শিরোনাম
◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক

প্রকাশিত : ১৪ নভেম্বর, ২০১৭, ০৯:১৫ সকাল
আপডেট : ১৪ নভেম্বর, ২০১৭, ০৯:১৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

একটি বিয়েতে রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা হামিদ

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম : একটি সাধারণ বিয়েতে অসাধারণ মানুষের উপস্থিতি বিয়ের মহিমাকেই লক্ষ গুণ উজ্জ্বল করে তুলেছিল। যখন নির্বাসনে ছিলাম তখন দিল্লির জে-১৮৮১ চিত্তরঞ্জন পার্কের এ সি সেনের বাড়িতে থাকতাম।

প্রায় ১২ বছর সেই বাড়ি নিজের বাড়ির মতোই ব্যবহার করেছি। বাংলাদেশের খুব কম নেতা-কর্মী ছিলেন যারা সে বাড়িতে যাননি, দু-এক বেলা খাননি। এমনকি প্রিয় বোন জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও স্বামী-সন্তানসহ দু-এক বার খেয়েছেন। সেই বাড়ির ভাইস্তা-ভাস্তির এক বান্ধবীর বিয়েতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি ভারতের মহীয়সী নারী প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী উপস্থিত। তার থেকে তিন-চার টেবিল দূরে বসেছিলাম। খানিক পর প্রধানমন্ত্রীর এক কর্মকর্তা এসে বললেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার টেবিলে আপনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ’ গিয়ে বসতেই ইন্দিরাজি বললেন, ‘টাইগার! তুমি এখানে?’ বললাম, আমার তো একই প্রশ্ন, আপনি এখানে? ইন্দিরাজি বললেন, ‘আমার অফিসের এক কর্মচারীর মেয়ের বিয়ে। মেয়েটি রাহুল-প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে পড়ে। তাই এসেছি। মেয়েটির বিয়েতে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন এটা হয়তো ওদের সারা জীবনের গৌরব হয়ে থাকবে। তাই এসেছি। কিন্তু তুমি কীভাবে এলে?’ বলেছিলাম, আমি চিত্তরঞ্জন পার্কের যে বাড়িতে থাকি তার ছেলেমেয়েও রাহুল-প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে পড়ে। সেই সুবাদে যার বিয়ে সে ওদের সহপাঠী বা সহপাঠিনী। তাই এসেছি। ইন্দিরাজি খুব খুশি হয়েছিলেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কার বান্ধবী এবং তার অফিসের সাধারণ এক কর্মচারীর মেয়ের বিয়েতে উপস্থিত হয়ে। আমি খুশি হয়েছিলাম তার চিন্তা-চেতনার কথা ভেবে।

সে রকমই এক বিয়েতে ১০ নভেম্বর শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে গিয়েছিলাম। মোস্তফার ছেলে মাহমুদুল কামাল রবিনের সঙ্গে ইতি রহমান মিমের বিয়ের দাওয়াতে। মোস্তফার বড় ভাই আবুল হোসেনের সঙ্গে প্রায় ২৫-৩০ বছরের পরিচয়, সেই সুবাদে মোস্তফার সঙ্গেও। তারা স্পিডবোটের ব্যবসা করে। বড় ভাই আবুল হোসেনের সঙ্গেই মোস্তফা ব্যবসায় হাত পাকিয়েছে। এখন আবুল হোসেনের চেয়ে অনেক বড় ব্যবসায়ী। আর মোস্তফার ছেলে মাহমুদুল কামাল রবিন বেশ সুদর্শন এবং ভালো লেখাপড়া করেছে। শরীর ভালো না, তাই বিয়েতে যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু তবু বাড়ি এসে দাওয়াত করায় একটা দায়বদ্ধতায় পড়েছিলাম। তাই গিয়েছিলাম। রাস্তায় ছিল প্রচণ্ড যানজট। মোহাম্মদপুর থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা লাগে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে পৌঁছতে। আমি খুব একটা কোনো ক্লাবে যাই না, তেমন চিনিও না। গুলশান ক্লাবে গেছি দু-তিন বার। প্রথমবার গিয়েছিলাম ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জি বিএনপির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খানের আমন্ত্রণে তার ভরতনাট্যম নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। প্রণবদা তখন খুব সম্ভবত ভারতের দেশরক্ষা মন্ত্রী। দিদি শুভ্রা মুখার্জি সেবার মোহাম্মদপুরের বাড়ি এসেছিলেন। এসেই রান্নাঘরে ঢুকে ইলিশ ভাজা খেয়ে অভিভূত হয়েছিলেন। তারপর আজীবন তিনি আমার স্ত্রীর ইলিশ ভাজার প্রশংসা করেছেন। ঢাকা ক্লাবে গিয়েছি বড়জোর দুবার। একবার স্বাধীনতার পরপর আর একবার এই তিন-চার বছর আগে কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্রের সঙ্গে কথা বলতে। তাই ক্লাব সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। গেটে নেমেই শুনলাম রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা হামিদ আসছেন। সেজন্য পুলিশের তৎপরতা একটু বেশি। দাওয়াতি ছিল উপচেপড়া। আমাদের বসার জায়গা ছিল তিন তলায় বিশেষ রুমে। এখন খুব একটা তেতলায় উঠি না। দোতলায় বাস করি তাই দোতলা পর্যন্তই অভ্যাস। তবু মারাত্মক ভিড় ঠেলে তেতলায় গিয়ে বসেছিলাম। বহুদিনের সোনার ব্যবসায়ী মিলন করকে দেখে অবাক হয়েছিলাম। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কোন পক্ষ— বর না কনে? মনে হলো উভয় পক্ষ। দাওয়াতিরা মূল চেয়ারে বসার জন্য জোরাজুরি করছিলেন। আমি জানতাম রাষ্ট্রপতির স্ত্রী আসছেন। চেয়ারটা তার জন্যই থাকা উচিত। শত জোরাজুরির পরও পাশের চেয়ারে বসেছিলাম। কত আর হবে ১০-১২ মিনিট পর তিনি এলেন। তার শরীর-স্বাস্থ্যের যে অবস্থা তাতে তেতলায় উঠতে অবশ্যই কষ্ট হয়েছে। কিন্তু তবু হাসিমুখে উঠেছিলেন। আমাকে দেখেই বললেন, ‘ভাই আপনি?’ আমিও জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনি যেভাবে যে কারণে আমিও অনেকটাই সেই একই কারণে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ভাটি অঞ্চলের মানুষ। ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম বর্ষাকালে শুধু পানি আর পানি। ২০-৫০ মাইল শুধু পানি আর পানি। বাড়িঘরগুলো শুধু একটু জেগে থাকে। জলযান ছাড়া চলাফেরার কোনো পথ নেই। সামর্থ্যবান এবং রাজনীতিবিদদের সবার জলযানের দরকার। শ্যালো ও স্পিডবোট দুই-ই তাদের থাকে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে স্পিডবোটের কারণেই পরিচয়, আমার সঙ্গেও অনেকটা তেমনই। তবে আমি ওদের আপনজনের মতোই মনে করি। এখন স্পিডবোটের সম্পর্কটা আর প্রথম পর্যায়ে নেই, জিনিসটা দ্বিতীয় পর্যায়ে চলে গেছে। রাষ্ট্রপতির স্ত্রী মূল চেয়ারে, আমি ডানপাশে, নারায়ণগঞ্জের এসপি বামপাশে, তারপর সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত এক ডিআইজি। রাষ্ট্রপতির স্ত্রীর পেছনে ছিল তিন মহিলা পুলিশ। তার একজন আবার আমার টাঙ্গাইল ভূঞাপুরের গোবিন্দাসীর মেয়ে। দাঁড়িয়ে না থেকে তাদের খেতে বলেছিলাম। আমার কথা তারা শোনেনি। ডিআইজি বলেছিলেন তার কথাও না। এমনকি ফার্স্ট লেডি বলার পরও তারা খাবারে অংশগ্রহণ করেনি।

রাষ্ট্রপতির স্ত্রীর মর্যাদা রাষ্ট্রপতির সমান। ইংরেজিতে তিনি ফার্স্ট লেডি, মহিলাদের প্রধান। এক অর্থে দেশের মহিলাপ্রধান। কিন্তু আমি বিস্মিত হয়েছি এসপি র্যাংকের একজন পুলিশ অফিসার সামাজিক দাওয়াতে ফার্স্ট লেডির একেবারে পাশের সিটে বসায়। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে সরকারি কর্মচারীরা অত বড় পদাধিকারীর পাশে কখনো বসেন কিনা আমার জানা নেই। বিশেষ করে কোনো শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য রাষ্ট্রপতি বা রাষ্ট্রপতির স্ত্রীর পাশে বসা কল্পনাতীত। জানি না, আমাদের দেশে কেন এমন হয়, সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তারা কেন নিজেদের এত ক্ষমতাবান ভাবেন। রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা হামিদকে খুব বেশি কাছ থেকে দেখিনি। কিন্তু তিনি আর দশজন রাজনৈতিক নেতার স্ত্রীর মতোই। যখন আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি ছিলেন না, তখনো তাকে দেখেছি তেমন খুব একটা পরিবর্তন হননি। আমাদের মতোই আছেন। আমার স্ত্রী, ছেলেমেয়ে কেমন আছে খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করছিলেন। একসময় বলেছিলাম, আমরা চলে যাওয়ার পর একজন আরেকজনকে আর খুব একটা জিজ্ঞাসা করবে না, খোঁজখবর করবে না। সবাই চলবে যার যার মতো। আমি অনেক বছর মাংস খাই না। বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার পর ২৮ বছর মাংস খাওয়া দূরের কথা মাংসের পাত্রও স্পর্শ করিনি। এখন দু-এক বার মাংস যে মুখে দিই না তা নয়, তবে এখন আর মাংস ভালো লাগে না। তাই নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের কাচ্চি বিরিয়ানি খাওয়া হয়নি। তারা ভাতের ব্যবস্থা করতে ছোটাছুটি করছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠেনি। তবে মোস্তফা ও আবুল হোসেনের আন্তরিকতা আমায় মুগ্ধ করেছে। দোয়া করেছি মাহমুদুল কামাল রবিন এবং ইতি রহমান মিমের নতুন জীবন সুখ-শান্তি ও নিরাপদ হোক।

বর্তমানে রাজনীতির সব থেকে তাজা খবর জাসদের হাসানুল হক ইনু বলেছেন, তারা না থাকলে হাজার বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতার কাছে যেতে পারবে না। রাস্তায় ভেউ ভেউ করতে হবে। জানি না তার কথা কতটা যথার্থ। তবে অনেকেই মনে করেন আওয়ামী লীগের ছায়ায় না থাকলে জীবনে কখনো হাসানুল হক ইনু সংসদের কপাট দেখতেন না। তাই এ নিয়ে আমাদের মাথাব্যথার কারণ নেই। সময়ই আসলটা নিরূপণ করবে। সময় বড় নিয়ামক শক্তি, সময়ের চেয়ে শক্তিশালী কিছু নেই।

একই রকম আলোচনা প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগ নিয়ে। কেউ বলছেন বোঝা দূর হলো, কেউ বলছেন এটা খুবই খারাপ নজির। কারও কথাই মিথ্যা নয়। যাদের কাছে প্রধান বিচারপতি বোঝা ছিলেন তাদের বোঝা কমেছে এটা তো অবশ্যই সত্য। আবার এও সত্য বাংলাদেশে কোনো প্রধান বিচারপতি কখনো পদত্যাগ করেননি, কোনো প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে এত তর্ক-বিতর্কও হয়নি। আর বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ কখনো প্রধান বিচারপতি হননি। বিষয়গুলো নিশ্চয়ই পরবর্তীতে অনেক দিন আলোচিত হবে এবং আপন গতিতে ইতিহাসের পাতায় যার যার স্থান করে নেবে।

দেশে স্বতঃস্ফূর্ত রাজনৈতিক আবহাওয়া বিরাজ করছে না। সব জায়গাতেই একটা টানাপড়েন লেগেই আছে। প্রায় বছর দুই পর প্রধান বিরোধী দল বিএনপি রাজধানী শহরে প্রকাশ্য জনসভা করার সুযোগ পেয়েছে। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও সভায় যথেষ্ট লোকসমাগম হয়েছে। যে কোনো কারণেই হোক চ্যানেলগুলো সরাসরি প্রচার করেনি। রাস্তাঘাটে পর্যাপ্ত গাড়ি-ঘোড়া ছিল না। তার পরও লোকসমাগম নেহায়েত ফেলে দেওয়ার মতো নয়। বরং উল্লেখ করার মতোই হয়েছে। বিরোধী দলের নেত্রী প্রায় এক ঘণ্টা বক্তব্য দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের লোকজন খুশি না হলেও বিএনপির লোকজনের মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন দেখার কথা ভবিষ্যতে কী হয়। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন করবে না, সরকার বলছে সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো পথ নেই। আর বিএনপি দেশের মানুষের কাছে প্রধান বিরোধী দল হলেও সরকার কোনোভাবেই তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবে না এ ব্যাপারে তারা পণ করে আছে।

তাই সমাধান কোন পথে আসবে তা দেশবাসীর কাছে এখনো পরিষ্কার নয়। কোনো জিনিস নিয়ে মানুষের স্পষ্ট ধারণা না থাকলে যে অশান্তি এবং অস্বস্তিতে থাকতে হয় দেশের মানুষ তেমনটাই আছে। ওদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতেও তেমন উন্নতি নেই। বরং অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছি। রোহিঙ্গা ইস্যু দীর্ঘস্থায়ী হলে কোনোক্রমেই আমাদের মঙ্গল হবে না, অমঙ্গল হবে অনেক বেশি। তাই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে যে যাই বলুক জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই।

লেখক : রাজনীতিক।

সূত্র : বিডি প্রতিদিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়