কেএম হোসাইন : ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে টানা সাতদিন যমদূতের সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন প্রতিভাবান চিকিৎসক ফরহাদ হোসেন (৪০)। টানা পার্টির (ছিনতাইকারী) কবলে পড়ে রিকশা থেকে পড়ে যাওয়ার পর মারাত্মক আহত হয়েছিলেন তিনি। ঘটনার পর থেকে চিকিৎসাধীন ছিলেন জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালালেও শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে পারেননি। তার মৃত্যুতে পরিবার পরিজন ও চিকিৎসকদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ডা. ফরহাদ আলম জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে কর্মরত ছিলেন।
দু’চোখ ভরা স্বপ্ন ছিল তার। মাত্র মাস খানেক আগেই জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি) পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। ভবিষ্যতে নিজেকে একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টায় ছিলেন; পদোন্নতি পাওয়ার মাধ্যমে যে যাত্রা মাত্র শুরু হয়েছিল।
গত ২৯ নভেম্বর কর্মস্থলে দায়িত্বপালন শেষে হাসপাতাল থেকে রিকশাযোগে মোহাম্মদপুর শাহজাহান রোডের বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় কাঁধে একটি ব্যাগ ঝোলানো ছিল। হাসপাতালে টানা আট ঘণ্টা ডিউটিতে ক্লান্ত দেহে রিকশায় গা এলিয়ে বাসায় ফিরছিলেন।
এ সময় টানা পার্টির সদস্যরা চলন্ত রিকশা থেকে ছোঁ মেরে ব্যাগটি ছিনিয়ে নিতে চাইলে গলায় পেঁচিয়ে রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে মারাত্মক আহত হন ডা. ফরহাদ। খবর পেয়ে ছুটে আসেন পরিবারের সদস্য ও সহকর্মী চিকিৎসকরা।
প্রথমে জাতীয় হৃদরোগ ও পরে জরুরি ভিত্তিতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ জেলার বাসিন্দা ডা. ফরহাদ হোসেন বরিশাল মেডিকেল কলেজের ২৭তম ব্যাচের ছাত্র। তিনি এমডি কার্ডিওলজিতে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। তার বাবাও পেশায় চিকিৎসক। তিনি সাত বছর বয়সী ছেলে ও এক বছর বয়সী মেয়েসহ দুই সন্তানের জনক।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে কর্মরত সহকর্মী চিকিৎসক ডা.নবীউল ইসলাম সোহেল বলেন, এ ধরনের মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না। দেশের অনেক বড় চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন ডা. ফরহাদ। অনেক আশা নিয়ে কষ্ট করে দিনরাত পড়াশোনা করেছেন। সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে নতুন স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন। কিন্তু শুরুতেই স্বপ্ন ভঙ্গ হলো।
তিনি জানান, মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় ছিনতাইকারী ও টানা পার্টির সদস্যদের উৎপাত অনেক বেশি। প্রায়ই মানুষকে সর্বস্ব হারাতে হয়।
ডা.ফরহাদের মৃত্যুতে অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা হয়েছে বলেও তিনি জানান।জাগোনিউজ।
আপনার মতামত লিখুন :