সাইদুর রহমান: কাতারের মন্ত্রিসভা একটি উন্মুক্ত মিডিয়া জোন প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছে। আর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটি টেকনিক্যাল বোর্ড গঠনেরও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। খবর খালিজ অনলাইন।
সৌদি জোটের অবরোধের পর থেকে এ ধরনের জোন প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেনি কাতার। তবে আকস্মিক এই সিদ্ধান্তকে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন যে, এ সিদ্ধান্ত সৌদি জোটের অন্যতম দাবি আল-জাজিরা চ্যানেল বন্ধের দাবির প্রতি কাতার সরকারের নতুন এবং উপযুক্ত জবাব।
ফ্রি মিডিয়া জোন প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত এসেছে কাতারের মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে। মন্ত্রিসভার প্রধান শেখ আব্দুল্লাহ বিন নাসের বিন খলিফা আল-সানির সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
গত মঙ্গলবারে কাতারের আমির শেখ তামিম মন্ত্রিসভার নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, অবরোধকে আমরা ভয় পাই না এবং আমাদেরকে সর্তক থাকতে হবে।
এর আগে কাতারের আমির আল-জাজিরা চ্যানেলের ২১ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে শরীক হয়ে অবরোধকারী সৌদি জোটকে কঠিন বার্তা দেন। আল-জাজিরা বন্ধের দাবির বিষয়ে সৌদি জোটের নিকট কাতার সরকারের সুস্পষ্ট বার্তা পৌছে দেন।
তাছাড়া গত মঙ্গলবারে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার ভাষণে কাতারের আমির পরোক্ষভাবে হুঁশিয়ারি দেন, কিছুতেই আল-জাজিরা চ্যানেল বন্ধ করা হবে না। আমেরিকার সি বি এস চ্যানেলের সাথে সাক্ষাৎকারেও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দেন।
উল্লেখ্য, কাতারভিত্তিক আল-জাজিরা চ্যানেল ১৯৯৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। ‘নিজের মত এবং অন্যের মত’ এ স্লোগান দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে, আরব বিশ্বের জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য। আরব বিশ্বের জনগণের অবস্থা প্রকাশের জন্যই মূলত চ্যানেলটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এবং প্রাচীন নাম আরব জাজিরা বা আরব উপদ্বীপ নাম থেকে চ্যানেলটির নামকরণ করা হয়। আল-জাজিরা অর্থ দ্বীপ।
ধীরে ধীরে আল-জাজিরা চ্যানেল সারা বিশ্বে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করে। আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিকভাবে একটি নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যমে পরিণত হয়।
তবে আল-জাজিরার খ্যাতি বেশি লাভ করে ২০১১ সালে আরব বসন্ত বা আরব স্প্রিং শুরু হলে। লিবিয়া গাদ্দাফি সরকারকে উৎখাত, মিসরের মুরসিকে উৎখাত এবং সিরিয়ার চলমান ঘটনাবলী সবার আগে বিশ্ববাসীর সামনে প্রকাশ করলে বিশ্বব্যাপী জনমত আল-জাজিরাকে খ্যাতির উচ্চশিখরে নিয়ে যায়।
কিন্তু আরব বসন্তুকে মেনে নেয় নি মধ্যপ্রাচ্যের ধনাঢ্য রাজতান্ত্রিক দেশগুলো। তাদের চক্ষুশূল হয় আল-জাজিরা ও তার সরকার কাতার।
এরই ধারাবাহিকতায় বিগত ৫ মাসে সৌদি জোট কাতার অবরোধ করে। জল, স্থল,আকাশ পথ বন্ধ করে দেয়। সমঝোতার জন্য আল-জাজিরা বন্ধের দাবি জানায়। সারা বিশ্বে কাতারের সুনাম নষ্ট করতে মিলিয়ন ডলার খরচ করে। কাতারি রিয়াল বা মুদ্রামান বিনষ্ট করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। কিন্তু সব ষড়যন্ত্রই নাকাম হয়। কাতার পূর্বের থেকে বেশি আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠে। এবং পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়। সূত্র : খালিজ অনলাইন, আল-জাজিরা
আপনার মতামত লিখুন :