শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর, ২০১৭, ০৯:২৫ সকাল
আপডেট : ১৮ নভেম্বর, ২০১৭, ০৯:২৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে গরম রাজনীতি

শিমুল রহমান : প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি । এই দুই দলের রাজনৈতিক সংস্কৃতি একেবারে ভিন্ন। সেখানে কোনো সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি নেই, আছে শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকা ও যাওয়ার লড়াই, হানাহানি, দ্বন্দ্ব, সংঘাত। সেখানে কোনো সমঝোতা নেই, আছে সংঘাত। প্রতিটি শাসক দলই বিরোধী রাজনৈতিক দলকে সহ্য করতে পারে না। তবে এটা কোনো গোপন তথ্য নয়, সবারই জানা । টানা দুই মেয়াদে শাসন ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ, দশ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। এদিকে, টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড ধরে রাখার চেষ্টায় আওয়ামী লীগ, আবার বেশিদিন ক্ষমতার বাইরে থাকলে বিএনপি অস্তিত্ব সংকটে পড়ার আশঙ্কায় বিএনপি। বিষয়টিকে যেভাবেই দেখা হোক না কেন, বাস্তবতা হচ্ছে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি হঠাৎ একটু ভিন্ন উত্তাপে মোড় নিয়েছে। আওয়ামী লীগের ভাষ্য, একাদশ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে। সেটা হবে আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক বিজয়, আর বিএনপির হ্যাটট্রিক পরাজয়। অন্যদিকে বিএনপির ভাষ্য, ২০১৮ সাল হবে জনগণের বছর। ওই সময় দেশ থেকে সব অন্যায়-অত্যাচার বিদায় নেবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নভেম্বর মাসেই শুরু হলো মাঠ গরমের রাজনীতি। দেখা দিয়েছে সেই বহুল প্রতীক্ষিত রাজনৈতিক কর্মসূচি। সরব হয়ে উঠছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। একের পর এক পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে রাজনীতিতে দেখা দিচ্ছে নির্বাচনী উত্তাপ। নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে ইতোমধ্যেই মাঠে নেমে গেছে রাজনৈতিক দলগুলো। যদিও এসব কর্মসূচিকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বলতে নারাজ দলের নেতারা। কিন্তু মাঠে নিজেদের অবস্থান দৃশ্যমান করতে সর্বশক্তি প্রয়োগের সিদ্ধান্তই নিয়েছে দলগুলো। কর্মসূচি ঘিরে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনাও বিরাজ করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠছে নির্বাচন কমিশনও (ইসি)। রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ খুঁজছে এই সাংবিধানিক সংস্থা।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্যাম্প পরিদর্শনের কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ঢাকা টু চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সফরের মধ্যদিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বসে নেই। তারাও নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠেই আছে। তৃণমূলকে চাঙ্গা রাখতে এবং দলের সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াতে জেলায় জেলায় সফর করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের তৃণমূল নেতারাও আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মাঠ গরম করছেন। তারা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে মাঠে নেমে পড়েছেন। দলীয় সূত্রগুলো জানায়, এবার ঢাকার বাইরে কর্মসূচি দেয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। সরকারি দল আওয়ামী লীগও পল্টা কর্মসূচি দিয়ে রাজনীতির মাঠে শক্ত অবস্থান নিয়ে থাকতে চায়।

দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যে নির্বাচনী পথে হাঁটছে-তা দলের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে উঠে আসছে। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ‘সামনে নির্বাচন, দল গোছান’ বলে নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীদের। সেদিন গণভবনে একটি জেলার নেতারা সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী আগামী বছরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিবেচনায় রেখে দলীয় কার্যক্রমকে ‘সুসংগঠিত’ করার নির্দেশনা দেন। এর আগে বিভিন্ন সময় তিনি এবার নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও সব দলের অংশগ্রহণে হবে এবং বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে বলে সতর্ক করে দেন এবং দলকে সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন। একইভাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ শীর্ষ নেতারা ‘যেকোনো পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে যাবে’ বলে মন্তব্য করেছেন। তারা বলেছেন, কোনো ষড়যন্ত্র করেও বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখা যাবে না। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শীর্ষ নেতারাও রাজনীতিতে নির্বাচনী উত্তাপ টের পাচ্ছেন বলে মত দিয়েছেন।

এদিকে, বসে নেই অন্য ছোট-মাঝারি সংগঠনগুলোও। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নতুন জোট করে মহাজোটের বাইরে পৃথকভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিবন্ধন বাতিল হলেও গোপনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। ১৪ দলীয় জোট ও ২০ দলীয় জোটের বাইরের দলগুলোও নতুন একটি নির্বাচনী প্ল্যাটফর্ম গড়তে দফায় দফায় বৈঠক করছে। তাই আভাস মিলছে নির্বাচনের এক বছর আগে এবারের শীত মৌসুম থেকেই রাজনৈতিক আবহ গরম হয়ে ওঠার।

নির্বাচনকালীন সরকার-সংক্রান্ত অবস্থানে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই কঠোর অবস্থান বজায় রাখলে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে রাজপথ। তবে যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণাও রয়েছে বিএনপির। আর বিএনপি নির্বাচনে আসবে- মাথায় নিয়েই প্রস্তুত হচ্ছে আওয়ামী লীগ।

রাজনীতির মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য শুধু জনকল্যাণই নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির সেতুবন্ধ। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের দেশের রাজনীতির। আমাদের রাজনীতির ইতিহাসে বিশেষ করে স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি গড়ে ওঠেনি, জাতীয় ঐকমত্যও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং এর বিপরীতে গড়ে উঠেছে হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, কুৎসা, চরিত্র হনন, মামলা, হামলার নির্লজ্জ প্রতিযোগিতা।

আমাদের দেশে সুস্থধারার রাজনীতি যেন সোনার হরিণ। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র হিসেবে। আর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ মানেই প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পরিচয়ই তাই। তাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল শক্তিই হচ্ছে জনগণ। জনগণকে বাদ দিয়ে কোনো রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হতে পারে না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের সঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর যে সুসম্পর্কের ভিত তৈরি হয় তা অন্য কোনো শাসনব্যবস্থায় পরিলতি হয় না। তাই আজকের পৃথিবীতে গণতন্ত্রের জন্য মানুষ প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছে। তবে প্রকৃত গণতন্ত্রে জনগণ বিরোধী দলের মতামত প্রাধান্য দিয়ে তাদের ভালো দিকগুলোকে সরকার গ্রহণ করে। শাসক ও বিরোধী দলের আচার-আচরণে গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে। প্রতিটি শাসক দলকে উদার হতে হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে ধৈর্য-সহনশীলতার পরিচয় দিতে হয়। আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেসব রাজনৈতিক দল থাকে তাদের মধ্যে নীতি-আদর্শগত মতপার্থক্য থাকবে এটা স্বাভাবিক। তাই রাষ্ট্রমতায় যখন যারা থাকে তাদের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি যে কোনো ইস্যুতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশ্বাস ও আস্থা তৈরি করে যৌথভাবে দেশ পরিচালনা করা। পৃথিবীর উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোয় এভাবে দেশ পরিচালিত হয়। কেননা গণতন্ত্র মানেই রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি একেবারে ভিন্ন। সেখানে কোনো সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি নেই, আছে শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকা ও যাওয়ার লড়াই, হানাহানি, দ্বন্দ্ব, সংঘাত। সেখানে কোনো সমঝোতা নেই, আছে সংঘাত। প্রতিটি শাসক দলই বিরোধী রাজনৈতিক দলকে সহ্য করতে পারে না। তাদের মতামতকে যুক্তির মাধ্যমে না নিয়ে বরং তা কলহ-বিবাদ, হামলা, দ্বন্দ্ব-সংঘাতে পরিণত করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়