শিরোনাম
◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৬:২৮ সকাল
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৬:২৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভুতুড়ে সার্ভিস চার্জে সুদহার লাগামহীন

রাহাত : দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি বেসরকারী ব্যাংক থেকে ২০০৮ সালে ৮ বছর মেয়াদী গৃহঋণ নিয়েছিলেন তিনি। ১৪ শতাংশ সুদ নির্ধারণ করে ওই ব্যাংক ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিপরীতে মাসিক কিস্তি ধার্য করে ১৬ হাজার ৫০৮ টাকা। ২০১৬ সালে কিস্তির মেয়াদ শেষ হলে ওই গ্রাহক জানতে পারেন তার অজান্তেই ১৪ শতাংশের পরিবর্তে সুদের হার ১৮ শতাংশ আরোপ করা হয়েছে। আর এই সুদের হার তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে ২০১০ সাল থেকে। ঋণের বিপরীতে ১৯ লাখ টাকার মতো পরিশোধ করলেও ব্যাংক ১৮ শতাংশ সুদ হিসাব করে আরও নিয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। ঋণ নিয়ে অতিরিক্ত সুদ গুনতে গুনতে দিশেহারা রহমান মোল্লার মতো দেশে এমন গ্রাহকের সংখ্যা অসংখ্য। তাদেরই একজন আসিফ শওকত। গত বছর একটি বেসরকারী ব্যাংক থেকে ২০ লাখ টাকা গাড়ি ঋণ নেন তিনি। শুধু প্রসেসিং ফি বাবদই ঋণের ১ শতাংশ কেটে রাখে ব্যাংকটি। এছাড়া লোনের আবেদন ফি, ডকুমেন্টেশন ফি, লিগ্যাল ফি, মর্টগেজ ফি, হিসাব পরিচালন ব্যয়সহ ১২-১৫ ধরনের চার্জ কেটে রেখে ব্যাংক ওই গ্রাহককে দিয়েছে নগদ ১৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বাকি ৬০ হাজার টাকা সার্ভিস চার্জের নামে কেটে রাখা হয়। তিন বছরের জন্য নেয়া ওই ঋণ গত মাসে ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন আসিফ। ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে মোট ঋণের ২ শতাংশ হারে আরও ৪০ হাজার টাকা নিষ্পত্তি ফি বাবদ দিতে হয়েছে তাকে। সে হিসাবে ১২ শতাংশ সুদে নেয়া গাড়ি ঋণে ২০ শতাংশের বেশি সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে এ গ্রাহককে।

এবার দেখা যাক, একজন গ্রাহক ১ কোটি টাকা ঋণ নিলে তাকে কত টাকা দিচ্ছে ব্যাংক। সব ধরনের সার্ভিস চার্জ ও ভ্যাট হিসাবে ২ লাখ টাকা বাদ দিয়ে ওই গ্রাহক পাবেন ৯৮ লাখ টাকা। কিন্তু সুদ গুনতে হবে ১ কোটি টাকার। কখনও কখনও এই সুদের হারও বেড়ে যায় গ্রাহকের অজান্তেই। উচ্চ স্তরের সুদ এবং সার্ভিস চার্জের কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এমন গ্রাহকের সংখ্যাও কম নয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়া এ ধরনের ছোট গ্রাহকদের ওপরই সার্ভিস চার্জের চাপ বেশি। বড় গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাংক থেকে বড় অংকের ঋণ নিতে তাদের সার্ভিস চার্জ খুব বেশি দিতে হয়নি। ব্যাংকের কর্মকর্তারাই নিজে থেকে সমঝোতা প্রস্তাব দিয়ে অনেক চার্জ কমিয়ে দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে একটি বেসরকারী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে সুদহার অনেক কম। বৈশ্বিক নিয়ম হচ্ছে সুদহার কমলে সার্ভিস চার্জ বাড়ে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংক পরিচালনায় নানা ধরনের খরচ রয়েছে। আইটি, অনলাইন, কমপ্লায়েন্স, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ, গ্রাহক সেবার মান বাড়ানো ইত্যাদিতে অনেক খরচ করতে হয়। এসব করতে হলে অবশ্যই চার্জ থাকতে হবে। মূল্যস্ফীতির সময়ে সবকিছুর মূল্যই বাড়ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, এমনিতেই আমাদের দেশে ব্যাংকঋণের সুদহার ব্যবসায়িক প্রতিযোগী অন্যান্য দেশের সুদহারের তুলনায় বেশি। এ অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস চার্জ যুক্ত হলে ব্যাংকঋণের সুদহার আরও বেড়ে যায়। সব শ্রেণীর গ্রাহকের জন্য ব্যাংকঋণের সুদহার ও সার্ভিস চার্জ সমান হওয়া দরকার। বড়, প্রভাবশালী কিংবা ব্যাংকের পরিচালনা-সংশ্লিষ্টদের জন্য বিশেষ সুবিধা গ্রহণযোগ্য নয়।

মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, কোন কোন সেবার ক্ষেত্রে ব্যাংক চার্জ নিতে পারবে, সেটি বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলারের মাধ্যমে নির্ধারণ করে দিয়েছে। চার্জ নেয়ার ক্ষেত্রে কোন ব্যাংক হয়তো কম নেয়, অন্য ব্যাংক বেশি নেয়। সব ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে একই ধরনের চার্জ থাকে না। অনুমোদিত চার্জের বাইরেও কোন ব্যাংক গ্রাহকদের কাছ থেকে অনৈতিক চার্জ আদায় করে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে কোন ঘটনা হয়ত বাংলাদেশ ব্যাংক ধরতে পারে, কোনটি ধরতে পারে না। তিনি বলেন, ব্যাংক সব প্রস্তাবের বিপরীতে ঋণ বিতরণ করতে পারে না। ঋণ বিতরণের জন্য একাধিকবার সরেজমিন পরিদর্শন করতে হয়। ১ কোটি টাকা ঋণের ক্ষেত্রে সব ধরনের চার্জ মিলিয়ে ১ লাখ টাকাও হতে পারে, আবার ৫ লাখ টাকাও হতে পারে।

বিভিন্ন ব্যাংকের অক্টোবর মাসে ঘোষিত সুদহারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ব্যাংকগুলো বড় ও মাঝারি শিল্প খাতের মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৬ থেকে সর্বোচ্চ ১৬.৫০ শতাংশ সুদ নিচ্ছে। ক্ষুদ্রশিল্পে সর্বনিম্ন ৮ থেকে সর্বোচ্চ ১৭ শতাংশ সুদ নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। ব্যবসা বা বাণিজ্যিক অর্থায়নে মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৯ থেকে সর্বোচ্চ ১৫.৭৫ শতাংশ, গৃহঋণ অর্থায়নে মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৮ থেকে সর্বোচ্চ ১৬.৫০ শতাংশ, মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৯ থেকে সর্বোচ্চ ১৫.৭৫ শতাংশ, ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৮.২৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৫.৭৫ শতাংশ, ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৯ থেকে সর্বোচ্চ ১৫.৭৫ শতাংশ সুদ নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এর বাইরে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে সুদ নেয়া হয় ক্রেডিট কার্ড বাবদ নেয়া ঋণের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১৪ থেকে সর্বোচ্চ ৩৬ শতাংশ সুদ নেয় ব্যাংকগুলো। এসব সুদহার আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফি ও চার্জ। ঋণ পেতে হলে ব্যাংক প্রসেসিং ফি দেয়া লাগে। ব্যাংকভেদে এই হার ১ থেকে ২ শতাংশ। ঋণ নিতে গেলে মর্টগেজ অবশ্যই জমা দিতে হয়। মর্টগেজ তৈরির ফি ২ শতাংশের কম নয়। ১ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত মর্টগেজ প্রস্তুত করতে ২ হাজার টাকা ফি লাগে। ২০ লাখ ১ টাকা থেকে ১ কোটি টাকার মর্টগেজ প্রস্তুতিতে ফি লাগে ৫ হাজার টাকা। এর চেয়ে বেশি অংকের মর্টগেজ করতে ৫ হাজার এবং প্রতি লাখে ২ শতাংশ হারে ফি দিতে হয়। এর বাইরে রয়েছে সরকারী বিভিন্ন স্ট্যাম্পের নির্ধারিত মূল্য। ঋণ নিতে হলে গ্রাহককে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সিআইবি ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়।

এজন্য নির্ধারিত ফি ২০০ টাকা। ঋণের জন্য ব্যাংকে সুনির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্র জমা রাখতে হয়। এজন্য ব্যাংকে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা ফি দেয়া লাগে। কোন কোন ব্যাংক এজেন্ট কমিশনও আদায় করে ২ থেকে ৩ শতাংশ। ব্যাংকের জামানতের নিরাপত্তার জন্য দিতে হয় ১ থেকে ২ শতাংশ কমিশন। ঋণের অংক যত বেশি হবে, কমিশনের অংকও তত বেশি। ধাপে ধাপে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে দিতে হয় কমিটমেন্ট ফি। অবশিষ্ট অংশের ওপর ২ শতাংশ হারে সুদ পরিশোধ করতে হয়। একজন গ্রাহককে যদি ৫০ কোটি টাকার ঋণ প্রদানের অনুমোদন করে ব্যাংক এবং ওই গ্রাহক ২০ কোটি টাকা নিয়ে বাকিটা পরবর্তী সময়ে নিতে চান তাহলে ওই ৩০ কোটি টাকার ওপর ১ থেকে ২ শতাংশ হারে সুদ আদায় করে ব্যাংক। কোন গ্রাহক যদি নির্দিষ্ট মেয়াদের আগেই তার ঋণ পরিশোধ করতে চান তাহলে তাকে বিতরণকৃত ঋণের ওপর ২ শতাংশ হারে সুদ পরিশোধ করতে হবে। এর বাইরে সিন্ডিকেশন ঋণ নিতে হলে গ্রাহককে চুক্তি অনুযায়ী কিছু চার্জ দিতে হয়। এছাড়া নন-ফান্ডেড ঋণের ক্ষেত্রে রয়েছে সুনির্দিষ্ট কিছু চার্জ। এর বাইরে ঋণ নিতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ব্যাংক হিসাব খুলতে হয়। ওই ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় চার্জসহ ঋণের সুদহার ২০ থেকে ২৫ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে।

ব্যাংকগুলো তাদের কোন সেবায় কত চার্জ নেবে, আর কোন সেবায় চার্জ আরোপ করতে পারবে না এ বিষয়ে সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২২ ডিসেম্বর একটি মাস্টার সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সার্কুলার অনুযায়ী চার্জ আরোপ করে আসছে ব্যাংকগুলো। তবে সার্কুলার জারির পর ব্যাংকের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে নতুন সেবা ও পণ্য। বর্তমানে অনেক সেবা রয়েছে, যেগুলোর চার্জ ওই সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়নি। জানা গেছে, সার্কুলার অনুয়ায়ী ব্যাংকের প্রদত্ত কোন সেবার বিপরীতে কত চার্জ কাটা হবে, তা ব্যাংকের ভেতরে উন্মুক্ত স্থানে রাখার বিধান রয়েছে। তবে তা বেশিরভাগ ব্যাংকেই প্রতিপালিত হচ্ছে না। কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেই দায় এড়াচ্ছে ব্যাংকগুলো। আবার নিয়মিতভাবে প্রতি ছয় মাস অন্তর তথা প্রতি বছরের জুন ও ডিসেম্বরে ব্যাংকের চার্জের তালিকা হালনাগাদ করে ওই বছরের ৩০ জুলাই ও পরবর্তী বছরের ৩০ জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানোর নিয়ম রয়েছে। এ নিয়মও মানা হয় না। যেমন রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের নিজস্ব ওয়েবসাইটে তাদের শিডিউল অব চার্জেস সর্বশেষ হালনাগাদ কোন তথ্যই নেই। আবার জনতা ব্যাংকের নিজস্ব ওয়েবসাইটে তাদের শিডিউল অব চার্জেস সর্বশেষ হালনাগাদ ২০১৩ সালে করা হয় বলে উল্লেখ আছে। এর অর্থ, ২০১৩ সালের তালিকা অনুযায়ীই চার্জ আরোপ করছে ব্যাংকটি।

ঋণের সুদ বাদ দিয়ে এবার সঞ্চয়ী হিসাবে কি পরিমাণ সার্ভিস চার্জ কেটে নেয়া হচ্ছে সেটা দেখা যাক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর একটি সঞ্চয়ী হিসাবের বিপরীতে একজন গ্রাহকের সার্ভিস চার্জ বাবদ ব্যয় হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। এর মধ্যে হিসাব পরিচালন ফি ৬০০ টাকা (প্রতি ষাণ¥াষিকে ৩০০) ও এটিএমের ডেবিট কার্ড ফি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। হিসাবের শুরুতে চেকবই নেয়ার জন্য দিতে হয় আলাদা চার্জ। কেউ যদি হিসাবের জমার পরিমাণ জানতে চান ও অথবা কোথাও ব্যাংক সংক্রান্ত কাগজ জমা দিতে হয় তাহলে স্টেটমেন্ট প্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা চার্জ দিতে হয়। তবে বছরে দুবার এই স্টেটমেন্ট ফ্রি দেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা দেয়া হয় না। এছাড়া ৩ মাস, ৬ মাস, ১ বছর, ২ বছর, ৫ বছর বা তার বেশি মেয়াদী আমানত রাখছেন গ্রাহক। এসব আমানতের বিপরীতে আগে ১২ থেকে ১৪ শতাংশ সুদ দেয়া হতো। বর্তমানে সুদ হার ২ থেকে ৬ শতাংশ। এসব হিসাবের বিপরীতে রয়েছে বিভিন্ন সেবার বিনিময়ে চার্জ। বর্তমানে সব ব্যাংকই অনলাইন ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে। এই সেবা না দিলেও চার্জ কেটে রাখে অনেক ব্যাংক। অনলাইন লেনদেন করলে ৫০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা, ডেবিট কার্ড চার্জ ৪৬০ টাকা এবং বার্ষিক চার্জ ৫০০ টাকা। ওই চার্জের বিপরীতে আরও ১৫ শতাংশ হারে সরকারকে ভ্যাট দিতে হয়। সব মিলিয়ে বছরে করসহ চার্জের খরচ দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ৩৫৭ টাকা। অর্থাৎ ক্ষুদ্র হিসাবে জমা যতই থাকুক না কেন এটি পরিচালনা করতে বছরে গুনতে হবে ওই টাকা। বিভিন্ন প্রয়োজনে সলভেন্সি সার্টিফিকেট নিতে হলে ব্যাংক আরও ৩০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত চার্জ কেটে রাখে। এসব চার্জের বিপরীতেও রয়েছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। এর বাইরে বিও হিসাব খুলতে বা আয়কর রিটার্ন জমা দিতে ব্যাংক থেকে সার্টিফিকেট নিতে হয়। এগুলোয় কমপক্ষে ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকা করে দিতে হয়। এসএমএস পাঠানো ও ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের জন্য বছরে আরও ৫০০ টাকার বেশি কাটা হচ্ছে। কোন গ্রাহক এসএমএস বা ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা না নিলেও গ্রাহকের কাছ থেকে ঠিকই এই ফি নেয়া হচ্ছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তফসিলি ব্যাংকের যেসব সেবার সর্বোচ্চ চার্জ আদায়ের সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে, সেই সর্বোচ্চ চার্জটিই আদায় করছে ব্যাংকগুলো। অনেক সময় এ সীমার বাইরে গিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত চার্জ কর্তন করা হচ্ছে।

এছাড়া বিও সনদ প্রদান ফি, সাইট এলসি কমিশন, রফতানি বিল নেগোসিয়েশন ও কালেকশন কমিশন, এলসি এ্যামেন্ডমেন্ট, কনফারমেশন ও ফরেন করেসপন্ডেন্ট চার্জের ক্ষেত্রে মেইলিং, কুরিয়ার, টেলেক্স, সুইফট সব ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত চার্জ আদায় করছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে বেসরকারী ও বিদেশী ব্যাংকগুলো। এদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তানসহ চীন, জাপান, আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন ব্যাংকের ওয়েবসাইট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওইসব দেশের ব্যাংকগুলোয় ঋণের প্রসেসিং ফি বাবদ দশমিক ১৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ পর্যন্ত কাটা হয়। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মতো এত বেশি সার্ভিস চার্জের খড়গ অন্য দেশের ব্যাংকগুলোয় নেই। ভোক্তা ঋণের মতো ছোট ছোট ঋণে হরেক রকমের সার্ভিস চার্জের অস্তিত্বও বিশ্বের কোন ব্যাংকে পাওয়া যায়নি। তবে বড় অংকের ঋণ নিয়েছেন এমন কয়েক ব্যবসায়ী জানান, ব্যাংক থেকে বড় অংকের ঋণ নিতে তাদের সার্ভিস চার্জ খুব বেশি দিতে হয়নি। ব্যাংকের কর্মকর্তারাই নিজে থেকে সমঝোতা প্রস্তাব দিয়ে অনেক চার্জ কমিয়ে দেন। ছোট ঋণ নিতে গেলেই গ্রাহককে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। জনকণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়