শিরোনাম
◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ০৬:২৭ সকাল
আপডেট : ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ০৬:২৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘পিইসি-জেএসসি পরীক্ষা বাতিলের কোনো বিকল্প নেই’

মাইকেল : পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী (পিইসি) এবং অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা বাতিল ছাড়া কোনো বিকল্প দেখছেন না শিক্ষাবিদরা। তারা বলছেন, এর মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক প্রজন্ম গড়ে তোলার বদলে পরীক্ষা নির্ভর একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে শিক্ষাব্যবস্থাকে ধংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

এই পরীক্ষার নেয়া সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত এবং অদূরদর্শী উল্লেখ করে এসব শিক্ষাবিদ বলছেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে পরীক্ষাভীতি ছড়িয়ে দেওয়া অপ্রয়োজনীয় এ পরীক্ষা পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকেই ঠেলে দিচ্ছে অন্ধকারের দিকে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এবং নাগরিক সমাজেরও অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে এই দুই পরীক্ষা কোন কাজে না এসে উল্টো ধংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিলে বিভিন্ন মহলের দাবির মুখে চলতি বছরও অনুষ্ঠিত হচ্ছে তা।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার জানিয়ে দিয়েছেন, সরকার সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা চলতে থাকবে।

এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার যতোদিন চাইবে ততোদিন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা হবে। পুরোটাই নির্ভর করছে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে একটি চক্র সবসময়ই কাজ করে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

যদিও ২০১৬ সালের ২১ জুন গণশিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক শিক্ষার স্তর অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ায় ওই বছর থেকে আর পঞ্চমের সমাপনী পরীক্ষা নেবে না সরকার।

এই পরীক্ষা দুটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহী করে পরীক্ষা-নির্ভর করে গড়ে তুলছে মন্তব্য করে শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন: এই পরীক্ষা দুটি শিক্ষার্থীদের জন্য আদৌ কোন কাজে আসছে না। উল্টো কোচিং এবং গাইড নির্ভর করে গড়ে তুলে তাদের মেধার স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরীক্ষাভীতি ছড়াচ্ছে; যা পুরো শিক্ষাব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতি করছে।

‘‘আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি যে এমন ধ্বংসাত্মক পরীক্ষা বাতিল করা হোক। কারণ আমরা চাই জ্ঞানভিত্তিক সমাজ; যেখানে শিশুরা আপন মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে। কিন্তু তা না করে তাদেরকে পরীক্ষা নির্ভর একটি ব্যবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে এ দুটি অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা। তাই এ পরীক্ষা বাতিলের বিকল্প নেই।’ বলেন প্রখ্যাত এ শিক্ষাবিদ।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কাগজে দেখলাম প্রথম দিনেই প্রাথমিক সমাপনীতে প্রায় দেড়লাখ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত। এতেই বোঝা যায় এমন পরীক্ষা ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কতটা ভীতির সঞ্চার করেছে।

পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্তকে অপরিকল্পিত ও অদূরদর্শী হিসেবে আখ্যায়িত করে অবিলম্বে তা বাতিলের দাবি জানান অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

শো-কেসে সাজিয়ে রাখার জন্য একটি সার্টিফিকেট ছাড়া এ পরীক্ষা দুটি শিশুদের আর কিছু দিতে পারছে না মন্তব্য করে বেসরকারি সংস্থার মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন: ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মনে ভয় সৃষ্টি এবং অভিভাবকদের মধ্যে অকারণ উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করা ছাড়া এ পরীক্ষা কোন কাজেই আসছে না।

‘প্রায় ৩১ লাখ পরীক্ষার্থী সমাপণীতে অংশ নিচ্ছে। তাদের পরিবারে যদি তিন জন করেও সদস্যও থাকে, তবে সংখ্যা দাঁড়ায় এক কোটি। তাছাড়া শিক্ষক এবং শুভাকাঙ্ক্ষীসহ অনেকেই রয়েছে। অপ্রয়োজনীয় একটি পরীক্ষা অযথাই এই এক কোটির বেশি মানুষকে উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। যার কোন প্রয়োজনই ছিল না।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আমরা গবেষণা করে দেখিয়েছি যে এই পরীক্ষাকে (পিইসি) কেন্দ্র করে চতুর্থ শ্রেণির পর থেকেই একটি অসাধু প্রাইভেট-কোচিং চক্র ঢুকে পড়ে। এই পরীক্ষাকে ‍পুঁজি করে তারা শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের এক ধরনের জিম্মি করে ফেলে।

 

২০১৫ সালে গণসাক্ষরতা অভিযানের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সমাপনী পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য দেশের ৮৬ দশমিক ৩ শতাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে হয়েছে। আর ৭৮ শতাংশ সরকারি বিদ্যালয়ে কোচিং ছিল বাধ্যতামূলক। পাসের হার বাড়াতে খাতায় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অনিয়ম হচ্ছে।

পরীক্ষার হলে দেখাদেখি করে লেখা এবং উত্তরপত্র মেলানোর জন্য শেষের ৪০ থেকে ৬০ মিনিট অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই পরীক্ষার জন্য প্রাইভেট পড়ার নির্ভরশীলতা বাড়ছে, পাঠ্যবইকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে গাইডবই। শিশুরা শেখার আনন্দ পেতে এবং সৃজনশীল হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

রাশেদা কে চৌধুরী আরও বলেন, যে করেই হোক পরীক্ষায় ভালো ফল করার অসুস্থ মানসে ঘটছে প্রশ্ন ফাঁসের মত অনৈতিক এবং মেধা ধ্বংসকারী ঘটনা। যা আমাদের শিশুদের নৈতিক অবক্ষয় সৃষ্টির পাশাপাশি পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকেই ব্যধিগ্রস্ত করে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

তাছাড়া সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নেও এ পরীক্ষা দুটিকে বড় বাধা হিসেবে আখ্যায়িত করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের এ নির্বাহী পরিচালক।

পুরো মাধ্যমিক পর্যায়ে এসএসসি ছাড়া অন্য কোন পাবলিক পরীক্ষা থাকা উচিৎ নয় বলে মত দেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং রাশেদা কে চৌধুরী উভয়ই।

পরীক্ষা পদ্ধতির বিপক্ষে নয় জানিয়ে তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য অবশ্যই পরীক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন আছে। তবে সেটা হতে হবে শ্রেণিভিত্তিক মূল্যায়ন। এজন্য আলাদা করে ‍পাবলিক পরীক্ষার আয়োজন অপ্রয়োজনীয়।

শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে ২০১৬ সালের ১৮ মে এক সভার পর জাতীয় শিক্ষা নীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করে তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্তের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

এরপর ২০১৬ সালের ২১ জুন গণশিক্ষামন্ত্রী ফিজার জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক শিক্ষার স্তর অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ায় ওই বছর থেকে আর পঞ্চমের সমাপনী পরীক্ষা নেবে না সরকার।

সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে গণশিক্ষামন্ত্রী ফিজার বলেন, “সরকারি সিদ্ধান্তের উপর এই পরীক্ষাটা হওয়া-না হওয়া নির্ভর করছে। এখন পর্যন্ত এটা বন্ধ করবার বা এই দুটি পরীক্ষাকে একত্রিত করে একটা পরীক্ষা নেওয়ার… আগে কথাবার্তা হয়েছিল এখন পর্যন্ত সেই নির্দেশনা আসেনি।”

পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য ২০০৯ সাল থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়। আর ইবতেদায়ীতে এই পরীক্ষা হচ্ছে ২০১০ সাল থেকে। একই বছর থেকে শুরু হয় অষ্টম শ্রেণির জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষাও। প্রথম দুই বছর বিভাগভিত্তিক ফল দেওয়া হলেও ২০১১ সাল থেকে গ্রেডিং পদ্ধতিতে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সমাপনীর ফল দেওয়া হচ্ছে। জেএসসির ফলও দেওয়া হচ্ছে গ্রেডিং পদ্ধতিতে।

কিছুদিন আগে জেএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর রোববার থেকে শুরু হয়েছে পিইসি পরীক্ষা। এবার জেএসসি পরীক্ষায় ২৪ লাখ ৬৮ হাজার ৮২০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও অনুপস্থিত ছিল ৬০ হাজার ৮৯৩ পরীক্ষার্থী।

আর প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনীতে মোট ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৭৫ জন ক্ষুদে পরীক্ষার্থী অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও অনুপস্থিত ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮৩ জন শিক্ষার্থী; যা মোট শিক্ষার্থীর ১৭ ভাগ।

সূত্র : চ্যানেলআই অনলাইন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়