শিরোনাম
◈ বিশৃঙ্খলার পথ এড়াতে শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী ◈ তাপপ্রবাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা ◈ সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৮৪০ টাকা ◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও) ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু

প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর, ২০১৭, ০১:১৮ রাত
আপডেট : ১০ নভেম্বর, ২০১৭, ০১:১৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভয়ঙ্কর ঝুঁকিপূর্ণ শক্তির খেলায় মেতেছেন সৌদি যুবরাজ

রাশিদ রিয়াজ : বত্রিশ বছরের সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান মুখে বলছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদের কথা। গত মাসেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা ও জামাতা জ্যারেড কুশনার গোপনে সৌদি আরব সফর করেন। ইহুদি হওয়ার কারণে জ্যারেড কুশনারের গ্রহণযোগ্যতা ইসরায়েলে এক শীর্ষ অবস্থানে। এবং গত মাসেই আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খবর রটে যায় সৌদি প্রিন্স গোপনে ইসরায়েল সফর করেছেন। গত সপ্তাহেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বেলফোর দিবসের শতবর্ষপূর্তিতে ব্রিটেন সফরে যেয়ে অভিযোগ তোলেন ইরান ইসরায়েল ও মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে জোট গঠনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি সৌদি আরবকে পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলের পরিবর্তে ইরানের বন্ধু হওয়ার জন্যে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্য সংকট দূর হবে। রুহানি এমন এক সময়ে এ কথা বললেন, যখন ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর দেশটিতে বৃটিশ অস্ত্র বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে ৫’শ গুণ।

প্রখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক ডেভিড ইগনেশাস ওয়াশিংটন পোস্টে এক প্রতিবেদনে বলেছেন, সৌদি অভিযানের পেছনে জ্যারেড কুশনার কিভাবে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন। কুশনার ছাড়াও তার স্ত্রী ও ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইভানকা ট্রাম্প ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ সালমানের মিত্র ও সহযোগী। ডেভিড বলছেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর কুশনার এ নিয়ে তৃতীয়বার সৌদি আরব সফর করলেন। এবার সৌদি রাজপ্রাসাদে ভোর ৪টা পর্যন্ত কয়েক রাত্রি ধরে দুই প্রিন্স একান্তে শলাপরামর্শ করেন, পরিকল্পনা তৈরি করেন। নিউ ইয়র্কের ধনাঢ্য রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী কুশনারকেও প্রিন্স হিসেবে অভিহিত করেছেন ডেভিড।

ট্রাম্পের ঘনিষ্ট মহলে ইতিমধ্যে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান যিনি এমবিএস হিসেবে পরিচিত এবং তিনি বেশ শক্তিশালী এক স্থান করে নিয়েছে। তাদের এ সম্পর্ক কোটিপতি ব্যবসায়ী ও জনগণের অবস্থানের বিরুদ্ধে। আরব দেশগুলোর অধিকাংশ বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকরা এমবিএসের এধরনের ঝটিকা অভিযানে সিনিয়র প্রিন্স, মন্ত্রী ও প্রভাশালী ব্যবসায়ীদের আটককে বিস্ময়কর, সাহসী এবং ক্ষমতার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

সৌদি আরবের প্রভাবশালী এক ব্যবসায়ী নেতা ডেভিসকে বলেন, এমবিএস যা করছেন, তা হচ্ছে সৌদি রাজতন্ত্রে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ কায়েমের মাধ্যমে ভিন্ন এক আবহে নিয়ে যাওয়া। এমবিএস নতুন এক সৌদি আরব সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। নারীরা গাড়ি চালাতে পারবেন, ধর্মীয় পুলিশের কার্যক্রম শিথিল হবে। তার এসব সংস্কার আগ্রাসী ও বিতর্কিত। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি সিনিয়র প্রিন্সদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে রক্ষণশীল ধর্মীয় নেতাদেরকেও। এমবিএসকে যিনি কঠিনভাবে সমর্থন করছেন এমন এক শীর্ষ নির্বাহীও বলেছেন, তাকে অনেক যুদ্ধ ক্ষেত্রে একা ও একই সময়ে লড়তে হচ্ছে। ন্যাশনাল গার্ড সৌদি রাজপরিবারগুলোর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করে। এ ভারসাম্য বিনষ্ট করা হয়েছে। ক্রাউন প্রিন্স দানবের মত একা লড়ছেন। ন্যাশনাল গার্ডের প্রধান ও সাবেক বাদশা আব্দুল্লাহর পুত্র প্রিন্স মিতেব বিন আব্দুল্লাহকে গ্রেফতার করেছেন যিনি ঐতিহাসিকভাবে সৌদি গোত্রগুলোর শক্তিকেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন। বাদশাহ ফাহাদের পুত্র প্রিন্স আব্দুল আজিক বিন ফাহদকেও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে যিনি কট্টর ইসরায়েল বিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যদিও অস্বীকার করা হচ্ছে তিনি মারা যাননি।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে সুপরিকল্পিতভাবে এমবিএস সৌদি আরবের ঐতিহ্যগত শাসন ব্যবস্থাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। রাজপরিবারগুলোর মধ্যে কখনো ধীরে কখনো তাৎক্ষণিক এক ঝটিকা সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এই তরুণ ক্রাউন প্রিন্স নির্বাহী ক্ষমতা কুক্ষিগত করছেন, তার ইচ্ছাকে আগ্রাসীভাবে অন্যদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন।

এমবিএস বলছেন দুর্নীতি সঙ্গে জড়িত থাকলে কেউ রেহাই পাবে না। সে প্রিন্সই হোক আর মন্ত্রীই হোক। দুর্নীতি দমন কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি। এ কমিটিন সম্পদ বাজেয়াপ্ত বা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপের শক্তি রাখে। সৌদির তরুণরা কি পছন্দ করে সেদিকেও নজর রয়েছে ক্রাউন প্রিন্সের। সৌদি আরব প্রজম্মের পর প্রজন্ম ধরে দুর্নীতিতে নিপীড়িত হয়েছে। রাজকোষ যথেচ্ছারভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, এখন ক্রাউন প্রিন্স চাচ্ছেন তরুণ প্রজন্মকে উন্নয়নের স্বাদ পাইয়ে দিতে, অবক্ষয়ের নাগাল টেনে ধরতে। এবং সংস্কারের নামে তিনি যে ঢালাও অভিযান শুরু করেছেন তাতে এত বেশি প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আটকে যাচ্ছেন তাতে তা কোথায় যেয়ে ঠেকে তা বলা মুস্কিল। সৌদির কিংডম হোল্ডিং কোম্পানির প্রধান প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালাল ছাড়াও মিডিল ইস্ট ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের সহ প্রতিষ্ঠাতা ওয়ালিদ আল-ইব্রাহিম, প্রখ্যাত সৌদি ও বিশ্বে বিভিন্ন স্থানে বিনিয়োগকারী হিসেবে সুপরিচিত সালেহ কামাল, অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী আদেল ফাকিহ যিনি ক্রাউন প্রিন্সের সংস্কার কার্যক্রমের অন্যতম পুরোধা, এদের কেউ রেহাই পাচ্ছেন না।

কার্যত এমবিএস সাবেক সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহর ক্ষমতার বৃত্ত ভাঙ্গছেন যিনি ২০১৫ সালে মারা যান। একই সঙ্গে প্রিন্স মিতেব, প্রিন্স তুরকি বিন আব্দুল্লাহ যিনি রিয়াদের সাবেক গভর্নরের পুত্র, গ্রেফতার করেছেন খালেদ আল-তুওয়াইজিরি যিনি বাদশাহ আব্দুল্লাহর রয়াল কোর্টের প্রধান এবং কার্যত অদৃশ্য প্রধানমন্ত্রীর সমকক্ষ ছিলেন। গত জুনে এমবিএসের পিতা বর্তমান বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ ৮১ বছর বয়সে তার পুত্রের সফলতা অর্জনের পথ খুলে দেন। ক্রাউন প্রিন্স নায়েফকে সরিয়ে বাদশাহ সালমান তার পুত্রকে ক্রাউন প্রিন্স করেন। বাদশাহ অনেকটা চীনের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অনুরুপ পদ্ধতি অনুসরণ করছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চালিয়ে দেশটির শাসকদের যৌথ নেতৃত্ব শৈলী পরিবর্তন করে পার্টি ও সামরিক নেতাদের মধ্যে প্রজন্মেও প্রতিস্থাপন ঘটাতে অভ্যস্ত। এবিএস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মডেল হয়ে সৌদি ট্রাম্পে পরিণত হচ্ছেন নাকি ৫০০ বিলিয়ন ডলারের নতুন নিওম প্রকল্পে ইসরায়েলকে বিনিয়োগের সুযোগ করে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে আরেক ফিলিস্তিন পর্ব শুরু করতে চাচ্ছেন তা বুঝে উঠতে আরো কিছু দিন হয়ত অপেক্ষা করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়