শিরোনাম
◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ ◈ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা সাদা পতাকা উড়াচ্ছিল, তাদের বূলডোজার দিয়ে মাটি চাপা দিল ইসরায়েলী সেনারা ◈ ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দ্রুত আরোপ করুন: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ ◈ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত ◈ বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ ও মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে কাজ করে যাবে যুক্তরাষ্ট্র: ম্যাথিউ মিলার ◈ ঈদের পর কমপক্ষে ২৩ ডিসি’র রদবদল হতে পারে ◈ ৫ থেকে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে কর্মদিবস একদিন

প্রকাশিত : ১৯ নভেম্বর, ২০১৭, ০৪:৫০ সকাল
আপডেট : ১৯ নভেম্বর, ২০১৭, ০৪:৫০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চিত্ত হোক ভয় শূন্য

 

ফাহমিদা হক : প্রত্যেকটা মানুষের জীবনই মহামূল্যবান তার আপনজনদের কাছে। সেই প্রিয় মানুষটি যদি হঠাৎ হারিয়ে যায়, গুম হয়ে যায়, লাশ হয়ে ফিরে আসে। কিংবা কোনোদিন ফিরেই না আসে বা আদৌ ফিরবে কিনা তার নিশ্চয়তা না থাকে তখন সেই কষ্টের ভার যে কতটা দূর্বিসহ হয়, তা কেবল পরিবারের লোকজনই হাড়ে হাড়ে টের পায়। স্বাভাবিক মৃত্যুকেই মেনে নিতে মানুষের কষ্টে বুক ভেঙ্গে যায়, সেখানে এমন গুম-খুন, অপহরণ হয়ে যাওয়া পরিবারের মানুষদের আমরা সান্তনা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারি না। দিনে দিনে এমন ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলছে, যেন লাগামহীন ঘোড়া। নিখোঁজ, গুম বা অপহরণ যাই হোক, কোনো স্বাধীন দেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কোনো জনগণের এভাবে অনিশ্চিত জীবন মানেই আইনের শাসন, স্বাধীনতা, বেঁচে থাকার অধিকারকে হেয় প্রতিপন্ন করে অর্থহীন করে তোলে।

 

এই গুম, হত্যা বা অপহরণ আগেও ছিল কিন্তু ২০০৯ সালের পর থেকে তিন বছরে প্রায় ৩২৫টি গুম বা অপহরণের ঘটনা ঘটে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দেওয়া তথ্য মতে এর সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছেই। তিন বছর আগে বাংলাদেশে ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে শহরের কাউন্সিলর ও আইনজীবীসহ মোট সাতজন নিখোঁজ হয়েছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী একটি এলিট ফোর্সের পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার কয়েকদিন পর তাদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। তিন বছর আগের ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের সাজা হলেও বর্তমানে দেখা যাচ্ছে এসব গুম, খুন বা অপহরণ কমছেই না। কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে, কারা করছে, কেন করছে আর কেনইবা তা ধরা যাচ্ছে না পুরোপুরি ভাবে কারা এসবের সাথে জড়িত? এ প্রশ্ন শুধুই সরকারের জন্যে।

 

কারণ নাগরিকের পূর্ণ মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়ার দায়িত্ব একমাত্র সরকারের। বলা হচ্ছে এ যাবত কালে যতগুলো গুম বা অপহরণ হয়েছে তার বেশির ভাগই সরকারি বাহিনীর লোক, সিভিল ড্রেসে বা কখনো ইউনিফর্মে বা কখনো অন্যের ভাড়া করা গাড়িতে বা নিজেদের গাড়িতে করে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এসব সরকারি বাহিনীর নামে তাদেরকে জোড় করে তুলে নিয়ে গুম করে ফেলাটা কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য গণতন্ত্রের হুমকি ছাড়া আর কিছুই না।

 

২০১৬ সালের ৪ অক্টোবর রাতে সাতক্ষীরার জেসমিন নাহারের স্বামী নিখোঁজের পিছনে পুলিশের হাত আছে বলে অভিযোগ জেসমিন নাহারের। তিনি বলছেন তার স্বামীকে পুলিশই নিয়েছে, যদিও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে বলছে। অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানে জেসমিন নাহারের স্বামী মোখলেছুরকে সাতক্ষীরা থানার ওসি আটক করে নি বলা হয়েছে। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে বনানী থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলা হলেও আজো তার কোনো হদিস পাওয়া যায় নি। আরেক জন ব্যবসায়ীকে গুলশান থেকে কে বা কারা অপহরণ করেছে তার সন্ধান মেলেনি। সাংবাদিক উৎপলকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক গবেষক মুবাশ্বের হাসান সিজারের পথ চেয়ে বসে আছে তার ছোট্ট অবুঝ বাচ্চা মেয়েটি। আমরা কেউ বলতে পারছি না আদৌ সিজার তার বাচ্চা মেয়ের কাছে আর কোনোদিন ব্যাগ ভর্তি খেলনা নিয়ে ফিরে আসবে কি না। আমরা কেউ জানি না কার ভাগ্যে কখন যে কি ঘটে যাবে। শুধুই অনিশ্চয়তা!

বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেবে গত তিন বছরে নিরাপত্তা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নেওয়ার পর ২৬৭ জন নিখোঁজ হয়েছেন। ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ৫৫ জন ছিল। ২০১৬ সালে সেটি বেড়ে ৯৭ জনে দাঁড়ায়। আর ২০১৭ সালের তিন মাসে গুমের ঘটনা ঘটে ২৫ টি যার মধ্যে মার্চেই ঘটে ১৪টি ঘটনা। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক এমন পরিস্থিতিকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশকে অবশ্যই আইন শৃংঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গুম, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের ঘটনাগুলোর তদন্ত করে দেখত হবে। ঘটনার শিকার নাগরিকদের যথাযথ সহায়তা দিতে হবে। অপহরণ ও গুম নিয়ে জাতিসংঘের কমিটি বলে, সরকারের উচিত গুম হওয়া ব্যাক্তিদের সন্ধান করা এবং তাদের আত্মীয়দের তদন্তের অগ্রগতি জানানো। আর অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগের তীর যখন ঐসব সংস্থার দিকেই, তখন তাদের দায়িত্ব আরও বেশি।

উট পাখির মতো বালিতে মুখ লুকিয়ে রাখা বা কবরের নীরবতায় স্বস্তি বোধ করার কোনো কারণ নেই। এই স্বস্তিই একদিন বড় অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে যে কারও জন্য বা সবার জন্য। এখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রথম কাজ হচ্ছে তার নাগরিকদের ভয় কাটিয়ে তোলা।

লেখক : পরিচালক, সিসিএন
সম্পাদনা : আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়