আরিফুর রহমান তুহিন: দেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনো রাজস্ব প্রদানের বাইরে। অথচ সরকারের প্রধান আয়ের উৎস কর। নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, ভ্যাট বাড়ালেই রাজস্ব বাড়বে। তবে এই নীতির বিপক্ষে অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, সরকার কর কমালে অধিক মানুষকে এর আওতায় আসবে। ফলে বাড়তে পারে রাজস্ব আয়। অন্যদিকে সম্পূরক কর নিয়ে ব্যবসায়ীরাও অসস্তিতে। তারাও কর কমানোর জন্য দাবি করে আসছে।
নাগরিকদের রাজস্ব প্রদানে উৎসাহিত করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্যাটের হার কমাচ্ছে। বর্তমান বিশ্বের ২য় অর্থনীতির দেশ চীন ২০ টি খাতের উপর থেকে সম্পূরক কর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া বার্ষিক আয়ের প্রদেয় রাজস্বও কমিয়েছে। রয়টার্স বলছে, চীন তার দেশে তথ্যপ্রযুক্তিখাতে সবাইকে সংযুক্ত ও প্রতিদন্ধিতার সুযোগ করে দেয়ার জন্য আইসিটি খাতের উপর থেকে সম্পূরক কর প্রত্যাহার করে নিতে যাচ্ছে। বর্তমানে এই খাতে করের হার ১৫ শতাংশ। এতে বিনিয়োগ ও রাজস্ব বাড়বে বলে মনে করেন দেশটির অর্থনীতিবিদরা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নাগরিকদের করের আওতায় আনার জন্য আগের কর নীতি থেকে সরে এসেছে। ব্যবসায়ীদের ৩৫ শতাংশ হারে কর্পোরেট করের পরিবর্তে এখন ২০ শতাংশ করা হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ ও বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতও কর্পোরেট কর ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করেছে। ২০২০ সাল নাগাদ এটা ২৫ শতাংশে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে দেশটি। এছাড়া ভারতের নাগরিকদের বার্ষিক আয়ের ট্যাক্স আগের থেকে কমিয়েছে। ফলে রাজস্ব আরো বেড়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের একজন ব্যবাসায়ীকে সর্বোচ্ছ ৪০ শতাংশ কর দিতে হয়। অতিরিক্ত করের হার, করের অর্থ যথাযথ কাজে ব্যায় না হওয়া, দূর্নীতি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত না হওয়ার কারণে অনেকেই কর ফাঁকি দিচ্ছেন। ফলে রাজস্ব কমছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ ইন্সস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)’র পরিচালক (প্রশিক্ষণ) আহসান হবিব বলেন, ভ্যাট নিয়ে একটা বৈশম্য রয়েছে। ট্যাক্সের হার বেশি হওয়ায় সল্প সংখ্যক মানুষ এর আওতাধীন। ফলে তারা রাজস্ব দেয়ার ব্যাপারে একটু অসস্তিতে ভোগে। রাজস্ব হরে কমিয়ে সকলকে এর আওতায় আনলে রাজস্ব বাড়ার পাশাপাশি ফাঁকি দেয়ার প্রবণতাও কমবে। একই সাথে এই অর্থ যথাযথ ব্যাবহারের বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদের মতে, অন্য দেশগুলো যখন রাজস্ব বাড়াতে কর কমাচ্ছে সেখানে আমাদের দেশ উল্টো পথে হাটছে। বাড়তি করের কারণে অনেক বড় কোম্পানী শেয়ার মার্কেটে ঢুকছে না। আবার করের ভয়ে অনেকেই তার সম্পদের সঠিক তথ্য প্রকাশ করছে না। এই টাকা তারা বিদেশ পাচার করছে বা অবৈধভাবে ব্যবহার করছে। এটা দেশের জন্য বড় ক্ষতি। সরকারকে এই অবস্থান থেকে সড়ে আসতে হবে। তাহলে অর্থপাচারও কমবে, রাজস্বও বাড়বে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের মতে, আমাদের সরকারের নিজস্ব কোনো আয় নেই। সরকারের যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে সেগুলো লোকশানে রয়েছে। লোকশানের অর্থও জনগণের করের টাকা থেকে শোধ করা হচ্ছে। সরারকে জনগণের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। তার প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভের আওতায় আনতে হবে। একই সাথে করের হার কমাতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :