সাঈদা মনীর : সত্যিই কি শীতকালে দই খাওয়া উচিত নয়? কারণ ঠান্ডার সময় দই খেলে বাস্তবিকই ঠান্ডা লেগে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই সঙ্গে সর্দি-কাশির প্রকোপ বাড়ার সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে দই খেলে শরীরে অন্দরে মিউকাসের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই তো যারা ইতিমধ্যেই রেসপিরেটরি ইনফেকশন বা অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়েছেন অথবা ঠান্ডা লাগিয়ে বসে আছেন, তাদের ভুলেও দই খাওয়া উচিত নয়, বিশেষত রাতের বেলা। আধুনিক বিজ্ঞান দইয়ের বিষয়ে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের এই মতকে মেনে নিতে পারেননি।
অ্যাডভান্স রিসার্চ এক্ষেত্রে একেবারে ভিন্ন মত পোষণ করে থাকে। নিউট্রিশনিস্টদের মতে, দইয়ে উপস্থিত ভিটামিন সি, বি১২, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সার্বিকভাবে শরীরের গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই শীতকালে দই খেলে কোনও ক্ষতি হয় না। বরং শরীর ভিতর থেকে এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে রোগ ভোগের আশঙ্কা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে আরও অনেক উপকার পাওয়া যায়। দইয়ে উপস্থিত উপকারি ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করার পর হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটাতে শুরু করে। সেই সঙ্গে হজমে সহায়ক পাচর রস যাতে ঠিক মতো কাজ করতে পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কমতে শুরু করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে ইউনিভার্সিটি অব ভিয়েনার গবেষকদের করা এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, দিনে ২০০ গ্রাম করে দই খেলে রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। কারণ দইয়ে উপস্থিত ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকেক আদ্র রাখার পাশাপাশি একাধিক ত্বকের রোগের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই সারা শীতকাল জুড়ে নিয়ম করে দই খাওয়া যায় তাহলে, রক্তচাপ কমায় হঠাৎ হঠাৎ ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়ার চিন্তায় থাকতে হবে না। তাহলে তো শীত হোক কী গ্রীষ্ম, দই খাওয়া ছাড়লে চলবে না। কারণ দুগ্ধজাত এই খাবারটির অন্দরে থাকা বিশেষ এক ধরনের প্রোটিন ব্লাড প্রেসার কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, আমেরিকান হার্ট অ্যাসোশিয়ানের প্রকাশ করা রিপোর্ট অনুসারে নিয়মিত দই খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৩১ শতাংশ কমে যায়। হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় একাধিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে নিয়মিত ২৫০ গ্রাম করে দই খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বোন ডেনসিটির উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে নানাবিধ হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। তাই বেশী বয়সে যদি অস্টিওপোরোসিস মতো হাড়ের রোগে আক্রান্ত হতে না চান, তাহলে সারা বছর দই খেতে কখনও ভুলবেন না যেন! হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত দই খেলে শরীরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বাড়তে থাকে যে ব্লাড প্রেসার কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে খারাপ কালেস্টেরলের মাত্রাও কমে যেতে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। আসলে এর মধ্যে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
আপনার মতামত লিখুন :