শিরোনাম
◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ০৬:১১ সকাল
আপডেট : ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ০৬:১১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঝাড়-ফুঁক তাবিজেই ভরসা

ডেস্ক রিপোর্ট : সারিয়াকান্দির দুর্গম চর ধারাবর্ষা। সদর থেকে দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। আধুনিকতার ছোঁয়া সেখানে এখনো স্পর্শ করেনি। নদী ভাঙনের ফলে বছরের শুরুতে এক চরে বছরের শেষে অন্য চরে জায়গা হয় তাদের। নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করেই ক্লান্ত চরের মানুষগুলো নাগরিক সুবিধার কি সেটাও বোঝে না। মানুষের মৌলিক চাহিদারগুলোর অন্যতম চিকিৎসা।
বরাবরই সেই চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত চরের মানুষগুলো। এখানে জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। জ্বরের একটা নাপা-প্যারাসিটামল ট্যাবলেট কিনতে হয় প্রায় ১৫-২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে। ফলে কবিরাজি চিকিৎসাই ভরসা তাদের। তারা গাছের লতাপাতা শেকড়-বাকল এবং ঝাড়ফুঁক তাবিজের মাধ্যমেই চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এছাড়াও অল্প শিক্ষিত কিছু পল্লী চিকিৎসক চরের এসব মানুষের ভরসা। যথার্থ স্বাস্থ্যসেবা না থাকায় বেড়ে উঠছে নানা পুষ্টিহীনতায়। তীরবর্তী এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও তাতে ওষুধ সরবরাহ ঠিকমতো থাকে না। আর চরে ক্লিনিক ও চিকিৎসা কেন্দ্র নেই বললেই চলে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তাদের একমাত্র চিকিৎসার জায়গা। সেখানেও পর্যাপ্ত সেবার ব্যবস্থা নেই।
পেটের ব্যথা, ভেঙ্গে যাওয়া, মচকে যাওয়া, মাথা ঘোরাসহ ছোটখাটো রোগের জন্য ঝাড়ফুঁকেই নির্ভরশীল চরের মানুষ। এর জন্য এলাকার বয়স্ক ইমাম, নামাজি মানুষের দরবারে হাজির হয় তারা। এছাড়া চরে কিছু কবিরাজের দৌরাত্ম্য লক্ষ্য করা যায়। এসব কবিরাজ বিভিন্ন গাছের লতাপাতা শেকড়-বাকল দিয়ে চিকিৎসা করেন। যেকোনো রোগের চিকিৎসা করেন তারা। এমনকি ক্যানসার, ডায়াবেটিক, জন্ডিসের মতো মারাত্মক রোগও তারা গাছ-গাছড়ার তৈরি ওষুধ দেন।
প্যারালাইসিস রোগীকে ঝাড়ুপেটা করা হয়: চরের মানুষ এখনো এতটাই অসচেতন, তাদের কেউ প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হলে স্থানীয় কবিরাজকে ডাকা হয়। কবিরাজ প্রকাশ্যে রোগীকে ঝাড়ু দিয়ে গোটা শরীর পেটাতে থাকে। মাঝে মধ্যে কিছু মন্ত্র পাঠ করে রোগীর শরীরে জোরে ফুঁ দেয়। এভাবে চিকিৎসা নিয়ে অনেকেই অকালে মারাও যায়। তবুও থেমে নেই এসব সনাতন চিকিৎসা।
জিন-ভূতে বিশ্বাস: ভূতে দৃঢ় বিশ্বাস চরের মানুষের। এই বিশ্বাস বেশির ভাগ নারীর মধ্যেই বিদ্যমান। বিশেষ করে উঠতি বয়সের কিশোরী, যুবতী, নববিবাহিতদের যেকোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে ভূতে ভর করেছে এই ধারণা প্রবল। এর জন্য ফকিরের শরণাপন্ন হন তারা। ফকির রোগীর গলায় অথবা হাতে তাবিজ বেঁধে দেয়ার পাশাপাশি বাড়ির চারপাশে চারটি বড় আকারের বাঁশ পুঁতে দেয়। সেই বাঁশের মাথায় বিশেষভাবে ফুঁ দেয়া মাটির তৈরি কাসা ঝুলে দেয়। এতে ভূত ওই বাড়ির ধারেকাছেও আসতে পারবে না। এমন বিশ্বাস থেকেই চারের প্রায় বাড়িতে এমন মাটির কাসা ঝুলতে দেখা দেয়।
সন্তান প্রসব বাড়িতেই হয়: এলাকায় ডাক্তার নেই। চিকিৎসার জন্য অনেক দূর পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হয়। রাস্তা না থাকায় মুমূর্ষু রোগীদের কাঠের চৌকিতে কাঁধে নিয়ে দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়। চরের এতগুলো মানুষের সেবা দেয়ার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও পর্যাপ্ত সুযোগ নেই। সারকারি এসব হাসপাতালে বছরের প্রায় সময় ডাক্তারবিহীন চলে। দুই চার জন নার্স এবং ডাক্তারের সহকারী দিয়ে কোনোরকম চলছে এসব হাসপাতাল। চরের এসব মানুষের কষ্ট বহুগুণ বেড়ে যায় কোনো সন্তান সম্ভবা মায়ের প্রসব ব্যথা উঠলে। সেই মুহূর্তে তাদের কোনো কিছুই করার থাকে না। ঘরের অন্য মহিলাদের সেবায় সন্তান জন্ম দিতে হয়। এক্ষেত্রে অধিকাংশ নবজাতক মারাত্মক আহত হয়ে পৃথিবীর আলো দেখে। মারাও যায় অনেক মা ও শিশু।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার ছাইদুর রহমান বলেন, চরের মানুষের মধ্যে এখনো কুসংস্কার বিদ্যমান। কবিরাজদের পাশাপাশি চরে কিছু পল্লী চিকিৎসক আছে যারা চিকিৎসার কিছুই না বুঝলেও চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তাদের অপচিকিৎসার ফলে রোগী দ্রুত আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। তিনি আরো বলেন, চরের এসব মানুষকে চিকিৎসা সম্পর্কে আরো বেশি সচেতন করে তুলতে হবে। মানবজমিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়