সারোয়ার জাহান: ৭ই মার্চের ভাষণ ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যে’র স্বীকৃতি দেওয়ায় ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,৭ই মার্চের ভাষণের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ভাষণ পৃথিবীতে আর কিছুই হতে পারে না, পৃথিবীর কোনো ভাষণ এতদিন এতক্ষণ বাজানো হয়নি।
শনিবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যে’র স্বীকৃতি পাওয়ায় নাগরিক কমিটির ব্যানারে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ মানুষ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা নিতে এসেছিল উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বহু নেতার ভাষণ শ্রেষ্ঠত্ব পেলেও তা লিখিত ছিল, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ছিল অলিখিত।
শেখ হাসিনা বলেন, তখন ৫৬ শতাংশ মানুষ ছিল পূর্ব পাকিস্তানে। কিন্তু বাঙালির কোনো অধিকার ছিলো না। পশ্চিম পাকিস্তানিরা সম্পূর্ণ শোষণ করেছে। তারা আমাদের মাতৃভাষার অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল। তখন বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সবাইকে উদ্ধুদ্ধ করে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেন।
তিনি বলেন, পাকিস্তানিরা কখনও চায়নি বাঙালিরা শাসনভার হাতে নিক। ডিসেম্বরের ৭ তারিখ ইলেকশন হয়। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি গেলো কিন্তু তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। বঙ্গবন্ধুর কথায় এদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।
৭ই মার্চের ভাষণের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা সেদিন ভাষণ দিয়েছিলেন লাখো মানুষ এসেছিল এখানে (রেসকোর্স ময়দানে)। বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে এখানে এসেছিল তারা।
‘জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্ধুদ্ধ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। জাগ্রত করেছিলেন বাঙালি জাতিকে। ৭ই মার্চ সেদিন তার নির্দেশনা নিতে লাখ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে এসেছিলেন।’
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের জনসভায় যাওয়ার আগমুহূর্তের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, যেদিন রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দিতে আসবেন ওই সময়ের কিছুক্ষণ আগে আমার মা বাবাকে শোবার ঘরে নিয়ে বলেছিলেন, ‘তুমি একটু বিশ্রাম নাও।’
‘অনেকেই অনেক লিখিত সিদ্ধান্তের কথা বলছিলেন বাবাকে জনসভায় বলতে। অনেক লিখিত বক্তব্যও হাতে দিয়েছিলেন কেউ কেউ। আমি তখন বাবার মাথায় হাত দিয়ে বুলিয়ে দিচ্ছিলাম। মা তখন বাবাকে বললেন তুমি দেশের মানুষের জন্য জীবনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছো।
অনেকেই অনেক কথাই বলবে। কিন্তু তোমার মনে যা আসবে তুমি তাই বলবে। এসব মানুষের ভাগ্য তোমার হাতে।’
‘আমার মা কখনও প্রকাশ্যে রাজনীতি করেননি। বাবার কাছ থেকে তিনি রাজনৈতিক প্রজ্ঞা পেয়েছিলেন। সারাজীবন ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন তিনি।’
এর আগে দুপুর ২টা ৩৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী সমাবেশস্থলে প্রবেশ করেন। এসময় সেখানে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা।
এর পরপরই জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সমাবেশের সভাপতিত্ব করছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সঞ্চালনায় রয়েছেন নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ও শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আবদুল আলীম চৌধুরীর কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী।
আপনার মতামত লিখুন :