অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান : এইতো গেল ক’দিন আগে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিষয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তার মতের সাথে দেশের বেশিরভাগ মানুষই সহমত পোষণ করবেন। সত্যিই কিন্তু একটা উৎকণ্ঠার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতা বোধ প্রতিটি মানুষের মাঝে কাজ করতে শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হারিয়ে যাচ্ছে, সাংবাদিক হারিয়ে যাচ্ছে, ব্যবসায়ী হারিয়ে যাচ্ছে, এভাবে প্রতিদিন নামের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, অপরাধীরা হারিয়ে যাচ্ছে না। এটা মর্মব্যথা। কাজেই অপরাধীরাও হারিয়ে যাক, তা কখনোই কাম্য নয়। একটা সভ্য সমাজে যেখানে ন্যূনতম আইনের শাসন রয়েছে, যেখানে গণতান্ত্রিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে প্রত্যেকটি নাগরিকের নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হয় এবং সেটি নিশ্চিত করতে হয়। যদি কেউ সরকারকে বিপদে ফেলতে এবং বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার লক্ষ্যে আত্মগোপন করে থাকে, তাহলে এ ধরনের আচরণ অপরাধমূলক কর্মকা- হিসেবে বিবেচিত হবে। সেই অপরাধীকে সনাক্ত করার মাধ্যমে অবস্থান প্রকাশ করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। সুতরাং সরকার বা পুলিশ বিভাগকে বিপদে ফেলতে অথবা তাদের সুনাম ক্ষুণœ করতে কিছু মানুষ ইচ্ছা করে আত্মগোপনে যাচ্ছে, এমন কথা বললেই তো পার পাওয়া যাচ্ছে না। কারা করছে তাদেরকে ধরে নিয়ে এসে আইনের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রমাণ করা হোক। তাহলেই মানুষ বিশ্বাস করবে। নতুবা শুধুমাত্র বিবৃতি দিয়েই মানুষকে বিশ্বাস করানো যায় না। কেননা, একবিংশ শতাব্দির মানুষ কিন্তু আর বোকা মানুষ নয়। অফিসিয়ালি সবাই শিক্ষিত না হতে পারে কিন্তু এতটুকু বোঝার মতো ক্ষমতা সবার আছে। কোনটা ধামা-চাপা দেওয়ার কথা আর কোনটা যৌক্তিক কথা, এই পার্থক্য নির্ণয় করার ক্ষমতা সবার আছে। সবচেয়ে বড় কথা, যারা হারিয়ে যাচ্ছেন তাদেরকে যদি খুঁজে বের করে না আনা হয়, যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিখোঁজদের যদি সবার সামনে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এই দায় রাষ্ট্রের উপর থেকে যাবে। এই দায় রাষ্ট্রের কাঁধেই বর্তায় এবং এই দায় রাষ্ট্রকে কাঁদে নিয়ে বয়ে বেড়াতে হবে। তবে এই দোষ থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার একটি মাত্র উপায় আছে। সেটি হচ্ছে , একদম স্বাক্ষ-প্রমাণ সহকারে নিখোঁজ ব্যক্তিদের অবস্থান সম্পর্কে সকলকে জানিয়ে দেওয়া। কেননা প্রতিটি মানুষের মাঝে যদি এই নিরাপত্তাহীনতা থাকে, তাহলে কিন্তু সাধারণ মানুষ এবং সরকারের মাঝে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়। যা কখনোই একটা গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য কাম্য নয়। কাজেই সাধারণ মানুষের মধ্যে যে নিরাপত্তাহীনতা বা ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা কাজের মাধ্যমে দূর করতে হবে। শুধু কথা দিয়ে ধামা চাপা দিয়ে রাখা যাবে না।
পরিচিতি : সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় মানবাধীকার কমিশন
মতামত গ্রহণ : লিয়ন মীর
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
আপনার মতামত লিখুন :