শিরোনাম
◈ গাজীপুরে হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু  ◈ বিশৃঙ্খলার পথ এড়াতে শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী ◈ তাপপ্রবাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা ◈ সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৮৪০ টাকা ◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সেই সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর, ২০১৭, ০১:০০ রাত
আপডেট : ১৮ নভেম্বর, ২০১৭, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সৌদি প্রিন্সের বেপরোয়া কর্মকান্ড মার্কিন স্বার্থের জন্যেও উদ্বেগজনক

রাশিদ রিয়াজ : পিতার নীরব সমর্থনে ৩২ বছরের সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ সালমান নিজেকে আরব বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিতে রুপান্তরিত করেছেন, একই সময়ে এজন্যে তাকে এ সকল পক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্বে অবতীর্ণ হতে হয়েছে। সৌদি রাজপরিবারের ১১ জন প্রিন্স, ২’শ প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও বিশিষ্ট ব্যক্তি গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়ে তিনি রক্ষণশীল ধর্মীয় নেতাদের কাছ থেকেও ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছেন। প্রতিবেশি কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ, ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অভিযোগ, লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরিকে পদত্যাগের প্ররোচনা ছাড়াও ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরু করে দেশটিকে তিনি এক মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছেন।

ক্রাউন প্রিন্সের এত ক্ষিপ্ত পদচারণায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও অন্যরা উদ্বিগ্ন এ কারণে যে এতে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। প্রত্যাঘাতের সম্ভাবনাও দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। বিনিয়োগকারীরা তার পরিকল্পনায় ভীত, সৌদি থেকে অর্থ সরিয়ে নিতে তৎপর হয়ে উঠেছেন। মুুদ্রা পাচারের অভিযোগ তুলে তিনি দুর্নীতির অভিযোগে ব্যক্তি ও তাদের সম্পদ আটক করেছেন। দুর্নীতি বিরুদ্ধে তার এ জেহাদের অন্তরালে রয়েছে সৌদির প্রশাসনিক ক্ষমতাকে ঢেলে সাজানো এবং মিসরের সাবেক নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানের পরামর্শ নিচ্ছেন যিনি দুর্নীতি ও নিষ্টুরতার জন্যে এক ঘরে হয়ে আছেন।

প্রিন্স মোহাম্মদের সমর্থকরা বলছেন, তিনি কেবল মাত্র দুর্নীতি প্রতিরোধ ও তেল নির্ভর অর্থনীতি থেকে সৌদি আরবকে এক শক্তিশালী অর্থনীতির দিকে ধাবিত এবং একই সাথে ইরানের আগ্রাসনকে মোকাবেলা করছেন। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি সম্ভাব্য উত্তরাধীকার সৃষ্টির আগেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ইচ্ছাই তাকে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ায় বাধ্য করেছে, এক অপরিকল্পিত কিংবা অনির্বাচিত উচ্চাকাঙ্খায় তাকে ধাবিত করেছে এবং পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যা হতাশা সৃষ্টি করেছে। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উচ্চ মাত্রায় ভরসা রেখে উদ্দীপ্ত থাকেন কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, পেন্টাগন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে তাদের ভয় হচ্ছে ক্রাউন প্রিন্সের আবেগপ্রবণতা তাকে এমনভাবে লক্ষ্যচ্যুত করবে যা মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে হোয়াইট হাউসের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সমন্বয়ক ফিলিপ গর্ডন বলেন, ক্রাউন প্রিন্স সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি যা করবেন তা অসাবধানতার সাথেই তা করবেন। এজন্যে অন্য প্রিন্সদের ওপর উন্মত্ত আচরণ কিংবা শাসনতন্ত্রের স্তম্ভকে বিচ্ছিন্ন করে তিনি যা করছেন তা আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবে যা নিরসনে অনেক মূল্য দিতে হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভীত হয়ে পড়বে। এর ফলে তিনি যে সংস্কার আনতে চাচ্ছেন সৌদি আরবে তার সম্ভাবনা হ্রাস পাবে।

এছাড়া বিচারবর্হিভূত গ্রেফতারের ঘটনায় বিনিয়োগকারীরা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি জাতীয় তেল প্রতিষ্ঠান আরামকো’র শেয়ার নিউ ইয়র্কে বাজারে ছাড়ার যে পরিকল্পনা ক্রাউন প্রিন্স নিঃশব্দে নিয়েছেন, যা তার পৃষ্ঠপোষকতার একটি কেন্দ্রবিন্দু ছিল। ইরান ও লেবাননকে যে হুমকি দিচ্ছেন তিনি, তা প্রত্যাশিত দুর্দশার আতঙ্ক হয়ে উঠেছে কারণ সৌদি সামরিক শক্তি ইয়েমেনে নত হয়ে পড়েছে, কার্যকর কোনো জয় এ যুদ্ধে পাচ্ছে না। ফলে রিয়াদকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ওপর নতুন কোনো দ্বন্দ্বে বা যুদ্ধে আরো নির্ভরশীল হয়ে উঠতে হবে।

ক্রাউন প্রিন্সের দেশেই যখন দুর্নীতির দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে তাহলে তা পরিস্কারের জন্যে রাজপরিবারের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা বা উচ্চাভিলাষীদের মধ্যে বিভেদের পরিবর্তে সর্বাগ্রে ঐক্য জরুরি ছিল অন্তত ইরানের মোকাবেলা বা উত্তরাধীকারকে মসৃণ করতে। দুর্নীতির দায়ে আটক ব্যক্তিদের নির্যাতন করার পর অন্তত ১৭ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসক ও সৌদি পরিস্থিতির ওপর নজরদারিতে ব্যস্ত মার্কিন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মিসরের সাবেক নিরাপত্তা প্রধান হাবিব এল-আদলি ও দেশটির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যিনি হোসনি মোবারকের শাসনামলে নিষ্ঠুরতার জন্যে যথেষ্ট দুর্নাম কুড়িয়েছেন তিনিই এখন ক্রাউন প্রিন্সের উপদেষ্টা। মিসর থেকে তিনি পলাতক এবং তার আইনজীবী এধরনের অনুপস্থিতিতেই দুর্নীতির দায়ে ৭ বছরের কারাদন্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্যে সৌদি রয়াল কোর্টের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্ন ওয়াশিংটনে সৌদি আরবের দূতাবাসে পাঠানো হলে এর মুখপাত্র ফাতিমাহ বায়েসেন বিষয়টি নিশ্চিত বা কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

সম্প্রতি তেলের দর পড়ে যাওয়ায় সৌদি আরবে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প স্থবির হয়ে পড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের এক তৃতীয়াংশের বেশি খরচ করতে হয়েছে, এর ফলে ২০১৪ সালে ৭৩৭ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ নেমে এসেছে ৪৭৫ বিলিয়ন ডলারে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে রাজস্ব আদায়ে সংকট বা খরচ হ্রাসের পাল্লায় পড়বে দেশটি। এধরনের বাস্তবতার বিরুদ্ধে ক্রাউন প্রিন্সের সমর্থকরা বলছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে জেহাদ শুরু হয়েছে তা শত শত বিলিয়ন ডলার উদ্ধার করতে সমর্থ হবে, বাজেট ঘাটতি পূরণ করবে এবং উন্নয়নে কাজে লাগবে। কয়েক মাস ধরে প্রিন্স মোহাম্মদ তার দেশের ধন্যাঢ্য ব্যক্তিদের সৌদি আধুনিকীকরণ প্রকল্পে বিনিয়োগের আহবান জানিয়ে আসছেন। এর একটি হচ্ছে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের নিওম প্রকল্প। দুর্ভাগ্য প্রিন্সের বিনিয়োগ আহবানে কোনো সাড়া পড়েনি এবং ধনাঢ্য ব্যক্তি বা বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা নিজদেশ সৌদিতে বিনিয়োগের পরিবর্তে বিদেশে টাকা পাচার করছেন।

তাহলে এজন্যেই কি আটক প্রিন্স, ধন্যাঢ্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর চাপ ও নির্যাতন প্রয়োগ করা হচ্ছে এমন প্রশ্ন উঠেছে। একজন সিনিয়র সৌদি কর্মকর্তা এধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদের পক্ষ নিয়ে বলেছেন বুঝতে হবে সৌদি আরবে বিনিয়োগ বা ব্যবসার ধরণ বা এক্ষেত্রে পুরোনো নিয়ম পাল্টে গেছে। তিনি বলেন, সৌদির প্রতিটি স্তরে দুর্নীতির ফলে দেশটির অর্থনীতি থেকে শতশত বিলিয়ন রিয়াল খোয়া যাচ্ছে। এ অব্যবস্থাকে একটা তীব্র ঝাঁকুনি দিতে এধরনের অভিযানের প্রয়োজন ছিল বলেও দাবি করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ কর্মকর্তা। অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে যারাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের কাউকে ছাড়া দেয়া হবে না এবং কেউ বিচারের উর্ধ্বে নন। কি বড় প্রকল্প কি সামান্য পাসপোর্ট পেতে সর্বত্রই ঘুষের চল হয়ে গেছে এবং অগণিত সৌদি নাগরিকরা এ খপ্পরে আটকা পড়ে গেছে। এমন অবস্থায়ও কোনো প্রিন্স বা কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও এ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক কেন এবং কার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

কেউ কেউ বলছেন, সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে আগেভাগেই নিষকণ্টক করে দিতে প্রিন্স মোহাম্মদ এধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। গত জুনে তার পিতা ও তিনি ক্রাউন প্রিন্স ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ৪৮ বছর বয়স্ক প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। এমনকি তাকে তার প্রাসাদে আটক করে রাখা হয়। গত সপ্তাহে এক ভিডিও দৃশ্যে প্রিন্স বিন নায়েফকে এক পারিবারিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে দেখা যায় যেখানে তার অনুগতরা তাকে অভিবাদন জানাচ্ছিলেন। তার কাঁধে চুমু দিচ্ছিলেন। একটি মিছিল থেকে শুভাকাঙ্খিরা তাকে স্বাগত জানান। এ দৃশ্য তার জনপ্রিয়তা যে অক্ষুণ্ন রয়েছে তা প্রমাণ করে। কিন্তু একই দৃশ্য ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ সালমানকে অগ্নিশর্মা করে তোলে এবং তার নির্দেশে প্রিন্স বিন নায়েমের স্ত্রী ও কন্যার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ আটক করা হয়। তবে ওয়াশিংটনে সৌদি দূতাবাসের মুখপাত্র বলছেন, এসব ব্যাপারে বা কোনো তদন্ত নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে তিনি অপারগ।

কিছু আমেরিকান কর্মকর্তা সন্দেহ করছেন প্রিন্স মোহাম্মদ তার পিতা বাদশাহ সালমানের কাছ থেকে সর্বময় কর্তৃত্ব ছিনিয়ে নিতে পারেন যিনি ইতিমধ্যে ডিমনেশিয়ায় ভুগছেন। গত গ্রীষ্মে যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রিয়াদ সফর করেন তখন বাদশাহ সালমান বসে থেকে একটি বিবৃতি পাঠ করতে যেয়ে গলদঘর্ম হয়ে ওঠেন। তার বক্তব্য দুর্বল ছিল, জড়িয়ে আসছিল এবং তিনি জনসমক্ষে কদাচিৎ কথা বলেন। তবে সৌদি কর্মকর্তারা বলেন, তার মানসিক ক্ষমতা পুরোপুরি ঠিক রয়েছে।

প্রিন্স মোহাম্মদের সমর্থকরা দাবি করেন লেবানন ও ইরানকে সৌদি আরব যে হুমকি দিচ্ছে তা তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যখন তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদে লিপ্ত তখন তেহরানের সহযোগিতায় ইয়েমেন থেকে ইরানে নির্মিত একটি ক্ষেপণাস্ত্র রিয়াদ অভিমুখে ছোড়া হয় যা শহরটির উপকণ্ঠেই ধ্বংস করা হয়। একই দিন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি সৌদি আরব থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে ইরান ও হিজবুল্লাহকে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্যে দোষারোপ করেন। কিন্তু সাবেক ও বর্তমান অনেক মার্কিন কূটনৈতিক বলছেন, প্রিন্স মোহাম্মদের বলিষ্ঠতায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থন প্রতিফলিত হয়ে উঠছে। এমনকি ওবামা প্রশাসনের শেষদিনে আরেক পারস্য উপসাগরীয় প্রিন্স যিনি ওয়াশিংটনের সঙ্গে গভীর সম্পর্কে আবদ্ধ সেই ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান তার সৌদি সহযোগীকে বুঝাতে সক্ষম হন যে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাদের এক গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হতে যাচ্ছেন। এই দুই প্রিন্স ট্রাম্প জামাতা ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে এক বিশেষ সম্পর্ক তৈরি করেছেন। ৩২ বছরের প্রিন্স মোহাম্মদের পাশাপাশি ৩৬ বছরের কুশনার বেশ মানানসই বলেই মনে হয়।

ক্ষমতায় আসার পর মি. ট্রাম্প প্রথম সফরে সৌদি আরবকেই বেছে নেন। এ সফরের সময় প্রিন্স মোহাম্মদ ও মি. কুশনার কি শলাপরামর্শ করেন তা আমেরিকান কর্মকর্তাদের জানানো হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক কর্মকর্তা বলেন, জ্যারেড এক কালো গহ্বরের অংশ বিশেষ। হোয়াইট হাউজে কাজ করতে যেয়ে হতাশার সাথে এ কর্মকর্তা বলেন, কুশনার কোন পদে আছেন সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। আমরা তার সম্পর্কে শুধু ধারণা করতে পারি তিনি কি করছেন বা কোথায় তিনি ছিলেন। এই কর্মকর্তা আরো বলেন, আমিরাতি ও সৌদিরা কুশনারকে উদ্দীপিত করে তাদের পাশে রাখতে খুবই সজাগ ছিলেন। বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে তাদের দ্বন্দ্বপূর্ণ প্রতিযোগীদের বিপরীতে তারা এ অবস্থান নেন।

হোয়াইট হাউজের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, কুশনারের চরিত্র বিতর্কিত। তিনি তার ভ্রমণ ও কথোপকথন সম্পর্কে স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের কাছে ব্রিফিং করেন। এ বছর কুশনার সৌদি আরবে তৃতীয়বারের মত সফর করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে না আসা পর্যন্ত তা অঘোষিত ছিল। গত অক্টোবরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানান, প্রিন্স মোহাম্মদ সালমানের সঙ্গে জ্যারেড কুশনার গভীর রাত পর্যন্ত কাটাতেন। সৌদিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ও গ্রেফতার অভিযান শুরু হলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইটারে বার্তা দিয়ে বলেন, বাদশাহ সালমান ও প্রিন্স মোহাম্মদের ওপর আমার গভীর আস্থা রয়েছে, তারা কি করছেন সে সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল। তারা যে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে তা দেশটির জন্যে বছরের পর বছর সুফল বয়ে আনবে। যদিও একাধিক হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তারা বলেন, সৌদি আরবে কি ঘটছে তা নিয়ে কুশনার মাথা ঘামান না।

ওয়াশিংটনে সৌদি আরবের দূতাবাসের মুখপাত্র ফাতিমাহ বায়েসেন বলেন, সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতামূলক আলোচনা হয়ে থাকে কিন্তু অভ্যন্তরীণ বিষয় একেবারেই আলাদা। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্মকর্তারা বলেন, কূটনীতিক থেকে শুরু করে পেন্টাগন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রিন্স মোহাম্মদের আচরণ ও উদ্যোগ নিয়ে খুবই উৎকণ্ঠিত এজন্যে যে যথেষ্ট বাছবিচার না করেই তিনি যা করছেন তা হিতে বিপরীত হতে পারে এবং তা মার্কিন স্বার্থকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

বিঃদ্রঃ এ প্রতিবেদনটি রিয়াদ থেকে বেন হাববার্ড, লন্ডন থেকে ডেভিড ডি, কির্কপ্যাট্রিক, ওয়াশিংটন থেকে পিটার বেকার ও এরিক স্মিথ এবং কায়রো থেকে ডেকান ওয়ালশ ও নুর ইউসেফ তৈরি করেছেন যা নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে অনুবাদ করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়