শিরোনাম
◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি

প্রকাশিত : ০৯ নভেম্বর, ২০১৭, ০৭:২৮ সকাল
আপডেট : ০৯ নভেম্বর, ২০১৭, ০৭:২৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এখনও রহস্যের জালে ঘেরা গুম-নিখোঁজ

শিমুল : অপহরণ, গুম ও নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা থামছেই না। বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আর ফিরছেন না, নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছেন। রাতের পাশাপাশি দিনদুপুরেও অপহরণের শিকার হচ্ছেন অনেকে। বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটছে কালো কাচের সাদা মাইক্রোবাসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তাদের তুলে নেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ নিখোঁজের তালিকায় নাম এসেছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মুবাশ্বার হাসান সিজারের। মঙ্গলবার বিকাল থেকে তিনি নিখোঁজ। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৫২ জন গুম-অপহরণের শিকার হয়েছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ফিরে এসেছেন আইএফআইসি ব্যাংকের কর্মকর্তা শামীম আহমেদ। অপহরণের পাঁচ দিন পর দুর্বৃত্তরা তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় মতিঝিল থানা এলাকায় ফেলে যায়। তাকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত কেউ এখনও ধরা পড়েনি। ফলে কারা তাকে অপহরণ করল তা অজানাই রয়ে গেছে। গত ২৬ আগস্ট নিখোঁজ হন কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্র ইশরাফ আহমেদ ফাহিম (২০), এবিএন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সাদাত আহমেদ ও সাংবাদিক উৎপল দাস। তাদের কেউই এখনো ফেরেননি।

গত আগস্ট মাসে নয়াপল্টন থেকে সাভারের আমিনবাজারের বাসার উদ্দেশে রওনা হয়ে নিখোঁজ হন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এমএম আমিনুর রহমান। গতকাল পর্যন্ত তার হদিস মেলেনি। ঘটনার ব্যাপারে পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বলেন, আমিনুর না ফেরায় আমরা উদ্বিগ্ন। তার পরিবারও। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই তাকে খুঁজে বের করা হোক। আমাদের সন্দেহ কোনো কর্তৃপক্ষ আমিনুর রহমানকে অপহরণ করেছে।

প্রতি মাসেই রাজধানী থেকে কোনো না কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বলেন, অনেকে ইচ্ছা করেই আত্মগোপনে গিয়ে সরকারকে বিব্রত করছে। তবে যাই ঘটুক না কেন, নিখোঁজরা তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন বলে আশা করছি। আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী কাজ করছে। আশা করি, তাদের ফিরিয়ে দিতে পারব। আমি সবসময় বলি, মিসিং হওয়ার পেছনে কিছু কারণ থাকে। অনেকে ইচ্ছা করে মিসিং হয়ে যাচ্ছে বা আত্মগোপনে গিয়ে আমাদের বিব্রত করছে। এ ধরনের মিসিংয়ের সুরাহা করা গোয়েন্দাদের জন্য একটু কষ্টকর। তারপরও আশা করি, তাদের ফিরিয়ে আনতে পারব।

মানবাধিকার কর্মীর নূর খান লিটন বলেন, একের পর এক ঘটনা ঘটছে। রাষ্ট্র দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আর এ পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। আইনের ঊর্ধ্বে থেকে যাচ্ছে। এতে জনগণের মধ্যে এক ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও সন্দেহ দেখা যাচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে প্রশিক্ষিত বাহিনীর কোনো অংশের সংশ্লিষ্টতা থাকায় সন্দেহ পোষণ করছে। তাই অবিলম্বে একটা আস্থাভাজন, নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করে গুম, অপহরণ ও নিখোঁজের সব ঘটনার তদন্ত এবং যারা এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

তিনি বলেন, ভুলে গেলে চলবে না, নারায়ণগঞ্জে ৭ জন মানুষের জীবন একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীর একটি অংশের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল। সুতরাং জনমনে একটি ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। তদন্ত করে কার্যত, দৃশ্যত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে এটি দিনে দিনে বুমেরাং হয়ে যারা এ ঘটনার আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন তারাও একদিন আক্রান্ত হবেন।

সর্বশেষ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মুবাশ্বার হাসান সিজারের খোঁজ মিলছে না। মঙ্গলবার বিকাল থেকে নিখোঁজের ঘটনায় খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে তার পরিবার।

সিজারের বাবা মোতাহার হোসেন বলেন, মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় তিনি সিজারকে কল করলে সে ধরতে পারেনি। ঘণ্টাখানেক পর কল ব্যাক করে বলে, জাতিসংঘের একটি বৈঠকে যাচ্ছে। রাতে বাসায় ফিরবে। কিন্তু রাত ৯টা বেজে যাওয়ার পর ছেলে বাসায় না ফিরায় তিনি কল করেন। তখন তার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। সেই থেকে গতকাল পর্যন্ত নম্বরটি বন্ধ রয়েছে।
নিখোঁজের চাচা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র গবেষণা ফেলো মঞ্জুর হোসেন ফেসবুক স্ট্যাটাসে সিজারের নিখোঁজের বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি মঙ্গলবার রাত ১১টা ৫৪ মিনিটে সিজারের ও তার মেয়ের একটি যৌথ ছবি পোস্ট করেন। ছবির ক্যাপশনে সিজারকে খুঁজে না পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন।

মঞ্জুর হোসেন বলেন, গত ২৫ অক্টোবর কেউ একজন ছাত্র পরিচয় দিয়ে সিজারকে খুঁজতে বাসায় এসেছিল। সিজার তখন ছিলেন না। এরপর থেকেই সিজার নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। পরে সিজার নিরাপত্তার জন্য বাসায় সিসি ক্যামেরাও স্থাপন করেন।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা বেলাল আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার মুবাশ্বার হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন। ওইদিন বিকাল থেকে তার ফোন বন্ধ রয়েছে।

সিজার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এক সময় সাংবাদিকতাও করেছেন। পরে যুক্তরাজ্যে মাস্টার্স ও অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি করেন।

গত ২৬ আগস্ট ধানম-ির শঙ্কর এলাকার খুশবু রেস্টুরেন্ট থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়ে অপহরণ হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফাহিম। ৩ সেপ্টেম্বর তার আবার কানাডায় ফেরার কথা ছিল। গত ১৬ জুন ছুটিতে দেশে ফেরেন এই শিক্ষার্থী। ২৬ আগস্ট ধানম-ি শঙ্করের স্টার কাবাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে বসে অপর চার বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দেন। স্টার কাবাব থেকে রাতে ওই এলাকার খুশবু রেস্টুরেন্টে যান ওই পাঁচজন। এরপর বন্ধুরা যে যার মতো করে বাসায় ফিরে যান। কিন্তু খোঁজ মেলেনি ফাহিমের।

ফাহিমের বাবা জামাল উদ্দিন আহমেদ গতকাল সিঙ্গাপুর থেকে টেলিফোনে জানান, খুশবু রেস্টুরেন্টে বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া অবস্থায় ফাহিমকে তার মা ফোন দেয়। বাসায় কখন ফিরবে জানতে চায় তার মা। ওই সময় ফাহিম বলে, মা আমি আসছি। মায়ের সঙ্গে ওই কথাই তার শেষ কথা। ফাহিম আর ফেরেনি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ।

জামাল উদ্দিন জানান, ছেলের সন্ধান পেতে তিনি র‌্যাব, পুলিশসহ সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দারস্থ হন। কিন্তু কোনো সংস্থা ফাহিমের খোঁজ দিতে পারেনি। ঘটনার ব্যাপারে ধানম-ি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

গত ২২ আগস্ট বিকালে বিমানবন্দর সড়কের বনানী ফ্লাইওভারের নিচে সাদা পোশাকের কয়েকজন একটি ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে এর আরোহী বিএনপি নেতা ও এবিএন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সাদাত আহমেদকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। গতকাল পর্যন্ত তার খোঁজ মেলেনি।

সৈয়দ সাদাত আহমেদের এক সহকর্মী নাম প্রকাশ না করে বলেন, প্রতিদিনই অফিসে তাকে নিয়ে আলোচনা হয়। একজন মানুষ এতদিন কীভাবে নিখোঁজ থাকে। তিনি জীবিত আছেন নাকি মারা গেছেন তাও জানি না আমরা। আমাদের চাওয়া দ্রুত যেন তার খোঁজ মেলে।

গত ১০ অক্টোবর নিখোঁজ হন অনলাইন নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিম ডটকমের সাংবাদিক উৎপল দাস। তার নিখোঁজের ঘটনায় মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তার বাবা চিত্ত রঞ্জন দাস। গতকাল পর্যন্ত এ সাংবাদিকের কোনো হদিস মেলেনি।

মতিঝিল থানার ওসি মো. ওমর ফারুক বলেন, সাংবাদিক উৎপল নিখোঁজের ঘটনায় পৃথক ২টি জিডি হয়েছে। ওই জিডির সূত্র ধরে তার খোঁজ মেলাতে জোর চেষ্টা চলছে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সারা দেশে ৫২ জন গুম-অপহরণের শিকার হয়েছেন।

সূত্র : আমাদের সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়