শিরোনাম
◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ শিশু হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউতে আগুন, পুড়ে গেছে যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন সামগ্রী 

প্রকাশিত : ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৪১ দুপুর
আপডেট : ২০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৪১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দামুড়হুদার বেইলি সেতুটি এখন মরণফাঁদ

শামসুজ্জোহা পলাশ, চুয়াডাঙ্গা : সংশ্লিষ্টদের নজরদারির অভাব আর অবহেলায় চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা-মুজিবনগর সড়কে মাথাভাঙ্গা নদির ওপর নির্মিত গলাইদড়িঘাট সেতুটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটি কয়েকবার মেরামত করা হলেও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি বরং ক্রমান্বয়ে ঘটছে অবনতি। বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে ছোট-বড় শত শত যানবাহনসহ হাজারো মানুষ পারপার হচ্ছে এ সেতু দিয়ে।

ভারী যানবাহনের ভারে জরাজীর্ণ সেতুটি যেকোনো সময় ধসে পড়ে জানমাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা-মুজিবনগর সড়কে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর গলাইদড়িঘাটে ভবিষ্যতে প্রশস্ত করার ব্যবস্থা রেখে বেইলি সেতু নির্মাণ করে।

নির্মাণকাজ শেষ হলে ওই বছরই ১৯৯৫ সালেরর ২ আগস্ট তৎকালীন সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী অলি আহম্মদ এ সেতুটির উদ্বোধন করেন। তখন থেকে এ সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে নানা অনিয়ম সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতার কারণে নজরদারি না থাকায় মেরামতের অভাবে সেটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে সেতু ও সেতুসংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নির্মিত সেতুটির মোট প্রশস্ততা ১৩ ফুট। তার মধ্যে দুই পাশে রেলিংয়ের ২ ফুট বাদ দিয়ে চলাচলের জায়গা মাত্র ১১ ফুট। যেকোন দিক থেকে এই সেতুটির ওপর একটি বাস বা ট্রাক উঠলে পাশে আর জায়গা থাকে না।

ফলে দুদিকে থেকে যাতায়াতকারী বাস, ট্রাক বা অন্য কোনো যানবাহন সেতু পার হওয়ার সময় যেকোনো একদিকের যানবাহন সেতুর সামনের রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সেতুর উভয় পাশে অবৈধভাবে রাস্তার জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে দোকানপাট।

এ ছাড়াও সেখানকার উভয় পাশের অ্যাপ্রোচ রাস্তার ফাঁকা জায়গার পাশ থেকে মাটি সরে গিয়ে খাদের সৃষ্টি হওয়ার কারণে পারাপারের অপেক্ষায় মালবাহী গাড়িগুলোকে একপাশে কাত হয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এর ফলে একই সময়ে দুদিক থেকে আসা যানবাহনগুলোকে সেতু পারাপার হতে অপেক্ষা করতে হয়। নষ্ট হয় অনেক মূল্যবান সময়।

বর্তমানে সেতুটির পাটাতনের নিচের বেশ কয়েকটি লোহার বিমের বিভিন্ন স্থানে ফাঁটল ধরে দুর্বল হয়ে পড়েছে। পাটাতনের বিভিন্ন স্থানে জং (মরিচা) ধরে গেছে। ঢিলা হয়ে গেছে বিমের সঙ্গে পাটাতনের সংযোগস্থলের নাট-বোল্টগুলো।

অনেক স্থানের নাটবোল্ট ভেঙে নষ্ট হয়ে পাটাতন আলগা হয়ে গেছে। ফলে ভারী যানবাহন সেতুর ওপরে উঠলে ওই স্থান দেবে যায় এবং বিকট শব্দ হয়।

এতে যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা আতঙ্কের মধ্য দিয়ে সেতুটি পারাপার হয়। চোরচক্র সেতুর দুপাশের রেলিংয়ের অনেকাংশের পাইপ কেটে চুরি করে নিয়ে গেছে। ফলে ওই স্থান ফাঁকা হয়ে থাকায় সেতু পারাপারের সময় পথচারী বা যানবাহন সেতুর নিচে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নদীর পশ্চিম পাশে সেতুর নিচ থেকে মাটি কেটে নেওয়ার ফলে সেতুর শেষ প্রান্তের পিলারটি হুমকির মুখে পড়েছে। পশ্চিম পাশে সেতুর নিচে অবৈধভাবে নদীর জায়গা দখল করে ঘরাবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছে অনেকে।

এ ছাড়াও সেতুর উভয় পাশের ডান-বামে নদীর নাম, সেতুর নাম, নির্মাণের সন, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ইতাদি লেখাসংবলিত দুটি করে সাইনবোর্ড থাকলেও বর্তমানে সেগুলো দখল করে বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড হিসাবে ব্যাবহার হচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে সেতুটির ওপর সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোনো নজরদারি না থাকায় এমনই অনিয়ম চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

বর্তমানে এ সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন মুজিবনগর থেকে ছেড়ে আসা ৫-৬টি পরিবহন সংস্থার প্রায় অর্ধশতাধিক বাস, আঞ্চলিক রুটের বাস, পণ্যবহী ট্রাক, মোটরসাইকেলসহ শত শত যানবাহন ও পথচারীরা চলাচল করে থাকে।

যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, বরিশাল জেলার মানুষ বিভিন্ন যানবাহনে করে এ সড়ক দিয়েই যাতায়াত করে থাকে ঐতিহাসিক মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে।

বিশেষ করে ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে মুজিবনগরে বনভোজন ও শিক্ষাসফর করার জন্য প্রতিদিন কয়েক শত বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে করে হাজারো শিক্ষার্থী যাতায়াত করে থাকে।

এ অবস্থা চলে মার্চ মাস পর্যন্ত। আবার এ সময়ের মথ্যে চুয়াডাঙ্গা দর্শনা কেরু অ্যান্ড কো¤পানি চিনিকলের মাড়াই মৌসুমে আখবোঝাই শত শত পাওয়ার ট্রলি, ট্রাক্টর ইত্যাদি যাতায়াত করে।

এ ছাড়াও এই দর্শনা-মুজিবনগর সড়কের ধারে অবস্থিত ডজনখানেক হাট-বাজার থেকে কৃষিপণ্যসহ নানা রকম মালামালভর্তি ট্রাক এ সেতুর ওপর দিয়েই দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।

স্থানীয়রা জানান, বছর তিনেক আগে সেতুর পাটাতনের নিচের গার্ডারের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরার ফলে কয়েক স্থানে পাটাতন দেবে যায়।

অভিযোগ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সড়ক ও জনপথ বিভাগ গত এক বছরে বেশ কয়েকবার জোড়াতালি দিয়ে সেসব স্থান মেরামত করে।

সেই সঙ্গে সেতুর দুপাশে ‘ধীরে চলুন, সামনে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু, ৫ টনের বেশি মালামাল বহন করা নিষেধ’ লেখাসংবলিত লাল রঙের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দায়িত্ব শেষ করে।

বর্তমানে সে সাইন বোর্ডেরও কোনো অস্তিত্ব নেই। প্রতিদিন এ সেতুটি দিয়ে মুজিবনগর, কেদারগঞ্জ, আটকবর, কার্পাসডাঙ্গা বাজার থেকে অবাধে ১০ থেকে ২৫-৩০ টন পর্যন্ত ধান, ভুট্টা, কাঠ, পাটসহ বিভিন্ন মালামালবোঝাই করে ঝুঁকিপুর্ণ অবস্থায় ছোট-বড় ট্রাক এ সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করছে।

অতিরিক্ত পণ্য বহনের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত এ সেতু যেকোনো সময় ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনার ঘটার আগেই সেতুটি মেরামত করে এ পথে যাতায়াতকারী যানবাহন ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেতুটি মেরমতের ব্যবস্থা করবেন বলে দাবি করেছে এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে চুয়ডাঙ্গা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল হায়দার জানান, জরুরি ভিত্তিতে সেতুটি মেরামতের জন্য অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই সেতুটি মেরামত করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়