শিরোনাম
◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত

প্রকাশিত : ০৮ নভেম্বর, ২০১৭, ০৮:০৮ সকাল
আপডেট : ০৮ নভেম্বর, ২০১৭, ০৮:০৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে নারীর আয়-রোজগার বেশি

জাহাঙ্গীর শাহ: ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের নারীরা বেশি রোজগার করেন। ভারতের নারীদের চেয়ে ৮ শতাংশের বেশি আয় করেন তাঁরা। আর পাকিস্তানের নারীদের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি আয় তাঁদের।

ক্রয় সক্ষমতা অনুসারে (পিপিপি) বাংলাদেশের নারীদের গড় আয় বছরে এখন ২ হাজার ৩৭৯ ডলার বা ১ লাখ ৯২ হাজার ৬৯৯ টাকা। সেখানে ভারতের নারীদের আয় বছরে ২ হাজার ১৮৪ ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯০৪ টাকা। আর পাকিস্তানের নারীরা বছরে ১ হাজার ৪৯৮ ডলার বা ১ লাখ ২১ হাজার ৩৩৮ টাকা আয় করেন। তৈরি পোশাক খাতে বিপুল সংখ্যক নারীর কর্মসংস্থান বাংলাদেশের নারীদের আয়ের দিক থেকে এগিয়ে রেখেছে।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ২০১৬ সালের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে এই তিন দেশের নারীদের আয়ের এ চিত্র পাওয়া গেছে। তা ছাড়া গড় আয়ু, শিশুর অপুষ্টি, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার, চাকরির নিশ্চয়তা—এসব সূচকে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে এই অগ্রগতির প্রতিফলন হয়েছে।

সামাজিক বিভিন্ন সূচকে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ
* বাংলাদেশের নারীদের আয় গড়ে ২,৩৭৯ ডলার
* ভারতের নারীদের আয় ২,১৮৪ ডলার
* পাকিস্তানের নারীদের আয় ১,৪৯৮ ডলার
চলতি বছরেই ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার সাত দশক বা ৭০ বছর পূর্তি হয়েছে। আর বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়ার ৪৬ বছর পার হয়েছে। এই সময়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে বেশ দ্রুত এগিয়েছে বাংলাদেশ।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রথমআলোকে বলেন, কয়েক দশক ধরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেশ বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, যা দারিদ্র্য কমাতে ও আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। অন্যদিকে কৃষি খাতে উৎপাদনশীলতা কয়েক গুণ বেড়েছে, যা গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা করেছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারের কর্মসূচিগুলো সামাজিক অগ্রগতিতে সহায়তা করেছে। স্বাস্থ্য খাতে প্রাণনাশকারী রোগ ম্যালেরিয়া, কলেরার মতো রোগ নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। এতে মৃত্যুহার কমেছে।

মাথা পিছু আয়, গড় আয়ু ও অপুষ্টি

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, গত পাঁচ অর্থবছরে দেশে মাথাপিছু আয় ৫১ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৫ সালের হিসাবে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২ বছর। অন্যদিকে গড় আয়ু ভারতে ৬৮ দশমিক ৩ বছর ও পাকিস্তানে ৬৬ দশমিক ৪ বছর। এই তিন দেশের মধ্যে পাকিস্তানে মানুষের গড় আয়ু সবচেয়ে কম।

পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে বাংলাদেশের শিশুরাই কম অপুষ্টির শিকার হয়। পাকিস্তানে ১০০ জনে ৪৫ জন শিশু এবং ভারতে প্রায় ৩৯ জন শিশু অপুষ্টির শিকার।

দুই দশকে দারিদ্র্য হার অর্ধেকে

বিশ্বব্যাংকের নতুন হিসাব অনুযায়ী, দৈনিক ১ দশমিক ৯০ ডলার আয় করলেই আর গরিব মানুষের তালিকায় আপনি থাকবেন না। এই হিসাবে, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কম। ২০১৪ সালে বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, বাংলাদেশে সাড়ে ১৮ শতাংশ জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। আর ভারতে এই হার ২১ দশমিক ২ শতাংশ। অবশ্য পাকিস্তানে এই হার ৬ দশমিক ১ শতাংশ। মূলত হতদরিদ্ররাই এই গণনায় আসে।

চাকরির নিশ্চয়তা, আয় বৈষম্য

২০১৬ সালের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সূচকে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ১০০ কর্মজীবীর মধ্যে প্রায় ৫৮ জনই অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। অন্যদিকে ভারতে যত কর্মসংস্থান হয়, এর ৮০ শতাংশের বেশি আনুষ্ঠানিক খাতে। পাকিস্তানে এর হার ৬৩ শতাংশের কিছুটা বেশি। এদিকে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারত—এই তিন দেশের মধ্যে আয়বৈষম্য সবচেয়ে বেশি ভারতে, এরপর বাংলাদেশে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম প্রথমআলোকে বলেন, সার্বিকভাবে এ দেশের নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েছে, আয়ও বেড়েছে৷ মূলত চার-পাঁচটি কারণেই নারীর আয়ের ক্ষেত্রে অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে আছে৷ তৈরি পোশাক খাতে লাখ লাখ নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে৷ এর পাশাপাশি কৃষি খাতেও নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ ঐতিহাসিকভাবেই আছে৷ অন্যদিকে শিক্ষা খাতে বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষায় সিংহভাগ শিক্ষকই নারী৷ এ ছাড়া প্রশাসনেও সরকার যোগ্যতা অনুযায়ী নারীদের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিচ্ছে৷

শামসুল আলম আরও বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন তথা লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও সরকার বাজেটে প্রতিবছর বরাদ্দ বাড়াচ্ছে৷ সর্বশেষ বাজেটের প্রায় ২৭ শতাংশই লিঙ্গবৈষম্য দূর করা বা নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে৷

গত কয়েক দশকে এই তিনটি দেশ কতটা এগিয়েছে, তা নিয়ে একটি বিশ্লেষণ প্রতিবেদন তৈরি করেছেন ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক মানস চক্রবর্তী। ভারতের লাইভমিন্ট নামের অনলাইনে গত ১৫ আগস্ট তা প্রকাশিত হয়েছে। সেই প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের প্রশংসা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আয়ুষ্কাল, বৈষম্য, নারীর আয়, ঝুঁকিপূর্ণ কর্মসংস্থান, শিশুর অপুষ্টি এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার—এসব সূচকে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে।

সূত্র: প্রথম আলো

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়