জাফর আহমদ: গার্মেন্ট মালিকরা শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে চায়-এ ব্যাপারে শ্রম মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি(বিজিএমইএ)। এ খবরে নড়েচড়ে বসেছে শ্রমিক নেতারা। তারা সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।
শ্রমিক নেতারা জানান, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন দমাতে নেতাদের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলায় জেলে পাঠানোর পর শ্রমিকদের মধ্যে ভয়, হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। মজুরি বৃদ্ধির জন্য মজুরি বোর্ড গঠনে মালিক কর্তৃক চিঠি দেওয়ার পর তা কিছুটা দূর হয়েছে। আশুলিয়া, গাজীপুর ও নারায়নগঞ্জের গার্মেন্ট শ্রমিক নেতাদের সাথে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রেীয় সহসভাপতি ও গাজীপুরের শ্রমিক নেতা জিয়াউল কবীর খোকন বলেন, এটা মালিকের চালাকি হতে পারে। গার্মেন্টস মালিকরা কখনো নিজের থেকে শ্রমিকের কল্যাণে কোন কথা বলেনি। করলেও তা হয়েছে দায় সারা ধরনের। এবারও লাম-সাম কিছু দিয়ে দায়িত্ব শেষ করতে পারে। বেসিক ১০ হাজার ও মোট ন্যুনতম মোট ১৬ হাজার টাকার জন্য শ্রমিকরা আন্দোলন করছে তা জোরদার করে দাবি আদায় করতে হবে। আমরা চাই মালিক পক্ষ থেকে মজুরি বৃদ্ধির যে ঘোষণা দিয়েছে তা যেন সত্যি হয়। তাহলেই মালিকদের আমরা ধন্যবাদ জানাবো।
মালিকের এই চিঠির মাধ্যমে প্রমাণ করে বেতন বৃদ্ধির জন্য শ্রমিকরা যে আন্দোলন চালিয়ে আসছে তা যৌক্তিক ছিল বলে করেন আশুলিয়ার শ্রমিক নেতা ও স্বাধীনবাংলা গার্মেন্ট শ্রমিক-কর্মচারিা ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগাঠনিক সম্পাদক আল কামরান। তিনি বলেন, একই সাথে বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনের জন্য শ্রমিকদের জেলে যেতে হয়েছিল-তা ছিল জুলুম। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হয়েছে সে জন্য মজুরি বৃদ্ধি করতে হবে-বিষয়টি এমন নয়। ২০১৩ সালে মজুরি বৃদ্ধি হয়েছিল-এখন ২০১৭ সাল শেষ হচ্ছে, যৌক্তিক কারণেই মজুরি বোর্ড গঠন করার কথা। তবে মালিকদের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন এই শ্রমিক নেতা।
বেতন বৃদ্ধির মালিকদের এই উদ্যোগ ব্যাপারে সন্দেহ আছে বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগাঠনিক সম্পদক ও গাজীপুরের শ্রমিক নেতা আকাশ আহমেদের। তিনি বলেন, অতীতে মালিকের পক্ষ থেকে বেতন বৃদ্ধির জন্য বোর্ড গঠনের পর দীর্ঘদিন মজুরি বৃদ্ধি করা হয়নি। এবার মালিকরা নিজের থেকে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির যে উদ্যোগ নিয়েছে এর পেছনে সন্দেহ আছে। তিনি বলেন, মালিকদের উদ্যোগকে তখন স্বাগত- যদি এই প্রস্তাব কালক্ষেপণের কৌশল না হয়।
মজুরি বৃদ্ধির এই উদ্যেগে সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাংগাঠনিক সম্পাদক ও সাভারের শ্রমিক নেতা সৌমিত্র কুমার। তিনি বলেন, মালিকদের এ উদ্যোগ যদি সত্য হয় তাহলে বুঝতে হবে তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাপ্ত মজুরিতে চলতে শ্রমিকদের বেগ পেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় মজুরি বৃদ্ধি সময়ের দাবি। এ দাবিতে আমরা অতীতেও আন্দোলন করেছি। এখনো অব্যাহত আছে। আশরা করি আমাদের দাবি মত ন্যুনতম মজুরি বৃদ্ধি করা হবে।
এ ব্যাপারে নারায়গঞ্জের শ্রমিক নেতা ও গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক এমএ শাহীন বলেন, মালিকরা শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়কে ন্যুনতম মজুরি বোর্ড গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে-এটা একটি ভাল দিক। তিনি বলেন, মালিকরা শ্রমিকদের বাস্তব দিক উপলব্ধি করে এটা করেছে। এতে তারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। আশা করি তারা শ্রমিকদের দাবির বিষয়টি মনে রাখবে।
আপনার মতামত লিখুন :