শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৮:৩২ সকাল
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৮:৩২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কর্মবীর আনিসুল হকের মৃত্যু নেপথ্যে কী ছিল?

সাইফুর রহমান সাগর : আনিসুল হকের মৃত্যু নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক গুঞ্জনের আবির্ভাব হয়েছে। তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলেছেন, রোগটির নাম সেরিব্রাল ভাসকুলাইটিসে (মস্তিষ্কের রক্তনালীর প্রদাহ)। মেডিকেলের ভাষাকে যদি কথিত বাংলায় ডাবিং করা হয়, তাহলে যা দাঁড়ায় তা নিতান্তই বেদনাদায়ক। সেরিব্রাল ভাসকুলাইটিস রোগটির আরেক নাম সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম ভাসকুলাইটিস। এটি খুবই জটিল এবং বিরল রোগ। মস্তিষ্কের রক্তনালীতে সাধারণত এ ধরনের সমস্যা দেখা যায় না। এতে মস্তিষ্কের রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রক্ত প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয়। মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণের মতো ভয়াবহ ঘটনাও ঘটতে পারে। অনেক সময়ই প্রাথমিকভাবে এ ভয়াবহ রোগটির তেমন কোনো উপসর্গ চোখে পড়ে না। আনিসুল হকের মস্তিষ্কের আঘাতজনিত কারণ যা উৎপত্তি হয় প্রচ- মানসিক চাপ থেকে। হাসপাতালে যাওয়ার ২ মাস পূর্ব থেকেই তিনি মানসিক চাপে ভুগছিলেন, ডাক্তারদের ভাষ্য মোতাবেক। কী সে চাপ, কীভাবে এলো সে চাপ? মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে আমি অনেক আগ্রহের সঙ্গে পড়াশোনা করেছি এবং এখনো করি।

আমরা আনিসুল হকের জীবনী এবং বর্তমান যদি দেখি, তাহলে তার জীবনে উন্নতির গল্পই বেশি দেখা যায়। খুব ব্যক্তিগত যতটুকু দুঃখ দেখতে পাই, তা প্রতিটি মানুষই উপভোগ করে বিলাসিতার সাথে। এছাড়া আনিসুল হকের ব্যক্তিগত জীবনের উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত তেমন কোনো সমস্যা আমরা দেখতে পাইনি। তার প্রতি ভালো লাগার অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম ছিল, সুদর্শন, সুবক্তা, স্বপ্নবাজ, সদা হাসি খুশি থাকা একজন মানুষ ছিলেন তিনি। যা তাকে রাজনীতির বাইরেও জনপ্রিয়তার শীর্ষে রেখেছিল। এই চরিত্রের মানুষকে মানসিক যন্ত্রণাদায়ক অসুখে মরতে হয়েছে! একদম অবিশ্বাস্য ও দুঃখজনক! তিনি জীবনের সফলতার সর্বশেষে ঢাকার মেয়র হয়েছিলেন, বিশাল একটি স্বপ্ন দায়িত্বে ছিলেন। অরাজনৈতিক লোক হয়েও হঠাৎ এসেই মেয়র হয়ে গেলেন, তাও ঢাকার মতো মেগা সিটির। নিজ দলের অনেকের মনে আঘাত আনার মতো কর্ম অনায়াসে সাধন করেছেন তিনি। প্রশ্ন জাগে, সেদিন সরকারের পক্ষ থেকে সবাই কি মন থেকে মেনে নিয়েছিলেন তাকে? তিনি মেয়র হওয়ার পর পুরো ঢাকাকে সঠিকভাবে পরিচালনার বিশেষ লক্ষ্য নিয়ে নিজেই রাস্তায় নেমেছিলেন আমরা দেখেছি। নিজ দল ও বড় বড় ব্যবসায়ী রাঘব বোয়ালদের ধরাশায়ী করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। তিনি সেই সব ব্যবসায়ীদের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনার একমাত্র বাঁধা হয়ে উঠেছিলেন। সরকারের বড় নেতাদের ছাড় দেননি অনেক উন্নয়নমূলক অভিযানে। অনেকটা একাই লড়েছেন এদের বিরুদ্ধে।

অনেকবার অনেক বাঁধার সম্মুখে তিনি পিছু হটেননি, একটা সুরাহা করেই তিনি ফিরে এসেছেন। তার ক্ষমতার এলাকাটি দেশের সবচেয়ে বিত্তবান ও ধনীদের এলাকা। যেখানে দেশের সব খারাপ মানুষ ও ভালো মানুষদের বসবাস। অরাজনৈতিক লোক হয়ে ওইসব বিত্তবানদের চলমান অসম ও অনৈতিক কর্মকা-কে বন্ধ করে একটি সুন্দর ঢাকা উপহার দেয়াটা নিঃসন্দেহে জলে বাস করে কুমিরের সাথে যুদ্ধ করে চলার মতো। আরও অনেক ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। তিনি মাঝে মাঝেই তার অসহায়ত্বের কথাও বলার চেষ্টা করেছেন।
বিমূর্ষ, অসহায়ের মতো মাথানিচু করে বলার চেষ্টা করেছিলেন অসহায়ত্বের কথা। কারণ নির্বাচনের আগে ওয়াদাবদ্ধ ছিলেন ঢাকাবাসীর কাছে, একটা সুন্দর আধুনিক ঢাকা উপহার দেওয়ার। কী ছিল সে সব অপারগতা, কী কারণে তিনি শেষ সময়ে নিজেকে মানসিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করতে হয়েছিল? তিনি মুখ খুলে না বললেও আমরা সাধারণ মানুষ অনেক কিছুই বুঝতে পারি। তিনি ছিলেন বীর, কোনো ক্ষমতার কাছেই মাথানত করেননি। নিজের কাছেই হেরে গিয়েছেন তবুও অন্য কারো কাছে হারেননি। মৃত্যুর কারণ খুঁজতে গেলে হয়তো ‘কেঁচো খুঁড়লে সাপ বের হবে’।

এমন তরতাজা শক্ত সার্থক লোকটি এত সহজেই জীবনযুদ্ধে হারতে পারেন না। গুলি করেও নিজ হাতে মারলে যেমন খুন করা করা বলে, একইভাবে কাউকে মানসিক চাপ প্রয়োগে মৃত্যুবরণে সাহায্য করাও সমান অপরাধ। মেয়রের মৃত্যুর কারণটি এবং কারণের পেছনের কারণটি গভীর পর্যবেক্ষণ করে তদন্তপূর্বক জাতির কাছে প্রকাশ করার আবেদন জানাচ্ছি। যদি প্রকৃত কারণ খোঁজে বের করে দোষীদের আইনের আওতায় না আনা হয়, তাহলে এই দেশে আর কোনো সাহসী মানুষ দেশ গড়ার প্রত্যেয়ে জীবনবাজি রাখার স্বপ্ন দেখবে না। সোনার বাংলা শুধু স্বপ্নেই রয়ে যাবে। সরকার তার অবস্থান ও স্পষ্টতা প্রমাণ করতে হলে অবশ্যই সঠিক তদন্তের মাধ্যমে শিগগিরই উন্মোচিত করবে আনিসুল হকের মৃত্যুর পেছনের আসল রহস্য।

লেখক : সাংবাদিক
সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসাইন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়