রাশিদ রিয়াজ : ভারত-চীন সীমান্তে ভারতীয় সেনাদের চীনা হ্যাকারদের হাত থেকে রক্ষা পেতে স্মার্ট ফোন ব্যবহার নিষেধ করা হয়েছে। এসব স্মার্ট ফোন থেকে গোপনীয় তথ্যাদি হ্যাক হয়ে যাবার ভয়ে এ ধরনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সন্দেহজনক স্মার্ট ফোন অ্যাপ্লিকেশনগুলোর তালিকা থেকে কোনো কিছু ইনস্টল করার ব্যাপারেও সাবধান করা হয়েছে। ভারতীয় সেনাদের মোবাইল ফোনে এধরনের সন্দেহজনক কোনো অ্যাপ্লিকেশন থেকে থাকলে তা মুছে ফেলতেও বলা হয়েছে। স্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল
বিশেষ করে ডোকলাম সীমান্তে ভারত ও চীনের পক্ষ থেকে ব্যাপক অবকাঠামো ও সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। এসব গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা ও কৌশলগত অবস্থানগুলোতে যেসব নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তার কর্মকর্তাদেরও স্মার্ট ফোন ব্যবহারে একই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। সেনা কর্মকর্তাদেরকেও স্মার্ট ফোন ব্যবহার এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে। কৌশলগত যে কোনো ধরনের তথ্য যাতে পাচার হয়ে না যায় এজন্যে এ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। বিএসএফ’এর সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক পি কে মিশ্র স্পুটনিককে বলেছেন, সরকার ও সেনা অবস্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিরাপদ নেটওয়ার্ক কেবলমাত্র সেগুলোই ব্যবহারের নিশ্চিত করা হচ্ছে।
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সন্দেহজনক অন্তত ৪২টি চীনা অ্যাপ্লিকেশনের তালিকা দিয়ে বলেছে এগুলো এড়িয়ে যেতে। এর মধ্যে রয়েছে ট্রুকলার, উইচ্যাট, ওয়েইবো, শেয়ারইট, ইউসি ব্রাউজার, প্যারালাল স্পেস ইত্যাদি। এসব অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে দিয়ে চীনা হ্যাকাররা গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত তথ্য হ্যাক করে নিতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি চীনা ব্রান্ডের মোবাইল ফোন যেগুলো ভারতে বেশ জনপ্রিয় সেগুলোর বেশ কয়েকটি ব্যবহার নিষেধ করা হয়েছে যেমন, ঝিয়াওমি, অপ্পো এবং ওয়ান প্লাস।
নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর তৈরি বেশ কয়েকটি উন্নত অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে চীনের লিংক থাকার কারণে এর মাধ্যমে গুপ্তচরবৃত্তি করা খুবই সহজ। ফলে এসব অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যে ক্ষতিকারক হতে পারে। কেউ যদি এসব অ্যাপ্লিকেশন ইতিমধ্যে ব্যবহার করে থাকেন তাহলে শীঘ্রই তা তাদের মোবাইল ফোন থেকে মুছে ফেলতে জরুরি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে কোন ধরনের চীনা অ্যাপ্লিকেশনগুলো এধরনের গুপ্তচরবৃত্তি করে থাকতে পারে সে সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দেওয়া হয়নি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাইবার নিরাপত্তায় ভারত বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নিয়েছে এবং কৌশলগত অবস্থানগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৫ সালের এপ্রিলে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক একটি সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান দাবি করে যে ভারতের সেনাবাহিনী, মহাকাশ ও নৌখাতে চীনের একটি সাইবার নেটওয়ার্ক গুপ্তচরবৃত্তি করছে এবং বাগ এপিটি৩০ এর সাহায্যে তা করা হচ্ছে। একই বছর নতুন দিল্লিতে ভারতের আমলাদের ইন্টারনেট, ওয়াইফাই ও ব্লুটুথ ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা হয়। গত আগস্ট মাসে ভারত সরকার চীনের অধিকাংশ কোম্পানিকে দেশটির তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার তথ্য অনুসরণ করে এব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয় যাতে তা ভারতে এসব কোম্পানির ফোন বা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারকারীদের তথ্য ফাঁস থেকে নিরাপত্তা দিতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :