আহমেদ সুমন: সৌদি আরবের কয়েক দশকের সুপরিকল্পিত দুর্নীতি এবং তসরুফের বিরুদ্ধে ৩২ বছর বয়সী সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দুর্নীতি দমন অভিযানকে সাধুবাদ জানাচ্ছে দেশটি অনেক তরুণ। অন্যদিকে অনেকের মধ্যে এই অভিযান নিয়ে সংশয়ও আছে।
অনেক তরুণই মনে করছেন, মোহাম্মদ বিন সালমানের এই উদ্যোগ দেশটি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অন্যদিকে অনেকেই বলছেন, এই উদ্যোগ কেবলমাত্র যুবরাজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার কৌশলমাত্র। মোহাম্মদ বিন সালমান নিজেও একজন বড় দুর্নীতিবাজ।
সৌদি আরবের এ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সৌদ আল মজেবের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা রেডিওর সংবাদের বলা হয়েছে, সম্প্রতি কয়েক দশকে সুপরিকল্পিত দুর্নীতি এবং তসরুফের কারণে দেশটি অন্তত ১০ হাজার কোটি ডলার হারিয়েছে।
সৌদ আরব রক্ষণশীল দেশ। তবে মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতায় এসে সেসব জায়গায় সংস্কার আনার চেষ্টা করছেন। ফলে অনেক তরুণই এই উদ্যোগকে ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছেন।
রিয়াদের বাসিন্দা আলী সোবহান। তিনি ওয়াশিংটন ডিসি’তে পড়াশোনা করছেন। এই নতুন উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, বন্ধুদের কাছ থেকে, টুইটারের খবরের মাধ্যমে জানতে পারছি যুবরাজের এই উদ্যোগে সাধারণ মানুষ বেশ খুশি। এরইমধ্যে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, মনে করা হতো তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। সেই দিন শেষ এবং কেউই আইনের বাইরে না- এই অভিযান সেই বার্তাই দিচ্ছে। দুর্নীতি এবং অর্থনীতির ক্ষতি এখন আর সহ্য করা হবে না।
ক্ষমতায় এসে মোহাম্মদ বিন সালমান তার ভিশন- ২০৩০ বাস্তবায়নের কাজে নেমেছেন। দেশের তেল নির্ভর অর্থনীতিতে বদল আনার পরিকল্পনা রয়েছে তার। মরুভূমিতে তিনি মেগাসিটি তৈরি করতে চান এবং দেশ থেকে দুর্নীতি দমন করতে চান। এই অভিযানের ফলে যারা অন্যায় করতো তারা আর অন্যায় করতে সাহস পাবে না বলে মনে করেন অনেকে।
দেশটির একজন নারী বলেন, এই অভিযান ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে। অন্যায়, অনাচার আর ্অসততার কারণে আমাদের দেশ যেভাবে পিছিয়ে পড়ছে সেসব থেকে ভবিষ্যতে দেশ মুক্ত হবে।
তবে এই উদ্যোগ নিয়ে ইতিবাচক মতামত পাওয়া গেলেও অনলাইনে এর বিপরীত মন্তব্যও চোখে পড়বে। অনলাইনে ব্যঙ্গ চিত্র এঁকে বলাও হচ্ছে যে, এটি মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার কৌশলমাত্র। তাকে নিয়ে কাটুন আঁকা হয়েছে। কাটুনে দেখানো হচ্ছে যে, সালমান তার কাজিনদের খাঁচায় পুরে রেখে তিনি হাসছেন।
যেহেতু অনেক সমালোচকদের এরইমধ্যে গেপ্তার করা হয়েছে তাই প্রকাশ্যে কেউ সমালোচনায় আসছে না। তাই ম্যাসেজিং বোর্ড ব্যবহার করে যুবরাজের সিদ্ধান্ত নিয়ে অনলাইনে চ্যাট করা হয় মুজাহিদ নামের একজনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, এই অভিযান দুর্নীতির বিরুদ্ধে নয়। যুবরাজ নিজেই সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ। শিক্ষিত, রজনীতি সচেতন মানুষ চায় ক্ষমতার অংশ হতে, চায় দায়বদ্ধতা এবং রাজনৈতিক সংস্কার। কিন্তু তিনি উল্টো কাজ করছেন। স্বাধীনতা খর্ব করছেন এবং সংস্কারপন্থীদের গ্রেপ্তার করছেন। তরুণ প্রজন্ম চাকরি চায়, বাসস্থান চায়। কিন্তু এসব করে বেকারত্ব আরও বেশি বেড়ে যাবে। তার খামখেয়ালী নীতি নিয়ে ব্যবসায়ীরা খুবই উদ্বিগ্ন।
সম্প্রতি রক্ষণশীল সৌদি আরবে বেশ কিছু পরির্তন আনা হয়েছে। নারীদের ওপর কঠোর বিধি-নিষেধ শিথীল করা হয়েছে। অনেক সৌদি তরুণ যুবরাজের উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও এরপরেও দেশ আসলে কোনদিকে এগোচ্ছে তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
সূত্র- বিবিসি বাংলা।
আপনার মতামত লিখুন :