতা তা পূরণ হচ্ছে। আমার যত ডকুমেন্ট আছে, যত কাহিনি আছে, ছবি আঁকা বলেন সব অজয়দার কাছে আছে। উনি মনেপ্রাণে খেটেখুটে ফিল্মটা করেছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, উনি মুক্তিযুদ্ধকে এত ভালোবাসেন, তাঁর ভেতরে এ নিয়ে একটা হাহাকার কাজ করে। এই বিষয়টি ওনাকে এই ফিল্মটা তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করেছে বলে মনে হয়। ’

সূত্র : কালের কণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়