ডেস্ক রিপোর্ট : যাত্রীদের জিম্মি করতে এবার নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকরা। অ্যাপনির্ভর জনপ্রিয় পরিবহন সেবা ‘উবার’, ‘পাঠাও’সহ বিভিন্ন সার্ভিস বন্ধের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৪৮ ঘণ্টা এই ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছে তারা। দীর্ঘদিন ধরে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে সিএনজি অটোরিকশা চালকরা রাজধানীর মানুষকে প্রায় জিম্মি করে রেখেছিল। সিএনজি অটোরিকশার নীতিমালা উপেক্ষা করে মিটার বন্ধ রেখে যৌক্তিক ভাড়ার কয়েকগুণ বেশি আদায় করছে তারা। অ্যাপনির্ভর পরিবহন সেবার কারণে তারা কিছুটা চাপে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকায় ট্যাক্সি ক্যাবের সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত। প্রায় দেড় কোটি মানুষের এই মেগাসিটিতে মাত্র দুটি ট্যাক্সি ক্যাব কোম্পানির হাতে গোনা কয়েকশ ক্যাবে যাত্রী চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। ফলে, রাজধানীর যাত্রীরা রেন্ট এ কার সার্ভিসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। মানুষের চাহিদার কারণে প্রায় ২০ হাজারের বেশি রেন্ট এ কার ক্যাবের বিকল্প হিসেবে চলে আসছিল। এরই মধ্যে গত বছর কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই রাজধানীতে অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা ‘উবার’ চালু হয়ে যায়।
অল্প সময়ের মধ্যে এটি অসংখ্য যাত্রীর নির্ভরতার বাহনে পরিণত হয়। বর্তমানে অ্যাপভিত্তিক (মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন) পরিবহন সেবায় দেশে নীরব বিপ্লব ঘটেছে। বিশ্বখ্যাত পরিবহন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান উবারসহ চলো, বাহন, পাঠাও, আমার বাইক ও যাত্রী নামে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অনুমোদনহীন ট্যাক্সি ও মোটরসাইকেল সেবা দিচ্ছে। যাত্রী চাহিদা ও নির্ভরতার কারণে সরকার ইতিমধ্যে এসব সার্ভিসকে একটি নীতিমালার আওতায় আনতে কাজ শুরু করেছে। এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এখন তা সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদন পেলেই এ সেবা সারা দেশের জন্য প্রযোজ্য হবে।
সূত্র জানায়, বিআরটিএ ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা ২০১৭’ নামের খসড়াটি গত ২৪ জুন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এতে বলা হয়েছে, অ্যাপভিত্তিক এ সেবা চালু হলেও সরকার এর ভাড়া নির্ধারণ করে দেবে না। তবে যাত্রী অসন্তোষ দেখা দিলে সরকারিভাবে ভাড়ার বিষয়টি নির্ধারণ করা হবে। রাইড শেয়ারিং সেবায় চালককে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতসহ সব আইন মানতে হবে। যাত্রীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে। মোটরযানের যাবতীয় হালনাগাদ দলিলাদি এবং চালকের লাইসেন্স থাকতে হবে। এ ছাড়া নীতিমালার কোনো শর্ত লঙ্ঘন হলে রাইড শেয়ারিং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনের মালিকের সনদ বাতিলসহ প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
এদিকে গত দেড় বছরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবার বিরুদ্ধে ধর্মঘটের ডাক দিয়ে গত ১৫ নভেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। আট দফা দাবিতে তাদের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ধর্মঘট পালন করবে অটো রিকশা চালকরা। দাবি পূরণ না হলে ১৫ জানুয়ারি থেকে দুই মহানগরে লাগাতার ধর্মঘট করবে তারা। সংগঠনের সদস্য সচিব সাখাওয়াত হোসেন দুলাল কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, ২২ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে শ্রমিক সমাবেশ ও বিক্ষোভ এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান, ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রামে শ্রমিক সমাবেশ এবং ১০ ডিসেম্বর বিআরটিএ ঘেরাও করা হবে।
সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকদের নামে এই হুমকির বিষয়ে ‘পাঠাও’ সার্ভিসে নিয়মিত যাতায়াতকারী ব্যাংকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকার জন্য অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবাগুলো কার্যকর সেবা দিচ্ছে। যেখানে অফিস সময়ে এবং অন্য ব্যস্ত সময়ে সিএনজিচালকদের হাতে পায়ে ধরেও কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে পারি না, সেখানে এসব সার্ভিসে খুব সহজেই নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়া যায়।
একটি সেবা সংস্থার কর্মী রোকসানা শারমীন বলেন, গুলশানে অফিসের কাজ শেষে মিরপুরের বাসায় ফিরতে প্রতিদিন সীমাহীন দুর্ভোগ হতো। অফিস ছুটির সময়ে বাসে খুব ভিড় হয়। ট্যাক্সি-সিএনজিওয়ালারাও সুযোগ বুঝে দ্বিগুণ ভাড়া হাঁকে। এখন অ্যাপের মাধ্যমে অনুরোধ পাঠালেই গাড়ি চলে আসে। দরদামেরও ঝামেলা নেই।
পরিবহন ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, একটি সভ্য দেশের রাজধানীতে সহজলভ্য কোনো ট্যাক্সি ক্যাব সার্ভিস থাকবে না এটা হতে পারে না। অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবাগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটাও বন্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
আপনার মতামত লিখুন :