স্পোর্টস রিপোর্ট : মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দেশের সেরা পাঁচ ক্রিকেটার। বিপিএলে সবসময় দারুণ আলোচনায় থাকেন তারা এবং তাদের দল। এবারো মাশরাফি বল-ব্যাট ও নেতৃত্ব দিয়ে তার দল রংপুর রাইডার্সকে পৌঁছে দিয়েছেন শেষ চারে। তামিম ইকবাল ইনজুরি নিয়ে প্রথম ক’টি ম্যাচে খেলতে না পারলেও ব্যাট হাতে ও নেতৃত্ব দিয়ে তার দল কুমিল্লা শেষ চারই নিশ্চিত করেনি, রয়েছে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেও। মাহমুদুল্লাহর ও নেতৃত্বে সবার আগে এ আসরে প্লে অফে খেলা নিশ্চিত করেছে তার দল খুলনা টাইটান্স। সাকিব ব্যাটে এখন পর্যন্ত ক্যারিশমা দেখাতে না পারলেও বল হাতে ঢাকা ডায়নামাইটসকে ঠিকই নিয়ে গেছেন আরো একবার চ্যাম্পিয়ানশিপের লড়াইয়ে।
শুধুমাত্র ব্যতিক্রম মুশফিক। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই তার দল রাজশাহী কিংস ছিটকে পড়েছে বিপিএলের পঞ্চম আসর থেকে। দলের নিয়মিত অধিনায়ক ক্যারিবিয়ান ড্যারেন স্যামি নিজ দেশে ফিরে যাওয়াতে শেষ দুই ম্যাচে নেতৃত্ব মুশফিকের হাতে। আজ চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে মাঠে নামবেন শুধু অনুষ্ঠানিকতা রক্ষায়।
গেল বারের রানার্সআপ দলটি এবার ব্যাটিং ব্যর্থতাতে ডুবেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দলের সেরা ব্যাটসম্যান হয়ে মুশফিকের অবদান ১১ ম্যাচে মাত্র ১৮.৮৮ গড়ে ১৭০ রান। হাঁকিয়েছেন মাত্র ১টি ফিফটি।
কেন তার এমন বাজে পারফরম্যান্স? দলের প্রধান কোচ সারওয়ার ইমরান বলেন, ‘আসলে ও যেখানে ব্যাট করতে চেয়েছে সেখানে সুযোগ হয়নি। চারে খেলতে না পারায় হয়তো মানসিকভাবে একটু পিছিয়ে ছিল। তার উপর আঙুলে চোট। সব মিলিয়ে বলবো ও এবার ছন্দেই ছিল না।’
মুশফিকুর রহীম বাংলাদেশ টেস্ট দলের বর্তমান অধিনায়ক। একটা সময় জাতীয় দলকে তিন ফরমেটেই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই ব্যাটিং ভরসা। শুধু ব্যাট হাতেই নয়, উইকেটের পেছনে ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছেন দলের আস্থার প্রতীক। ২০০৫ থেকে এ পর্যন্ত ১২ বছর ধরে দেশের জন্য দারুণ অবদান রেখেছেন তিনি। এমনকি টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটাও তার ব্যাট থেকে এসেছে। দেশের সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার কারণে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগেও (বিপিএল) দলগুলোর কাছে তার চাহিদা দারুণ। কিন্তু কতটা প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছেন তিনি! এ বিষয়ে সারওয়ার ইমরান বলেন, ‘আসলে প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারার অনেক কারণ থাকতে পারে। ওতো আমাদের সঙ্গে সেগুলো শেয়ার করেনি। যেমন আমাদের দলেও ওকে জায়গা মতো খেলানো সম্ভব হয়নি। সেরা একাদশ সাজাতেই আমাদের নানা সমস্যা হয়েছে। স্যামি ইনজুরিতে ছিল, মুশফিক নিজেও আঙুলের ইনজুরিতে পড়েছে। আরো বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারও ইনজুরিতে ছিল। টি-টোয়েন্টির সঙ্গে অন্য ফরমেটের অনেক পার্থক্য। ছন্দে না থাকলে টেকনিকেও ভুল হয়। সেটিও হয়েছে হয়তো ওর সঙ্গে। একেবারে খারাপ করেছে তা নয়। তবে পারফরম্যান্সটা তার যোগ্যতার মানে হয়নি এটি ঠিক।’
বিপিএলে এখন পর্যন্ত ৮ জন ক্রিকেটার হাজার রান সংগ্রহ করতে পেরেছেন। তাদের সকলেই বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান। ৬১ ম্যাচে ১৩৫৭ রান করে এখন শীর্ষে আছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তার পরেই আছেন ভায়রা মুশফিকুর রহীম। তার ব্যাট থেকে এসেছে এখন ৫৭ ম্যাচে ১৩৪২ রান। তবে ব্যাক্তিগত পরিসংখ্যান দেখে তাকে এগিয়ে রাখা গেলেও ক্রিকেট বোদ্ধাদের মতে মুশফিক বিপিএলে এখনো নিজের সেরাটা দিতে পারেন নি। শুধু এ আসরই নয় আগের চারটি আসরেও মুশফিকের কেটেছে আলো আঁধারিতে। পারফরম্যান্স ছাড়াও ব্যক্তিগত ভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে তার কেটেছে খারাপ সময়। মুশফিক বিপিএলের প্রথম আসরে খেলেন দূরন্ত রাজশাহী হয়ে। সেবার ১১ ম্যাচে করেছিলেন ১ ফিফটিতে ২৫৪ রান। ২০১২/২০১৩ মওসুমে তিনি খেলেন সিলেট রয়েলসের হয়ে । ১৩ ম্যাচে তিন ফিফটিতে ৪৪০ রান করে ছিলেন শীর্ষে। পরের আসরে সিলেট সুপার স্টার্সে থাকলেও ১০ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র ১ ফিফটিতে ১৫৭ রান। শেষ আসরে তিনি নেতৃত্ব দেন বরিশাল বুলসের। ২ ফিফটিতে ১২ ম্যাচে ৩২০ রান করেন। সবচেয়ে বড় কথা তার খেলা কোনো দলই এখন পর্যন্ত বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। প্রথম আসরে দূরন্ত রাজশাহী ও শেষ আসরে বরিশাল বুলস মালিক পক্ষের সঙ্গে তার সম্পর্কের টানপোড়েনও বেশ চোখে পড়ে।
সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে মুশফিক দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথরুসিংহের ও বিসিবির সঙ্গে। সেই কারণে মানসিকভাবে হয়তো মুশফিক আগের অবস্থাতে নেই। তারই প্রভাব পড়েছে বিপিএলে তার ব্যাটিংয়েও। এ বিষয়ে জাতীয় দলের সাবেক কোচ সারওয়ার ইমরান বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওর উপর যে প্রেসার ছিল, যেসব বিতর্ক হয়েছে তাতে ওর ব্যাটিংয়ে প্রভাব পড়তেই পারে। তবে এসবই সাময়িক। বিশেষ করে ও দারুণ ক্রিকেটার। আমি মনে করি পরিশ্রম দিয়ে ঠিকই ফিরে আসবো। খারাপ সময়টাতো ক্রিকেটেরই অংশ।’
এক নজরে বিপিএলে মুশফিকের পারফরম্যান্স
রান দল সর্বোচ্চ ম্যাচ গড় ৫০/১০০ মওসুম
২৩৪ দূরন্ত রাজশাহী ৫৮ ১২ ৩৯.০০ ১/০ ২০১১/১২
৪৪০ সিলেট রয়েলস ৮৬ ১৩ ৪০.০০ ৩/০ ২০১২/১৩
১৫৭ সিলেট সুপার স্টার্স ৫০* ১০ ২৬.১৬ ১/০ ২০১৫/১৬
৩৪১ বরিশাল বুলস ৮১* ১২ ৩৭.৮৮ ১/০ ২০১৬/১৭
১৭০ রাজশাহী কিংস ৫৫ ১১* ১৮.৮৮ ১/০ ২০১৭/১৮
বি:দ্র: ৫ম আসরে এখনো মুশফিকের এক ম্যাচ খেলা বাকি । মানবজমিন
আপনার মতামত লিখুন :