শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু, মানতে হবে কিছু নির্দেশনা ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা

প্রকাশিত : ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৬:৩৩ সকাল
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৬:৩৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রায়ের কপি না পাওয়া পর্যন্ত কথা বলবেন না শাজাহান খান

ডেস্ক রিপোর্ট ; সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী তিন মাসের মধ্যে বাসমালিক, চালক ও সংশ্লিষ্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে এই টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।আদালতের এমন রায়ের পর সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের নেতা এবং নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের কাছে এই রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া ও তা বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তাৎক্ষণিক মন্তব্য করতে রাজি হননি। তার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার মাধ্যমে জানিয়েছেন,আদালতের রায়ের কপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করবেন না।

সোমবার মন্ত্রণালয়ে নৌমন্ত্রীর দফতরে গিয়ে এ বিষয়ে তার মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় এই মূহুর্তে এ বিষয়ে কোনও কথা বলবেন না। রায়ের কপি হাতে পাবেন, পড়বেন, এবং তার পরে যদি কিছু বলার থাকে বলবেন। এর আগে তাকে এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস না করার জন্য অনুরোধ করেছেন।’

ক্ষতিপূরণের এই রায়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি কোন পক্ষ কত টাকা পরিশোধ করবে তাও ব্যাখ্যা করেছেন আদালত। এ টাকার মধ্যে বাসচালককে ৩০ লাখ টাকা, বাসমালিককে ৪ কোটি ৩০ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫২ টাকা এবং রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্সকে ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করার আদেশ দেন আদালত।

উল্লেখ্য, রবিবার (৩ ডিসেম্বর) বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এই রায় দেন।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)মিশুক মুনীরকে বহনকারী মাইক্রোবাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহন নামের একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ওই দুর্ঘটনায় তারেক-মিশুকসহ মাইক্রোবাসের পাঁচ আরোহী নিহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। এ ছাড়াও ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মানিকগঞ্জে মোটরযান অর্ডিন্যান্সের ১২৮ ধারায় বাসমালিক, চালক ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ড্রাইভার জমির হোসেন, বাসমালিক কাসেদ মিয়া, মুজিবুল হক, মো. তুহিন, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে বিবাদী করা হয়। তারা সবাই জামিনে রয়েছেন।

জানা গেছে, মামলায় তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ প্রথমে সাত কোটি ৭৬ লাখ ২৫ হাজার ৪৫২ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। পরে ক্ষতিপূরণের দাবি বাড়িয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা করা হয়। পরে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে মামলা দুটি জনস্বার্থে হাইকোর্টে বদলির নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেন বাদীরা। মামলায় ৫ জনকে বিবাদী করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদের আলোকে মামলাটি হাইকোর্টে বদলির জন্য বাদীদের আবেদন মঞ্জুর করা হয়। ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ হাইকোর্টে ক্যাথরিন মাসুদের দায়ের করা ক্ষতিপূরণ মামলার শুনানি শুরু হয়।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে গত ২৯ নভেম্বর রায়ের দিন নির্ধারণ করা হয়।পরে তা পরিবর্তন করে ৩ ডিসেম্বর রবিবার এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।
এর আগে এ ঘটনাসহ বিভিন্ন ঘটনায় চালক ও গাড়ির মালিকদের পক্ষ নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করেছেন। পরিবহন খাতে বিভিন্ন সময়ে অস্থিরতার নেপথ্যে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বিশেষ ভূমিকা নিয়েও অভিযোগ করেছেন অনেকে। সরকারের মন্ত্রী হওয়ার পরেও বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পরিবহন শ্রমিকদের পক্ষে তার অনেক দাবি থাকলেও মূলত যথাযথ পরীক্ষা ছাড়া চালকদের লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন, দুর্ঘটনা ঘটানো চালকদের রক্ষা, পরিবহন খাতের চাঁদা কত হবে তা নির্ধারণ এবং সরকারি সংস্থা বিআরটিসির সেবা সংকুচিত করা নিয়ে সরকারের ওপর বিভিন্ন সময় চাপ তৈরি করেছিলেন সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি হিসেবে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি এ সব বিষয় নিয়ে তিনি সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করেন।
অশিক্ষিতদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার দাবি জানিয়ে ২০১১ সালের ১৮ আগস্ট নৌ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের শাজাহান খান বলেছিলেন,দেশে চালকের সংকট থাকায় অশিক্ষিতদের চালকের লাইসেন্স দেওয়া দরকার। কারণ, তারা সিগন্যাল চেনে, গরু-ছাগল চেনে, মানুষ চেনে।জানা গেছে, তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে চালকের অবহেলায় প্রাণহানি হলে ‘নরহত্যার’ অভিযোগে মামলা করার দাবি ওঠে। ওই সময়ে সারা দেশে ছয়টি মামলাও হয় ফৌজদারি কার্যবিধির ৩০২ ধারায়। এরপরই শাজাহান খানের নেতৃত্বে শ্রমিক নেতারা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের কাছ থেকে ৩০২ ধারায় মামলা না নেয়ার আশ্বাস আদায় করেন। ৩০২ ধারা অজামিনযোগ্য এবং সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু শাজাহান খানসহ শ্রমিক ফেডারেশনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৩০৪(খ) ধারায় এসব মামলা হয়।

জানা গেছে, পরিবহন খাতে চাঁদার বৈধতা দেয়ারও দাবি তোলেন শাজাহান খান। এ জন্য প্রজ্ঞাপন জারিরও প্রস্তাব দেন তিনি। এতে ঢাকায় মালিক-শ্রমিকের জন্য ৭০ টাকা এবং শুধু ঢাকার বাইরে শ্রমিকদের জন্য ২০ টাকা চাঁদা আদায়ের বৈধতা পেতে বিভিন্ন বৈঠকে দফায় দফায় চাপ প্রয়োগ করেন। অবশেষে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। ওই চিঠি নাকচ হলে এবং এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রচারিত হলে বিষয়টি আর এগোয়নি। কিন্তু এখনও চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১০ টাকা নেওয়া হয় শাজাহান খানের নেতৃত্বাধীন শ্রমিক ফেডারেশনের নামে। বাংলাট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়