শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৭:৫৭ সকাল
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৭:৫৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করেই নির্বাচন করতে পারব

ডেস্ক রিপোর্ট : ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ১৯৭৯ সালে যুক্ত হন রাজনীতির সঙ্গে। ১৯৯১-৯৬ পর্যন্ত বিএনপি সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদমন্ত্রী, '৯৬ সালে স্বল্পমেয়াদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ২০০১-০৬ সালে ওই সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন তিনি

প্রশ্ন :বিএনপি টানা ১১ বছর ক্ষমতায় নেই। ১৯৭৮ সালে ক্ষমতায় থেকে সে সময়ের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ দলটি গঠন করেন। দলটি কি সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পেরেছে বলে মনে করেন?

খন্দকার মোশাররফ :অবশ্যই কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে শহীদ জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত দলটি। তিনি যে সময় দলটি প্রতিষ্ঠা করেন, তখন রাজনৈতিক শূন্যতা ছিল, যা সৃষ্টি হয়েছিল আওয়ামী লীগের কারণে। গণতন্ত্রপ্রিয় দল হওয়া সত্ত্বেও তারা ১৯৭৫ সালের জুন মাসে সব দল বাতিল করে একটিমাত্র রাজনৈতিক দল বাকশাল গঠন করে। স্বাধীনতার পর তারা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশের যে সংবিধান প্রণয়ন করে, তাতে বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করা হয়নি। জাতীয়তাবাদের বিষয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ ছিল। কারণ বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় বাঙালি হিসেবে পরিচিত অনেক লোক। সংবিধানে উল্লিখিত সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক ছিল। জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ক্ষমতার কেন্দ্রে এসে জাতিগত পরিচয়ে বাংলাদেশি প্রতিস্থাপন করেন। বিসমিল্লাহ সংযোজন করেন। ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও সব ধর্মের সমান অধিকার প্রতিস্থাপন করেন। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির পরিবর্তে ব্যক্তি উদ্যোগকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু তারই চিন্তার ফল। উন্নয়নের গণতন্ত্র ধারণাও দেশবাসী তার কাছ থেকেই প্রথম লাভ করে। এসব মৌলিক ধারণা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ছিল রাজনৈতিক দল এবং ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি গঠনের মাধ্যমে সে পথেই যাত্রা শুরু করে। জনগণ জিয়াউর রহমানের এ আদর্শ গ্রহণ করেছে, বিএনপির পতাকাতলে দলে দলে সমবেত হয়েছে। এখনও তারা এ আদর্শের পক্ষে রয়েছে। এ আদর্শ কালোত্তীর্ণ। অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়েছি আমরা। এখন বলতে পারি, আগের চেয়েও বেশি জনপ্রিয়তা নিয়ে বিএনপি টিকে আছে।

প্রশ্ন : ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর অনেকে মনে করেছিলেন যে, বিএনপি অধ্যায়ের শেষ...

খন্দকার মোশাররফ :সময়ের পরীক্ষায় রাজনীতির তথাকথিত পণ্ডিতদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলটি আরও বিকশিত হয়েছে। শক্তিশালী হয়েছে। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে বিএনপি তার নেতৃত্বে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপির প্রতি স্বৈরাচারী আচরণ করছে। কিন্তু এর ফলে জনগণ আওয়ামী লীগের প্রতিই বীতশ্রদ্ধ হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে সরকারের ব্যর্থতার কারণে মানুষ ক্ষুব্ধ। এ অবস্থায় বিকল্প বৃহৎ দল হিসেবে বিএনপির সমর্থন আরও বেড়েছে। আমি বলতে পারি, একটি গণতান্ত্রিক মধ্যমপন্থি দল হিসেবে বিএনপি সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জিয়াউর রহমানের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। বিএনপির অবদান অস্বীকারের চেষ্টা করে লাভ নেই।

প্রশ্ন : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি ইতিমধ্যেই আলোচনায়। আপনি বলছেন, বিএনপি অনেক শক্তিশালী। বিএনপি কি জোটগতভাবে নির্বাচন করবে?

খন্দকার মোশাররফ :এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০০১ সালে চারদলীয় জোট নির্বাচন করেছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর জোট সম্প্রসারিত হয়ে প্রথমে ১৮ দল ও পরে ২০ দলীয় জোট গঠিত হয়। একাদশ সংসদ নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হয় সে জন্য বিএনপি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলছে। ২০ দলীয় জোটের বাইরেও কিছু দল ও ফোরাম একই কথা বলছে। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনাও চলছে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে সমঝোতা না হলে দেশে আন্দোলন গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০ দলীয় জোটের বাইরে যারা একই দাবিতে সোচ্চার, তারা পরিস্থিতির প্রয়োজনে যুগপৎ আন্দোলন করবে, নাকি ২০ দলের সঙ্গে যুক্ত হবে, সেটা সময়ই বলে দেবে।

প্রশ্ন : আন্দোলন নিয়ে কী ভাবছেন? দুই দফায় আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন, সরকার সেটাই দাবি করছে?

খন্দকার মোশাররফ :বিএনপি নেত্রী সময়মতো নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা দেবেন। এর পক্ষে জনসমর্থনের জন্য আমরা জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি দেব। সরকারের মনোভাব ও আচরণের ওপর নির্ভর করবে রাজপথের আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা আছে কি-না। যদি প্রয়োজন বলে বিবেচিত হয়, অবশ্যই করা হবে। গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ পথে জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য যা কিছু করার তা করা হবে। জনগণ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন আর দেখতে চায় না। তারা ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে চায়। সে জন্য চাই অংশগ্রহণ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন। এ জন্য সবার সমান সুযোগ থাকতে হবে। এসব উপেক্ষা করে সরকার যদি গায়ের জোরে নির্বাচনের পথে যায়, জনগণ হতে দেবে না। এ ব্যাপারে দলের পরিকল্পনার প্রয়োজন হবে না, জনগণ স্বতঃস্ম্ফূর্তভাবে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে।

প্রশ্ন : সহায়ক সরকার না হলেও নির্বাচনে যাবেন?

খন্দকার মোশাররফ :খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচনকালীন সরকার- এটা যে নামেই অভিহিত হোক। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অতীতে হয়নি। এ কারণে দলনিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি যৌক্তিক। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা একই দাবি করেছিলেন। সমঝোতার ভিত্তিতে আমরা সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান অন্তর্ভুক্ত করি। এটা না হলে বর্তমানে দুটি প্রধান দলের মধ্যে যে আস্থাহীনতা ও অবিশ্বাস, তা দূর হবে না। আমরা বিশ্বাস করি, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন আর হবে না। জনগণ ও বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে আরেকবার প্রতারণা করা সম্ভব হবে না। চার বছর আগে শেখ হাসিনা 'নিয়ম রক্ষার, সংবিধান রক্ষার নির্বাচনের' কথা বলেছিলেন। সে অবস্থান থেকে তিনি সরে গেছেন। আমাদের বিশ্বাস, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করেই নির্বাচন করতে পারব। একাদশ সংসদ নির্বাচনের সিদ্ধান্তে আমরা অবিচল রয়েছি।

প্রশ্ন : নির্বাচনে কী এজেন্ডা সামনে আনবেন?

খন্দকার মোশাররফ :খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছেন। ক্ষমতায় গেলে আর্থ-সামাজিক সব ক্ষেত্রে কী কী সংস্কার, পরিবর্তন, উদ্যোগ নেওয়া হবে- সেটা রয়েছে। আমরা জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দেব। আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রের তিনটি মূল স্তম্ভ ধ্বংস করেছে। বিতর্কিত করেছে। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদকে কোনোভাবেই জনপ্রতিনিধিত্বশীল বলা চলে না। ১৫৪ আসনে প্রার্থী ছিল না। সরকার গঠনের জন্য যত সংখ্যক আসনের সমর্থন দরকার, জনগণ সেখানে ভোটই দেয়নি। বাকি ১৪৬ আসনে ৫-১০ শতাংশ ভোট পড়েছে। বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই। কথিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রধান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। এ দল থেকে আছে চারজন মন্ত্রী। ভোটারবিহীন, বিরোধী দলবিহীন সংসদ অকার্যকর। সুপ্রিম কোর্টের অভিমতেও বলা হয়েছে সংসদ ডিসফাংশনাল। রাষ্ট্রের দ্বিতীয় স্তম্ভ নির্বাহী বিভাগ দলীয়করণের কারণে দুর্বল করে ফেলা হয়েছে। তৃতীয় স্তম্ভ বিচার বিভাগ। এখানে প্রধান বিচারপতিকে প্রথমে জোর করে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। পরে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। যেভাবে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে, উচ্চতর আদালত প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বিচার বিভাগের নিম্নস্তরে ইতিপূর্বে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করব। জঙ্গিবাদের যে উত্থান হচ্ছে, তা রুখে দেওয়ার পরিকল্পনা নেব। অর্থনীতিতে রিজার্ভ লুট, ব্যাংক লুট ইত্যাদির মাধ্যমে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে, তা দূর করব। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেব।

প্রশ্ন : দল ক্ষমতায় যেতে না পারলে?

খন্দকার মোশাররফ :আগামী একাদশ নির্বাচন সামনে রেখেই আমরা ভিশন-২০৩০ দিয়েছি। আমরা আশাবাদী, ভোট দিতে পারলে জনগণ আমাদের ক্ষমতায় বসাবেই। আমরা ক্ষমতায় থেকেই এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করব।

প্রশ্ন : বিএনপি রাজপথে নেই। সংসদেও নেই। এখন মিডিয়ানির্ভর দলে পরিণত হয়েছে বলে অভিমত রয়েছে। আপনি কী বলেন?

খন্দকার মোশাররফ :একেবারেই ঠিক নয়। বরং বর্তমান সরকারই সব সংবাদপত্র, টেলিভিশন, বেতার নিয়ন্ত্রণ করছে। যে মিডিয়া নিরপেক্ষ ভূমিকা নেওয়ার চেষ্টা করেছে, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের হেনস্তা, হয়রানি করা হচ্ছে। মাহমুদুর রহমান বহুদিন কারাগারে ছিলেন। শফিক রেহমান নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেক সাংবাদিককে বিভিন্ন অজুহাতে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ ভয়ভীতি দেখিয়ে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। আমরা রাজপথের আন্দোলনে ছিলাম। আশির দশকে খালেদা জিয়া আপসহীন নেত্রী, দেশনেত্রী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। ২০১৪ সালের আন্দোলনে জনগণের পূর্ণ সমর্থন ছিল। খালেদা জিয়া নির্বাচন বয়কটের আহ্বান জানান। জনগণ তাতে সাড়া দিয়েছে। ১৫৪ আসনে কেবল বিএনপি নয়, কেউ অংশ নেয়নি। এসব প্রমাণ করে না যে, আমাদের আন্দোলনে জনগণের সমর্থন ছিল? আমাদের সমাবেশে মানুষের স্বতঃস্ম্ফূর্ত উপস্থিতি কি প্রমাণ করে না যে, বিএনপি সবচেয়ে জনপ্রিয় দল?

প্রশ্ন : সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতার বিরুদ্ধে বিএনপি আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে- এ অভিযোগ নিয়ে কী বলবেন?

খন্দকার মোশাররফ : সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে বিএনপি সর্বদা সোচ্চার। জনগণ জানে, স্বৈরাচারী সরকার বিএনপিকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না। সমাবেশের অনুমতি দেয় না। রমজানে ইফতার পার্টি করতে দেয় না। কিন্তু তারপরও সরকারের প্রতিটি ব্যর্থতার বিরুদ্ধে আমরা কথা বলছি। সরকারের ব্যর্থতার কারণেই জনগণ তাদের বিরুদ্ধে চলে গেছে। অতীতের চেয়ে অধিকভাবে বিএনপিকে সমর্থন দিচ্ছে।

প্রশ্ন : আওয়ামী লীগ কি ফের একতরফা নির্বাচন আয়োজন করবে?

খন্দকার মোশাররফ :গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা, ভোটের অধিকার- এসব বিবেচনায় আওয়ামী লীগ ফের একতরফা নির্বাচন করতে পারবে বলে মনে করি না। সরকার যদি দেয়ালের লিখন, জনগণের মনের কথা বুঝতে পারে, তাহলে একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটবে বলে বিশ্বাস হয় না। আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীন গণতান্ত্রিক দল। ১৯৭৫ সালে তারা গণতন্ত্র থেকে বিচ্যুত হয়ে ভুল করেছিল, সেটা তারা ভালোভাবেই উপলব্ধি করে। ২০১৪ সাল থেকে গণতন্ত্র প্রতিনিয়ত দুর্বল হচ্ছে। আমার বিশ্বাস, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসব পছন্দ করে না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে আওয়ামী লীগ ফের ৫ জানুয়ারির পথে যাবে না।

প্রশ্ন : ২০০৮ সালে নির্বাচনে বিএনপির বিপর্যয়ের জন্য অন্যতম কারণ হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট গঠনকে দায়ী করা হয়েছিল। এবার এ দলটি নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

খন্দকার মোশাররফ :জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। তারা আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি-না, এখনও পরিস্কার নয়। বিএনপি তাদের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনে যাবে কি-না, সে বিষয়টি অনিশ্চিত।

প্রশ্ন : আওয়ামী লীগ নিজেকে উন্নয়নের দল হিসেবে দাবি করে। বিএনপি বিষয়টিকে কীভাবে দেখছে?

খন্দকার মোশাররফ :আওয়ামী লীগ ২০১৪ সাল থেকে গায়ের জোরে ক্ষমতায় রয়েছে। আমাদের সরকারসহ বিভিন্ন সরকারের আমলেই জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বে রাখা সম্ভব হয়েছে। আমাদের আমলেই প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছিল। তাহলে আওয়ামী লীগ কীভাবে উন্নয়নের দল দাবি করে? বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় বাংলাদেশকে এমার্জিং টাইগার বলা হচ্ছিল। আওয়ামী লীগ উন্নয়নের দল হলে বিএনপি তো অধিকতর উন্নয়নের দল হিসেবে দাবি করতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কৌশল হলে দ্রব্যমূল্য এত বাড়ত না, ব্যবসা-বাণিজ্য এত খারাপ অবস্থায় যেত না। বিনিয়োগ হার, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেত। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ত। তারা বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছে। বিদেশি যেসব ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছে, তারা অর্থ দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে এ অর্থ সঞ্চালন হচ্ছে না। উন্নয়নের দাবি শুধু কাগজে-কলমে ও বক্তৃতায়।

প্রশ্ন : রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান কীভাবে হতে পারে?

খন্দকার মোশাররফ :কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে নাগরিকত্বের সম্মান দিয়ে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোই স্থায়ী সমাধান।

প্রশ্ন : ধর্মান্ধ চরমপন্থি শক্তির সঙ্গে বিএনপি আপস করে চলছে- এ অভিযোগ সম্পর্কে কী বলবেন?

খন্দকার মোশাররফ :২০০১ সাল থেকে বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। তখন জঙ্গিবাদ উত্থানের চেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হয়। বাংলাভাই, শায়খ আবদুর রহমানসহ অনেক চরমপন্থি নেতাকে গ্রেফতার ও বিচার করা হয়। বিএনপি একটি মধ্যমপন্থি গণতান্ত্রিক দল। ধর্মান্ধ বা অন্য কোনো চরমপন্থি দল বা গোষ্ঠীর সঙ্গে আপস আমরা করিনি, ভবিষ্যতেও করব না।

প্রশ্ন : বিএনপি ভারতের ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য সচেষ্ট রয়েছে ক্ষমতায় আসার জন্য- আপনার মন্তব্য জানতে চাই...

খন্দকার মোশাররফ : বিএনপি কখনোই ভারতবিরোধী দল ছিল না। ভারতের সঙ্গে আমাদের সীমান্ত বিস্তৃত। আমাদের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তারা বিরাট অবদান রেখেছে। এটি গণতান্ত্রিক দেশ। জনগণ গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বিএনপি মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল। এ দলের ভারতবিরোধী হওয়ার কারণ নেই। বিএনপি জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়। জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে উভয় দেশের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে পদক্ষেপ নিয়েছে। এ দলটি এ পর্যন্ত ৫ বার ক্ষমতায় ছিল। এ সময়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে ভাটা পড়েছে বলে মনে হয় না। অতএব বিএনপি ভারতবিরোধী, এ ধারণা ভুল। ভারতের সঙ্গে আমরা ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছি। এখনও ভালো সম্পর্ক রয়েছে।

প্রশ্ন : বিএনপি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় গণতান্ত্রিক রীতি অনুসরণ করে না- এ বিষয়ে মত জানতে চাই।

খন্দকার মোশাররফ :গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলটি পরিচালিত হয়। সময় সময় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন হয়েছে। বিএনপি একটি বড় দল। যদি গঠনতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত না হতো, তাহলে এত বছর জনপ্রিয় থাকতে পারত না।

প্রশ্ন : ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপির অনেক নেতা সম্পর্কে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। এ থেকে আপনারা কী শিক্ষা নিয়েছেন?

খন্দকার মোশাররফ :এমন অভিযোগ অস্বীকার করব না। তৃতীয় বিশ্বে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে থাকে। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঢালাওভাবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। সদ্য ক্ষমতাসীন হিসেবে বিএনপির বিরুদ্ধে বেশি অভিযোগ ওঠে। বিচার করা হয় সংসদ ভবনে স্থাপিত বিশেষ আদালতে। বেশিরভাগ অভিযোগ তারা প্রমাণ করতে পারেনি। যাদের দণ্ডাদেশ দিয়েছে, উচ্চ আদালতে তা টেকেনি। সে সময়ে দণ্ডপ্রাপ্ত অনেক আওয়ামী লীগ নেতা এখন মন্ত্রী। অতএব, ক্ষমতায় থাকাকালে দুর্নীতির ঢালাও অভিযোগ ঠিক নয়। তৃতীয় বিশ্বে দেশ পরিচালনায় ভুলত্রুটি থাকে। এসব নির্মূল না হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তো আরও বেশি শোনা যায়। কিছু ক্ষেত্রে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। বলা যায়, সব সরকারের সময় দুর্নীতির অভিযোগ ছিল, এখনও আছে। এ থেকে শিক্ষা হচ্ছে, এই ব্যাধি থেকে যথাসম্ভব মুক্ত থাকার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

প্রশ্ন : বিএনপির অনেক নেতার বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগে মামলা রয়েছে। অনেকে কারাগারে। এ বিষয়টি কীভাবে মোকাবেলা করছেন?

খন্দকার মোশাররফ : সহিংসতার জন্য নয়, প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনকালে যে সহিংসতা ঘটেছে তা বিএনপি ঘটায়নি। তারপরও সরকার মামলা দিয়েছে। সরকারের হাজার হাজার মামলায় লাখ লাখ কর্মী অভিযুক্ত। ২০১৫ সালের প্রথমদিকে তিন মাসের আন্দোলনে খালেদা জিয়া অফিসে অবরুদ্ধ ছিলেন। সে সময়ে চৌদ্দগ্রামে, ঢাকায় ও অন্যান্য স্থানে সহিংসতার মামলা হয়েছে তার নামে। আমার নামে, মহাসচিবের নামে বাস পোড়ানোর মামলা হয়েছে। আমরা এই বয়সে বাসে আগুন দিতে যাব? আওয়ামী লীগের সুস্থ চিন্তার অনেক মানুষ আছে। তারা কি এটা বিশ্বাস করেন? খালেদা জিয়া চিকিৎসা শেষে গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দেশে ফিরেছেন। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক মামলা জেনেও আইনগত মোকাবেলার পথে চলেছেন। সুষ্ঠু বিচার হলে সব মামলা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হবে।

প্রশ্ন : খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

খন্দকার মোশাররফ :কক্সবাজারে ছিল মানবিক সফর, রাজনৈতিক নয়। দীর্ঘ পথ তিনি মোটরগাড়িতে গিয়েছেন। কোনো তোরণ ছিল না। পথসভা ছিল না। কোনো মঞ্চ ছিল না। এটাকে রাজনৈতিক সুবিধার কর্মসূচি হিসেবে যারা প্রচার করেন, তারা প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপপ্রচার করেন। এ দীর্ঘ পথে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ নেত্রীকে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছে। মানুষের ঢল নেমেছে। এটা নেত্রীর প্রতি মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনের প্রতিফলন। তিনি দেশে ফেরার সময়েও স্বতঃস্ম্ফূর্ত জনস্রোত ছিল। কোনো বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। আর ১২ নভেম্বর সরকার নানা কৌশলে বিঘ্ন সৃষ্টি না করলে জনসমাগমে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হতো। বিএনপি এ ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চায়। আশা করি, সরকারের তরফে পূর্ণ সহযোগিতা মিলবে। সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়