শিরোনাম
◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের 

প্রকাশিত : ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ০৬:৪৩ সকাল
আপডেট : ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ০৬:৪৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আন্দোলনের ভয়ে পরিবহন আইনে পরিবর্তন

ডেস্ক রিপোর্ট : সড়ক দুর্ঘটনা রোধসহ পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে সড়ক পরিবহন আইন যুগোপযোগী করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে খসড়া সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৭ গত ২৮ মার্চ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। কিন্তু এ আইন নিয়ে বিশেষজ্ঞসহ সবার পক্ষ থেকে সাধুবাদ পেলেও বিরোধিতা করছেন পরিবহন নেতারা। দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচিও পালন করে তারা খসড়া অনুমোদনের প্রতিবাদে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর ভেটিংয়ে পাঠানো হয়। একই সময়ে পছন্দের বিধান তৈরিতে চাপ অব্যাহত রাখার হয়। এর পর ‘পরিবহন শ্রমিকদের অন্তোষ’ সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে পাঠানো হয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে। এ বাস্তবতায় আইনের বিভিন্ন ধারা শিথিলে পর্যালোচনা চলছে। সেখানে প্রাধান্য পাচ্ছে চালকদের লেখাপড়ার শর্তসহ বিভিন্ন ধারায় জরিমানা ও শাস্তি কমানোর বিষয়।

আজ মঙ্গলবার সকালে এ নিয়ে বৈঠক বসছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বৈঠকের এজেন্ডায় সড়ক আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহন শ্রমিকদের অসন্তোষ এবং পর্যালোচনার কথা বলা আছে। দায়িত্বশীল সূত্র তথ্যটি নিশ্চিত করে।

সড়ক দুর্ঘটনায় যুগোপযোগী আইনের অভাব অথবা বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়াসহ নানা কারণকে দায়ী করা হয়। ২০১১ সাল থেকে আইন সংশোধনের কাজ চলছিল। কিন্তু পরিবহন নেতাদের চাপে তা পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। অবশেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশকে আইনে রূপ দেওয়া হয়েছে। এর বিপক্ষে বড় ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। সংগঠনটির কার্যকর সভাপতি নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান আর সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী।

ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী গতকাল বলেন, মন্ত্রিসভা যে আইনের অনুমোদন দিয়েছে আমরা এর বিপক্ষে। এটি অবাস্তব একটি আইন। আইনে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তা হলে এখন যারা চালক আছে তাদের কি নতুন করে স্কুলে ভর্তি হতে হবে? আর পড়াশোনা জানা লোক গাড়ি চালাতে যাবে?

পরিবহন নেতা ওসমান আরও বলেন, আমার মতে চোখ পরীক্ষা করেই ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া উচিত, যাতে তারা ঠিকমতো দেখতে পারে। শাস্তির বিপক্ষে নই আমরা। কিন্তু দুর্ঘটনায় যাবজ্জীবন বা অন্য বড় শাস্তির বিপক্ষে বলে আসছি। কারণ কোনো চালক ইচ্ছা করে দুর্ঘটনা ঘটান না। রাস্তার ত্রুটিসহ নানা কারণ রয়েছে। আসলে আমলারা আইনটি করেছে না বুঝে; তাই এটি সংশোধন করতে হবে। যতদূর জানি এ জন্য কাজও চলছে। নইলে চালকরা গাড়ি চালাবে না।

তবে এ নিয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, আমার জানামতে আইন শিথিল করার কোনো চিন্তা নেই। কারো কাছে জিম্মি নয় সরকার। মন্ত্রিসভা থেকে অনুমোদনের পর নিয়মানুযায়ী ভেটিংয়ে পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে কিছু কোয়ারিজ ছিল, এর জবাবও পাঠানো হয়েছে। এসব নিয়েই পর্যালোচনা চলছে। এটি রুটিন ওয়ার্ক।

একই বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন গতরাতে বলেন, চালকের শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ বিভিন্ন ধারায় শাস্তি শিথিলের জন্য রিভিউ হতে পারে না। তা হলে দুর্ঘটনা ঝুঁকি আরও বাড়বে। তা ছাড়া অনুমোদিত আইনে আমাদের অনেক সুপারিশ বাদ পড়েছে। তবু আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে কোথাও পরিবর্তন করতে হলে স্টেকহোল্ডারদের নিয়েই করা উচিত।

জানা গেছে, গত ১২ অক্টোবর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ার অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহন শ্রমিকদের অসন্তোষ সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিবেদন ‘পরীক্ষান্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে’ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৩৫ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে বলা হয় আইনের কয়েকটি ধারায় গুরুতর আপত্তি পরিবহন নেতাদের।

আপত্তির জায়গাগুলো হচ্ছে খসড়া আইনে বলা আছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ৮ম শ্রেণি পাস হতে হবে। সাধারণ চালকের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ১৮ বছর এবং পেশাদার চালকের বয়স হবে ন্যূনতম ২১ বছর। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ৬ মাসের কারাদ- অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা।

এ ছাড়া হেলপার বা শ্রমিক গাড়ি চালাতে পারবেন না। প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালালে এবং সে ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা না হলেও চালকের ২ বছরের জেল বা ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দ- হতে পারে। তা ছাড়া গতিসীমা লঙ্ঘন করলেও একই শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ও নিহতদের ঘটনা ঘটলে দ-বিধির আওতায় বিচারের কথা বলা হয়েছে। দ-বিধিতে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- ও যাবজ্জীবন কারাদ-। হেলপারের লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে নতুন আইনে। চালকের সহকারীর লাইসেন্স না থাকলে এক মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা। নেশাজাতীয় দ্রব্য বা মদ পান করে কেউ গাড়ি চালালে ৩ মাসের কারাদ- এবং ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন বা এরূপ কোনো ডিভাইস ব্যবহার করলে ১ মাসের জেল বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন চালক। এ ছাড়া ৬ মাসের কারাদ- বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে এমন অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় চালকদের গ্রেপ্তার করতে পারবে। তা ছাড়া লাইসেন্সে ১২ পয়েন্ট থাকবে; বিভিন্ন অপরাধের জন্য চালকের পয়েন্ট কাটা যাবে, পয়েন্ট শূন্য হয়ে গেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিলের বিধান রয়েছে নতুন আইনে।

এ আইন বাতিলের দাবিতে শ্রমিক ফেডারেশনের কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের সব জেলায় বাস, মিনিবাস, ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচি প্রসঙ্গে গোপনীয় প্রতিবেদনের একাংশে বলা হয়েছে শ্রমিক ফেডারেশন সংগঠনটি বেশ শক্তিশালী। পরিবহন সেক্টরে ওই সংগঠনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তাদের মতামত সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে নতুন আইন পাস করলে পরিবহন সেক্টরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তাই শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার যৌক্তিকতা নিরূপণপূর্বক এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে সুপারিশ আকারে প্রথমেই বলা হয়েছে, দেশের পরিবহন সেক্টরে স্থায়ী শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার বৃহত্তর স্বার্থে পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে জড়িত বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল/সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি/মহলকে ফেডারেশনের আন্দোলন কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত না হতে কিংবা কোনোরকম সমর্থন ইন্ধন না জোগাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিবহন নেতাদের ইশারায় চলছে গণপরিবহন। ফলে কথায় কথায় ধর্মঘট-কর্মবিরতি যা-ই ডাকা হোক না কেন প্রতিকার নেই। আর এ কারণেই গণপরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোও এ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে উপেক্ষিত হচ্ছে জনস্বার্থ। আর দুর্ঘটনায় মারা গেলেও শাস্তিতে আপত্তি পরিবহন নেতাদের। যেমন দুই চালকের সাজার রায়ের প্রতিবাদে সারা দেশে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট শুরু হলে টানা দুদিন ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। এর পর চলতি বছরের ১ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে নৌমন্ত্রী শাজাহান বলেন, দুর্ঘটনায় মৃত্যুর দুটি পৃথক মামলায় একজন চালকের যাবজ্জীবন কারদ- এবং অপরজনের ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর পরিবহন শ্রমিকরা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন এবং এ কারণে কর্মবিরতিতে যান। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে ফাঁসি বা যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার আশঙ্কায় পরিবহন শ্রমিকরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। তবে তিনি আশা করছেন তার আহ্বানে পরিবহন শ্রমিকরা তাদের কর্মবিরতির অবসান ঘটিয়ে যান চলাচল শুরু করবেন। অবশ্য মন্ত্রীর ঘোষণার পর পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং যান চলাচল শুরু করে পরিবহন শ্রমিকরা।

সূত্র : আমাদের সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়