শিরোনাম

প্রকাশিত : ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ০১:০৭ রাত
আপডেট : ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ০১:০৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আল্লাহ তায়ালা আকার নাকি নিরাকার?

ওমর শাহ : আল্লাহ তায়ালা আকার নাকি নিরাকার? বিষয়টি নিয়ে অনেক বিতর্ক
রয়েছে। যুগ যুগ ধরে এ নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে। ইতিহাসে মহা পণ্ডিতরা পর্যন্ত এ বিতর্কে
জড়িয়েছেন। কেউ বলেছেন আল্লাহ নিরাকার আর কেউ বলেছেন আল্লাহর আকার রয়েছে। তবে আহলে হকদের মতে এ ধরণের প্রশ্ন কিংবা এ বিষয়টি নিয়ে ঘাটাঘাটি করা উচিত কীনা বিষয়টি আগে জেনে নেওয়া উচিত। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, তোমরা সব কিছু নিয়ে গবেষণা কর। কিন্তু আল্লাহর সত্ত্বা নিয়ে গবেষণা করো না। [মুখতাসারুল মাকাসিদ, বর্ণনা নং-৩১৮]

আল্লাহর আকার নিরাকার ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করা নিষেধ। আল্লাহ তাআলা আছেন। তিনি সকল কিছুর স্রষ্টা। তার কাছেই আমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তিনিই রিজিকের মালিক। ইত্যাদি বিশ্বাস রাখা আবশ্যক।

কিন্তু তিনি দেখতে কেমন? তার আকৃতি কেমন? ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করা সম্পূর্ণরূপে নিষেধ। সালাফে সালেহীনগণ এসব বিষয়ে আলোচনা করাকে অপছন্দ করতেন। আমরাও এসব নিয়ে আলোচনা করাকে অপছন্দ করি।

তাই এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকাই নিরাপদ বলে মনে করি।

যাদের মনের মাঝে ফিতনা রয়েছে। কেবল তারাই এসব মুতাশাবিহাত বিষয়ে কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করে থাকে। কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছে, তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা বলেন, আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। {সূরা আলে ইমরান-৭}

তাই আল্লাহর সত্ত্বার আকার নিরাকার নিয়ে কথা বলা সম্পূর্ণই নিষিদ্ধ বিষয়। কারণ এসব মুতাশাবিহাত এর অন্তর্ভূক্ত। যার সঠিক অবস্থান আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।

আমরা আল্লাহর “হাত, পা, চেহারা” ইত্যাদি অর্থ প্রকাশক শব্দের উপর ঈমান আনি। কিন্তু এগুলোর অবস্থা কেমন? আকার আছে নাকি নেই? ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করি না। মন্তব্য করি না। আমরা কুরআনে বর্ণিত গভীর জ্ঞানীদের কাতারে শামিল হতে চাই। এসবের বাহ্যিক অর্থ বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে ফিতনা বিস্তার করতে চাই না।

হাত পা ইত্যাদি থাকলে সেগুলোর আকার থাকতে হবে। এমনটি মাখলুকের জন্য জরুরী। আকার ছাড়া হাত পা হওয়া অসম্ভব। কিন্তু স্রষ্টার জন্যও কি তা জরুরী? যদি বলা হয়, মাখলুক দৃশ্যমান হবার জন্য যেমন আকৃতি জরুরি তেমনি খালেকের দৃশ্যমান হবার জন্যও আকৃতি জরুরি। তাহলে স্রষ্টাকে সৃষ্টির সাথে তুলনা করা হয়। সৃষ্টির জন্য যা আবশ্যক, স্রষ্টার জন্যও তা আবশ্যক করে ফেলা হচ্ছে।

অথচ স্রষ্টা সৃষ্টির মত নন। তিনি তার মতই। তিনি সৃষ্টির সাদৃশ্যতা গ্রহণ করেন না।

কুরআনে পরিস্কার ঘোষিত হয়েছে, তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের স্রষ্টা। তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং চতুস্পদ জন্তুদের মধ্য থেকে জোড়া সৃষ্টি করেছেন। এভাবে তিনি তোমাদের বংশ বিস্তার করেন। কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন। [সূরা শোরা-১১]

খেয়াল করুন! উক্ত আয়াতে কারীমায় ঘোষণা করা হচ্ছে, মহান রব সকল কিছুর স্রষ্টা। তার মত কিছুই নেই। তিনি সব কিছু শুনেন ও দেখেন।

যদি বলা হয়, শোনা ও দেখার জন্য মাখলুকের মতই স্রষ্টারও তার শান অনুপাতে আকার বিশিষ্ট কান ও চোখ প্রয়োজন। তাহলে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে তারতম্য রইল কোথায়? দু,টিতো একই হয়ে গেল।

যেমন আমরা বলি যে, আমরাও শুনতে পাই, আবার হাতিও শুনতে পায়। আমাদের শোনার জন্য যেমন কান প্রয়োজন। তেমনি হাতির শোনার জন্যও কান প্রয়োজন। তবে পার্থক্য হল, আমাদের কান হল ছোট। আর হাতির কান হল তার মত। অর্থাৎ বড়। তেমনি আমাদের শোনা ও দেখার জন্য কান ও চোখ প্রয়োজন। আবার স্রষ্টারও শোনাও দেখার জন্য কান ও চোখ প্রয়োজন [নাউজুবিল্লাহ]

ব্যাখ্যা করলাম, আমাদের কান ও চোখ আমাদের মত। আর স্রষ্টার কান ও চোখ তার শান মুতাবিক। তাহলে খেয়াল করুন। উভয় উদাহরণ হুবহু মিলে যাচ্ছে।

উভয় ক্ষেত্রেই আমরা সমতায় চলে আসছি। অর্থাৎ স্রষ্টাও সৃষ্টি উভয়ের জন্যই একটি আকার বিশিষ্ট বস্তুর প্রয়োজনীয়তাকে আবশ্যক করে নিচ্ছি। তাহলে স্রষ্টা আর সৃষ্টির মাঝে পার্থক্য রইল কোথায়?

সৃষ্টির জন্য আকার প্রয়োজন, আবার স্রষ্টার জন্যও আকার সাব্যস্ত করলে আমরাতো স্রষ্টাকে সৃষ্টির মতই সাব্যস্ত করে ফেলছি। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পরিস্কার ঘোষণা করলেন যে, তিনি মাখলুকের মত নন। তিনি সম্পূর্ণই আলাদা।

তাই আকার নিরাকার বিষয়ক আলোচনা করা থেকে সম্পূর্ণ রূপে বিরত থাকাই বুদ্ধিমান ও সুক্ষ্মদর্শী ঈমানদের দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলা অহেতুক আলোচনা করে ফিতনা সৃষ্টি করা থেকে আমাদের হিফাযত করুন। আমীন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়