সান্দ্রা নন্দিনী : আফ্রিকার ভয়াবহতম যুদ্ধে সে হারিয়েছিল নিজের দেশ ও শৈশব। ‘দ্য ভয়েজ ব্রাজিল’ অনুষ্ঠানে গান গেয়ে কঙ্গোর সেই শরণার্থী ইসাবেল অ্যান্টনিও জয় করেছে লক্ষ লক্ষ ব্রাজিলীয় হৃদয়।
১৬ বছরের ইসাবেল ব্রাজিলের টেলিভিশন ট্যালেন্ট শো’তে মাইকেল জ্যাকসনের ‘হিল দ্য ওয়ার্ল্ড’ গানটি গেয়ে বর্ষসেরা তারকাদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। তবে গত মঙ্গলবার প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়ে গেলেও ইসাবেল দর্শকদের মনে গভীর দাগ কেটে যায়।
ইসাবেল বলেন, এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ আমার জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। এটি আমার মত অন্য শরণার্থী শিশুদেরকেও সাহস যোগাবে। আমি মনে করি যে, জীবনে প্রবল দুঃখ-দুর্দশার মধ্যেও যে কিছু আশা বেঁচে থাকে সে বিয়ষটি সবাইকে জানাতে পেরেছি।
দু’বছর আগে যুদ্ধের মধ্যে কঙ্গো থেকে পালিয়ে আসা ইসাবেলের জীবনে এখনও একেরপর এক নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে চলেছে।
ইসাবেল এখন সাও পাওলোতে বাস করলেও, টেলিভিশনে রিয়েলিটি শো’তে অংশ নেওয়ার পর সে জীবনে প্রথমবার মহাসাগর দেখেছে!
ইপানেমা সমুদ্রতটে যাওয়ার পর তাকে ঘিরে সাধারণ মানুষের উচ্ছাস তার মনকে আনন্দে ভরে দিয়েছে। সেখানে সবাই তারসাথে সেল্ফি তুলেছে এবং ‘তুমিই আসল তারকা’ বলে সম্বোধন করেছে।
২০১৫ সালে কঙ্গোর রাজধানী কিনশাসায় প্রবল সহিংসতা শুরু হলে ইসাবেলের পরিবার সেখান থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। তবে ছোটবোনসহ ইসাবেল পরিবারের বাকিদের থেকে আলাদা হয়ে যায়।
ইসাবেল বলে, ‘আমি আর আমার ছোটবোন ৩ দিন একটি ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে ছিলাম। পরে ব্রাজিলের মিশনারিরা আমাদের উদ্ধার করে অ্যাঙ্গোলায় নিয়ে আসে। আমি তাদের সাথে আসতে চাইনি কেননা মাকে খুঁজে বের করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওখানে থাকলে আমি হয়ত আজ আর বেঁচেই থাকতাম না।’ ‘তবে মজার ব্যাপার হল সাও পাওলোতে একটি ক্যাথলিক চ্যারিটি সংস্থায় আমাদের আনা হলে সেখানে আমার মা-সহ পরিবারে চার সদস্যের সাথে দেখা হয়ে যায়। তার কিছুদিন পর আমার বাবাকেও সেখানে নিয়ে আসা হয়!’
বর্তমান জীবন সম্পর্কে ইসাবেল বলেন, ‘আমি যখন গান গাই অন্য এক মানুষ হয়ে যাই। তখন আমি আর মৃত্যুভয়ে আতংকিত ছোট্ট ইসাবেল থাকি না।’ এএফপি
আপনার মতামত লিখুন :