ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ: বেহেশতের একটুখানি জায়গাও মূল্যবান: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জান্নাতে একটা ছড়ি রাখবার মত জায়গাও সমগ্র পৃথিবী ও পৃথিবীর যাবতীয় সহায় সম্পদের চেয়ে উত্তম। [বোখারী, মুসলিম]
ছড়ি রাখার মত জায়গা দ্বারা সেই অতিক্ষুদ্র জায়গা বুঝানো হয়েছে, যেখানে মানুষ কোন রকমে নিজের বিছানা বিছয়ে পড়ে থাকে। অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীন অনুসারে চলতে গিয়ে কারো দুনিয়া যদি নষ্ট হয়ে যায়। সমস্ত সহায় সম্পদ খোয়া যায় এবং তার পরিবর্তে জান্নাতের অতি সামান্য একটু জায়গাও পেয়ে যায়। তবে তাও তার জন্য একটা বিরাট প্রাপ্তি। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার জিনিস কুরবানী দেয়ার প্রতিদান স্বরূপ আল্লাহ তাকে এমন জিনিস দিলেন, যা চিরস্থায়ী অক্ষয়।
দুনিয়া ও আখিরাতের সুখ দুখের তুলনা: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী এমন এক ব্যক্তিকে ডাকা হবে, যার দোযখে যাওয়া অবধারিত হয়ে গেছে। তাকে দোযখে ফেলে দেয়া হবে। যখন আগুন তার সমস্ত শরীরকে দগ্ধ করবে, তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কি কখনো সচ্ছলতা ও প্রাচুর্য দেখেছ? তুমি কি সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ও আরাম আয়েশ উপভোগ করেছ? সে বলবে, হে আমার প্রভু, তোমার কসম, কখনো নয়। এরপর এমন একজনকে ডাকা হবে যে, জান্নাতের অধিবাসী হবে। কিন্তু পৃথিবীতে সে ছিল চরম অসচ্ছলতা ও শোচনীয়তম অভাব অনটনের শিকার। সে যখন জান্নাতের সুখ ও আরাম আয়েশে বিভোর হবে, তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কি কখনো দারিদ্র ও অভাব অনটন দেখেছ? তোমার ওপর কি কখনো দুঃখ কষ্টের দিন অতিবাহিত হয়েছে? সে বলবে না, হে আমার প্রতিপালক, আমি কখনো অভাব অনটনের মুখ দেখিনি। কখনো পরমুখাপেক্ষী হইনি এবং আমি কষ্টের কোন যুগ কখনো দেখিনি। [মুসলিম]
জান্নাত ও জাহান্নামের আসল পার্থক্য: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন প্রবৃত্তির লালসা জাহান্নামকে এবং অনাকাংখিত দুঃখ কষ্ট জান্নাতকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে। [বোখারী ও মুসলিম]
অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তির পূজা করবে এবং দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী সুখ ও আনন্দ লাভের চেষ্টায় মত্ত হবে, তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর যে ব্যক্তি জান্নাতের অভিলাষী হবে, সে দ্বীনের খাতিরে কাঁটা ছাড়ানো পথ অবলম্বন করতেও দ্বিধা করবে না এবং আল্লাহর জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে পরাজিত করে তাকে যে কোন কঠিন পরিশ্রম ও অবাঞ্ছিত কষ্টকর পন্থা অবলম্বনে বাধ্য করবে। এই কষ্টকর ঘাটি অতিক্রম না করে চির সুখের আবাস জান্নাতে পৌছার কোনই সুযোগ নেই।
জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে সচেতনতা: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি জাহান্নামের মত এমন ভয়ংকর আর কোন জিনিস দেখিনি, যা থেকে অব্যাহতি লাভের জন্য পলায়নপর মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। আর জান্নাতের মত এত ভালো জিনিস আর দেখিনি। যার অভিলাষ পোষণকারী ঘুমিয়ে থাকে। [তিরমিযি]
এর তাৎপর্য এই যে, কোন ভয়ংকর জিনিস দেখার পর মানুষের চোখে ঘুম থাকে না। সে ঐ জিনিসের কাছ থেকে দূরে পালায়। যতক্ষণ তা থেকে রক্ষা পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত না হয় ততক্ষণ সে ঘুমায়না।
অনুরুপ কেউ যদি কোন ভালো জিনিসের অভিলাষী হয়, তবে তা অর্জন না করা পর্যন্ত সে ঘুমায়ওনা, বিশ্রামও নেয়না। দুনিয়ার একটা সাধারণ ভালো ও মন্দ জিনিসের ব্যাপারে যখন মানুষের অবস্থা এরূপ, তখন সবচেয়ে উৎকৃষ্ট জিনিস জান্নাতের অভিলাষী কিভাবে ঘুমায়? আর সবচেয়ে খারাপ জিনিস জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষার চিন্তা করে না কেন? যে ব্যক্তি কোন জিনিসের আশংকা করে, সে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে না। আর কোন ভালো জিনিস অর্জনের তীব্র আকাংখা যার থাকে, সে তা অর্জন না করে বিশ্রাম নিতে পারে না।
আপনার মতামত লিখুন :