শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর, ২০১৭, ১১:০৪ দুপুর
আপডেট : ১৫ নভেম্বর, ২০১৭, ১১:০৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কে হবেন ২২তম প্রধান বিচারপতি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বহুল আলোচিত এস কে সিনহা অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। এখন ২২তম প্রধান বিচারপতি কে হচ্ছেন, সেটা নিয়েই এখন সবার আগ্রহ।

আইন মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, আপাতত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাই দায়িত্বে থাকছেন। পূর্ণাঙ্গ প্রধান বিচারপতি নিয়োগে কিছুটা সময় লাগতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল মঙ্গলবার রাতে বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আরেকজন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত বর্তমানে যিনি দায়িত্বে আছেন, তিনিই থাকবেন। সেটা এক বছর হলেও উনিই দায়িত্বে থাকবেন।

আইনমন্ত্রীর এক বছর-সংক্রান্ত ব্যাখ্যার সঙ্গে ভিন্নমত দিয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ। তিনি গত রাতে বলেন, সংবিধানের ৯৪ অনুচ্ছেদে যে ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির’ কথা বলা আছে, তার অভাব প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হওয়ার পরে সাময়িকভাবে দায়িত্ব পালনরত জ্যেষ্ঠতম বিচারক দীর্ঘমেয়াদে পূরণ করতে পারেন না। প্রধান বিচারপতির যেখানে নিজের শপথ নেই, তিনি কী করে অন্য বিচারকদের শপথ দেবেন?

তাঁর কথায়, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন এবং সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শপথবাক্যও পাঠ করান। এরপর সেই প্রধান বিচারপতির পরামর্শে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ দেন। প্রধান বিচারপতি তাঁদের শপথও পড়ান।

কবে নিয়োগ পাবেন প্রধান বিচারপতি, সে বিষয়ে নিশ্চিত আভাস দিতে পারেননি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও। তিনি বলেছেন, এটা একান্তভাবেই রাষ্ট্রপতির ওপর নির্ভরশীল। কত দিনের মধ্যে নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সংবিধানে নির্দিষ্ট করা কিছু নেই।’

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পর এক মাসের বেশি ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর বিদেশে যান বিচারপতি এস কে সিনহা। ছুটি শেষে ৯ নভেম্বর কানাডা যাওয়ার পথে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্রটি জমা দেন তিনি। পরের দিন ১০ নভেম্বর পদত্যাগপত্রটি বঙ্গভবনে এসে পৌঁছায়।

গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করেন। সকালে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন। তখন তিনি বলেন, পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

পরে গতকাল সন্ধ্যায় আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক সেটি মন্ত্রণালয়ে পৌঁছার কথা নিশ্চিত করেন।

গত শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার পরও যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি নতুন একজনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না দিচ্ছেন, সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদবলে ততক্ষণ পর্যন্ত অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি থাকবেন মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। তখন তিনি আরও বলেছিলেন, পদ যদি শূন্যও হয়ে থাকে, রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রয়োগ করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কাজ হবে।

পাঁচজনের মধ্যে কে হচ্ছেন?

আপিল বিভাগে বর্তমানে পাঁচজন বিচারপতি রয়েছেন। জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা প্রথমে রয়েছেন। অপর চার বিচারপতি হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মো. ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। রাষ্ট্রপতি চাইলে তাঁদের মধ্য থেকে যে কাউকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিতে পারেন।

দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতির চাকরির বয়স আছে ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। এর আগে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্‌হাব মিয়ার আপিল বিভাগে আসা বিলম্বিত হয়েছিল বলে আলোচনা রয়েছে। তাঁর পরে থাকা বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের মেয়াদ আছে ২০২১ সাল পর্যন্ত। তিনি এবার প্রধান বিচারপতি না হলেও জ্যেষ্ঠতার ক্রম অনুযায়ী তাঁর সুযোগ থাকবে।

বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এর আগে দুবার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বাছাই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর পরে আছেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। তিনি অবসরে যাবেন ২০২৩ সালে। এরপরে আছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তাঁরও অবসরের তারিখ ২০২৩ সাল। আর বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার অবসরে যাবেন ২০২১ সালে।

একটি সরকারি প্রজ্ঞাপনে আপিল বিভাগে বিচারক সংখ্যা ১১ নির্দিষ্ট করা আছে। বর্তমানে আছেন ৫ জন। জরুরি নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখন মামলার চাপ আগের থেকে কম। আর বিচারকসংখ্যা কমবেশি হয়। আর ১১ জন হলো সর্বোচ্চ সীমা।

সংবিধান কী বলে?

সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তাঁর দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলে রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হলে ক্ষেত্রমতো অন্য কোনো ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত বা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করবেন।

প্রধান বিচারপতি নিয়োগ-সংক্রান্ত সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারক নিয়োগ দেবেন।

সংবিধানের ৯৪ অনুচ্ছেদ বলেছে, প্রধান বিচারপতি যিনি ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ নামে অভিহিত হবেন, তাঁকে ও অন্যান্য বিচারককে নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হবে। আপিল বিভাগ থেকে প্রধান বিচারপতিকে আলাদা করেছে ওই অনুচ্ছেদের ৩ উপদফা। সুতরাং দেশে প্রধান বিচারপতি না থাকলে একটি সাংবিধানিক

শূন্যতা চলবে, এ বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, শুধু একজন প্রধান বিচারপতিকে নিয়েই নয়, সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বিচারক তো সবাই আছেন। সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু অবশ্য মনে করেন, ৯৭ অনুচ্ছেদে যে শূন্যতার কারণে দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি আছেন, সেটা সাময়িক। তাই প্রধান বিচারপতির নিয়োগ যথাশিগগির হওয়াই প্রত্যাশিত।

এক যুগে ছয়বার জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন

এ পর্যন্ত দেশে ২১ জন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পেয়েছেন। এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে ছয়বার জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। এক যুগে (২০০৩-২০১৫) এসব ঘটনার মধ্যে বিএনপি সরকারের সময়ে দুটি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় একটি এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনবার ঘটেছে।

যদিও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘিত হয়নি। ২০০৩ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে এর শুরু। এ পর্যন্ত জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন হওয়াদের অন্তত দুজন পরে প্রধান বিচারপতি হন। বাকি দুজনের একজন আপিল বিভাগে আর না বসে অবসরে যান। আরেকজন নীরবে পদত্যাগ করেন। একজন বিচারপতি ফজলুল করিম চারবার জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের শিকার হলেও পঞ্চমবারে প্রধান বিচারপতি হন।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা এ বিষয়ে গতকাল যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে মতামত রেখেছেন। ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম কোনো মন্তব্যই করতে চাননি। সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুও জ্যেষ্ঠতার বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে জ্যেষ্ঠতার নীতি অনুসরণ প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এটা রাষ্ট্রপতির ওপর নির্ভর করছে। কোনো জ্যেষ্ঠতার নীতি নেই।

বিদায়ী বিচারপতি এস কে সিনহা ছিলেন দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি। ২০০৩ সালে বিএনপি প্রথম জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে। তারা দুজন বিচারপতিকে (এম এম রুহুল আমিন ও ফজলুল করিম) ডিঙিয়ে বিচারপতি কে এম হাসানকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়। পরে অবশ্য ওই দুজন প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন।

জ্যেষ্ঠতা অনুসরণ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে নীতিমালা নেই। তবে জ্যেষ্ঠতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তা বলতে পারব না। কারণ, এর আগেও জ্যেষ্ঠতার ব্যত্যয় ঘটেছে।’

বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘অতীতেও জ্যেষ্ঠতার ব্যত্যয় ঘটেছে। সাধারণ আইনজীবীরা মনে করেন, জ্যেষ্ঠতার ব্যত্যয় হওয়া উচিত নয়। একই সঙ্গে এ কথাও বলব যে প্রধান বিচারপতি নিয়োগে সরকারের যদি কোনো নীতি থাকে, তাহলে সরকার সে অনুযায়ী চলবে।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আপিল বিভাগের সবাই যোগ্য। যদি জ্যেষ্ঠতার ব্যত্যয় ঘটে, তাহলে আইনজীবী ও জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিএনপি আমলেও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা ঘটলেও তা নিন্দনীয় ছিল।

আওয়ামী লীগ আপিল বিভাগে প্রথম নিয়োগ শুরু করে ২০০৯ সালের মার্চে। বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান ও বিচারপতি মো. আবদুল আজিজকে ৮ মার্চে এবং বিচারপতি বিজন কুমার দাস, বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি এস কে সিনহাকে নিয়োগ দেওয়া হয় ১৬ জুলাই। এই প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতি এম এম রুহুল আমিন ২২ ডিসেম্বর ২০০৯ অবসরে যান। এরপর আওয়ামী লীগ প্রথম প্রধান বিচারপতি নিয়োগের সুযোগ পায়। এ সময় জ্যেষ্ঠতম ছিলেন বিচারপতি মো. ফজলুল করিম। তাঁকে ডিঙিয়ে বিচারপতি এম এম রুহুল আমিনকে প্রধান বিচারপতি করা হয়েছিল। বিচারপতি ফজলুল করিমকে প্রধান বিচারপতি করা হলে বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলামের প্রধান বিচারপতি হওয়ার পথ রুদ্ধ হবে বলে সরকার বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলামকে ২৩ ডিসেম্বর ২০০৯ প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়। ২০১০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি অবসরে গেলে পরদিন বিচারপতি ফজলুল করিম প্রধান বিচারপতি হন। তিনি অবসরে যান ২০১০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। পরবর্তী প্রধান বিচারপতি কে হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। ধারণা করা হয়েছিল, বিচারপতি এম এ মতিন প্রধান বিচারপতি হবেন। কারণ, তিনি প্রধান বিচারপতি হলেও পরের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি খায়রুল হকের প্রধান বিচারপতি হতে সমস্যা হতো না। কারণ, বিচারপতি মতিনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরেই অবসরের তারিখ ছিল। বিচারপতি খায়রুল হক ও বিচারপতি মতিনকে এরপর আর একসঙ্গে বেঞ্চে দেখা যায়নি।

বিচারপতি খায়রুল হক অবসরে যান ১৭ মে ২০১১। রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ১১ মে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেছিলেন। এ সময় আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারক ছিলেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান। তাঁর আপিল বিভাগের বিচারক হওয়া নিয়েও জল্পনা ছিল। কিন্তু ডিঙানোর পর ১২ মে তিনি পদত্যাগ করেন। তবে তিনি তাঁর পদত্যাগপত্রে কোনো কারণ দেখাননি।

ঘটনার পূর্বাপর

১০ নভেম্বর বিচারপতি এস কে সিনহা পদত্যাগের আগে ২ অক্টোবর এক মাস ছুটির কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর চিঠি দেন। এর মেয়াদ ছিল ১ নভেম্বর পর্যন্ত। ছুটিতে থাকা অবস্থাতেই ১৩ অক্টোবর বা কাছাকাছি সময়ে বিদেশে যাওয়ার এবং ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশে থাকার ইচ্ছা পোষণের বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করতে ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। গত ১০ অক্টোবর বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে পাঠানো ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় ১২ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে।

এর আগে ১ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর থেকেই এ নিয়ে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সংক্ষুব্ধ হয়। বিশেষ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারপন্থী আইনজীবীরা। তাঁরা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিও তোলেন।

লেখাটি প্রথম আলো থেকে নেয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়