শিরোনাম
◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল

প্রকাশিত : ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৫:৪৩ সকাল
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৫:৪৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাচ্চুর দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আসছে

ডেস্ক রিপোর্ট : বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তাভাবনা চলছে। বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় তদন্তের স্বার্থে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ৫৬ মামলায় দুদকের তদন্তের আওতায় রয়েছেন বাচ্চু। তার বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিমানবন্দরের বহির্গমনসহ (ইমিগ্রেশন) দেশের সব ক’টি স্থলবন্দরে দুদক আগামী সপ্তাহে চিঠি পাঠাতে পারে। দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, তদন্ত টিমের দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদে বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন আছে। কিন্তু তিনি দেশে না থাকলে মামলার তদন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, পর্ষদ সদস্য ও ব্যাংকের কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তাকে বাচ্চুর মুখোমুখী করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। যাদের সম্পর্কে তিনি এরই মধ্যে মুখ খুলেছেন। এজন্য তদন্ত চলাকালে তাকে দুদকের নজরদারির মধ্যে থাকতে হবে।

বাচ্চুর কাছে তদন্ত কর্মকর্তারা তার পাসপোর্ট চাইলে তিনি জানান, পরে তিনি তা দুদককে সরবরাহ করবেন। শুধু বাচ্চু নন, পর্ষদের ১০ সদস্যের পাসপোর্ট ও এনআইডি নম্বর চেয়েছে দুদক। এ ১০ জনকেও দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, বাচ্চু দুই দিনের জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য দিয়েছেন, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার দায় (অপরাধ) নিরূপণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম দফায় জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির জন্য ব্যাংকটির সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলাম, সাবেক ডিএমডি ফজলুস সোবহান, মোনায়েম খান ও গুলশান শাখার সাবেক ম্যানেজার শিপার আহমেদের নেতৃত্বে তিনটি সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন। বাচ্চু বলেন, তারাই অনিয়ম-দুর্নীতি করেছে। তাদের কারণে ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পর্ষদকে জড়িয়ে বক্তব্য দেন। বুধবার ঋণ অনিয়মের দায় স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি একা নই, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তেই ঋণ বিতরণ হয়েছে। পর্ষদ যেভাবে চেয়েছে, আমি সেভাবে কাজ করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এভাবে একবার এমডিসহ ব্যাংকের পদস্থ কর্মকর্তা ও আরেকবার পর্ষদকে জড়িয়ে বক্তব্য দেয়ায় দুদক কর্মকর্তারা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছেন, বাচ্চু নিজেকে আড়াল করতে চাইলেও ঋণ অনিয়মের দায় তার ওপরই বর্তায়। এক তদন্ত কর্মকর্তা জানান, বাচ্চু বলেছেন সব মামলার অভিযোগের ক্ষেত্রে তার বক্তব্য একই ধরনের। তাই তাকে যেন আর ডাকা না হয়। তার এ প্রস্তাবকে ‘মামাবাড়ির’ আবদার বলছেন কর্মকর্তারা। তারা বলেন, বাচ্চুকে ৫৬টি মামলায় ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এর জন্য যত সময় লাগুক না কেন, সেই সময় তদন্তের স্বার্থেই দিতে হবে।

আবদুল হাই বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়। কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করার পর চাপের মুখে থাকা বাচ্চু পদত্যাগ করেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির ঘটনায় ৫৬টি মামলা করে দুদক।

২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তে নামে দুদক। ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়াসহ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে।

এদিকে দুদকের তদন্ত তদারক কর্মকর্তার কাছে লিখিত জবানবন্দিতে গুলশান শাখার সাবেক ম্যানেজার শিপার আহমেদ বলেন, বাচ্চু ও সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলাম পরস্পর যোগসাজশ করে ঋণ অনিয়ম করেছেন। তারা গুলশান শাখার প্রভাবশালী গ্রাহকের সঙ্গে নিজেরাই সম্পর্ক স্থাপন করেন। এ কারণে ম্যানেজার হিসেবে তার কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। বাচ্চু ও এমডি যেভাবে ঋণ প্রস্তাব পাঠাতে বলতেন, সেভাবেই বাধ্য হয়ে ঋণ প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তাদের অনৈতিক চাপে বাধ্য হয়ে ত্রুটিপূর্ণ ঋণ প্রস্তাব পাঠাতে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মঞ্জুরিপত্র ইস্যুর সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত ডকুমেন্টেশন করতে হয়েছে।

বেসিক ব্যাংক মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার হয়ে জেলে আছেন শিপার আহমেদ। ২০১১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১২ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি বেসিক ব্যাংক গুলশান শাখার ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। গুলশান শাখার মাধ্যমে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের নামে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়া শান্তিনগর শাখায় ৩৮৭ কোটি, প্রধান শাখায় ২৪৮ কোটি ও দিলকুশা শাখায় ১৩০ কোটিসহ ২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ শনাক্ত হওয়ায় মামলা করে দুদক। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে বেসিক ব্যাংকের তিনটি শাখায় প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। শিপার আহমেদ বলেছেন, সে সময় পুরো ব্যাংকে আতঙ্ক ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। বেসিক ব্যাংক একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক হলেও তা পরিচালনায় তদানীন্ত চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর একচ্ছত্র দাপট ছিল। তার কারণেই ব্যাংকটি দুর্দশায় পড়ে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়