শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ০৮ নভেম্বর, ২০১৭, ০৬:২৫ সকাল
আপডেট : ০৮ নভেম্বর, ২০১৭, ০৬:২৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আদমকে শিক্ষাদান এবং ফেরেশতাদের অপারগতার স্বীকৃতি

ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ: এটা মনে করা নিতান্ত ভুল যে ফেরেশতাগণ আল্লাহ তাআলার সঙ্গে তর্কবিতর্ক করার উদ্দেশ্যে বা আল্লাহর কাজের ত্রুটি বের করার উদ্দেশ্যে এ-ধরনের প্রশ্ন করেছিলেন। বরং তাঁরা আদম আ.-কে সৃষ্টির কারণ জানতে চাচ্ছিলেন। তাঁরা এটাও জানতে চাচ্ছিলেন যে আদমকে সৃষ্টি করার মধ্যে কী হেকমত বা প্রজ্ঞা রয়েছে। তাঁদের এই আকাক্সক্ষা যে, আদম সৃষ্টির হেকমতের রহস্য তাঁদের কাছেও উন্মোচিত হোক। এ-কারণেই তাঁদের বর্ণনাভঙ্গি এবং উদ্দেশ্য ব্যক্ত করার ত্রæটির প্রতি সতর্ক করার পর আল্লাহ তাআলা ভালো মনে করলেন যে তাঁদের এই জিজ্ঞাসারÍবাহ্যিকভাবে যে-জিজ্ঞাসায় আদমকে হীন প্রতিপন্ন করা হয়েছে বলে মনে হয়Íজবাব এমনভাবে দেয়া হোক, যাতে ফেরেশতাদের স্বয়ং আদম আ.-এর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব এবং আল্লাহপাকের উদ্দেশ্য ও হেকমতের মাহাত্ম্য ও উচ্চতা কেবল স্বীকার করাই নয়, বরং সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের অক্ষমতা ও অপারগতাও তাঁদের গোচরীভূত হয়। এই উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলা আদম আ.-কে নিজের সবচেয়ে উঁচুস্তরের গুণ ‘ইলম’ দান করলেন এবং তাঁকে যাবতীয় বিষয়বস্তুর নাম শিখিয়ে দিলেন। এরপর তিনি সেসব বস্তু ফেরেশতাদের সামনে উপস্থিত করলেন এবং তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা এই বস্তুগুলো সম্পর্কে কী জানো?

তাদের তো ‘ইলম’ অর্থাৎ জ্ঞান ছিলো না, তাঁরা কী জবাব দেবেন? কিন্তু তাঁরা যেহেতু আল্লাহপাকের নিকটবর্তী ছিলেন তাই বুঝতে পারলেনÍএটা আমাদের পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে নয়। কারণ ইতোপূর্বে এসব বিষয় সম্পর্কে আমাদেরকে তো কোনো জ্ঞানই দেয়া হয় নি। তাই আমাদের পরীক্ষা করা উদ্দেশ্য নয়; বরং আমাদেরকে এ-বিষয়ে সতর্ক করা উদ্দেশ্য যে, মহান আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করা তাসবিহ ও তাহলিল এবং প্রশংসা ও গুণগান গাওয়া ইত্যাদি ওপর নির্ভরশীল নয়; বরং ইলমÍজ্ঞান নামক গুণের ওপর নির্ভরশীল। কারণ, স্বাধীন ইচ্ছা, আধিপত্য বিস্তারের ক্ষমতা এবং স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগের সক্ষমতাÍঅন্য কথায় বলা যায়, জমিনে শাসনকার্য পরিচালনা করা ‘ইলম’ নামক গুণ ছাড়াসম্ভব নয়। আল্লাহ যেহেতু আদম আ.-কে নিজের ‘ইলম’ গুণ প্রকাশের পূর্ণাঙ্গ ক্ষেত্র হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, সুতরাং তিনিই পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার অধিকারী; আমরা তার অধিকারী নই।

তা ছাড়া প্রকৃত সত্যও এটাই যে, আল্লাহ তাআলার ফেরেশতাগণ তাদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্বপালন ছাড়াসবধনের পার্থিব আকাক্সক্ষা ও প্রয়োজন থেকে মুক্ত। তাই তাঁরা ওইসব বস্তুর জ্ঞান সম্পর্কে অনবহিত ছিলেন। অন্যদিকে, হযরত আদম আ.-এর এ-সমুদয় বস্তুর প্রয়োজন ছিলো। তাই এসব বস্তুর জ্ঞান তাঁর জন্য একটি স্বাভাবিক ও সৃষ্টিগত ব্যাপার ছিলো। এই জ্ঞান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে তাঁকে দান করা হয়েছে এবং সেসবকিছুই শিখিয়ে দেয়া হয়েছে যা তাঁর জন্য প্রয়োজনীয় ছিলো।

উপরিউক্ত বিষয়ে আল্লাহপাক বলেন, এরপর আল্লাহ যা-কিছু ইচ্ছা করেছিলেন তা অস্তিত্বপ্রাপ্ত হলো এবং প্রকাশ পেলো।) আর তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন। (এই অভ্যন্তরীণ উন্নতি লাভ করলেন যে তিনি আল্লাহর কাছ থেকে সব পদার্থের নাম জেনে নিলেন।) তারপর তিনি ওই সমুদয় (পদার্থকে) ফেরেশতাদের সামনে প্রকাশ করলেন এবং বললেন, ‘যদি তোমরা (তোমাদের সন্দেহের ক্ষেত্রে) সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে এই সমুদয়ের নাম আমাকে বলে দাও।’ তারা বললো, ‘আপনি মহান, পবিত্র। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের তো কোনো জ্ঞানই নেই। বস্তুত আপনি জ্ঞানময় ও প্রজ্ঞাময়। (ফেরেশতারা যখন এভাবে নিজেদের অক্ষমতা ও অপারগতা স্বীকার করে নিলেন) তখন তিনি বললেন, ‘হে আদম, তাদেরকে এ-সকল (পদার্থের) নাম বলে দাও।’ সে তাদেরকে এই সকলের নাম তাদেরকে বলে দিলে তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলি নি যে আকাশমণ্ডলী এবং পৃথিবীর অদৃশ্য বস্তু সম্পর্কে আমি নিশ্চিতভাবে অবহিত এবং তোমরা যা ব্যক্ত করো বা (তোমাদের অন্তরে) গোপন রাখো তাও আমি জানি?’ [সুরা বাকারা : আয়াত ৩১-৩৩]

হযরত আদম আ.-কে যে-জ্ঞান দান করা হয়েছিলো সে-বিষয়ে মুফাস্সিরগণ দুই ধরনের মত প্রকাশ করেছেন। এক প্রকার মত এই যে, বিশ্বজগতের যাবতীয় বস্তু যা অতীতকাল থেকে ভবিষ্যৎকাল পর্যন্ত অস্তিত্ব লাভ করেছে, অস্তিত্ব লাভ করবে বা করছে, সেই সমুদয়ের নাম ও মূলতত্তে¡র জ্ঞান হযরত আদম আ.-কে দান করা হয়েছিলো। দ্বিতীয় প্রকার মত হলো, সে-সময় যে-পরিমাণ বস্তু জগতে বিদ্যমান ছিলো এবং হযরত আদম আ.-এর সামনে উপস্থিত করা হয়েছিলো সে-সমুদয় সম্পর্কিত জ্ঞান তাঁকে দেয়া হয়েছিলো।

আর সকল বস্তুর নাম যেমন আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত যাবতীয় বস্তু সম্পর্কে বলা যেতে পারে, তেমনি সেই সময়ের সমস্ত বস্তু সম্পর্কেও বলা যেতে পারে, কোনো ধরনের বিশ্লেষণ ছাড়াই। আর এটাও হতে পারে যে, অধিকাংশ সময় আমাকে এই সমুদয়ের নাম বলে দাও কথার মাধ্যমে অস্তিত্বশীল, অনুভূতিগ্রাহ্য অর্থাৎ উপস্থিত বস্তুসমূহের প্রতি ইঙ্গিত করাই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। আর যদি এ-কথা বলা হয় যে, আয়াতটির অর্থ এই নয় যে বস্তুসমূহের সমস্ত সংখ্যার বিস্তারিত বিবরণের জ্ঞান দান করা হয়েছিলো; বরং এর অর্থ হলো, বস্তুসমূহের মূল ও ভিত্তি এবং মূলনীতির জ্ঞান দান করা হয়েছিলো, তারপরও সকল বস্তুর নাম কথাটির সঙ্গে এর বিরোধ ঘটে না।

যাইহোক, হযরত আদম আ.-কে ‘ইলম’ গুণে এমনভাবে গুণান্বিত করা হয়েছিলো যে ফেরেশতাদের পক্ষেও তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব এবং খেলাফতের যোগ্যতা স্বীকার না করে উপায় থাকলো না। তাঁদের এ-কথা মানতেই হলো যে, যদি আমাদেরকে আল্লাহর জমিনে তাঁর প্রতিনিধি বানানো হতো, তাহলে সৃষ্ট জগতের যাবতীয় রহস্য সম্পর্কে অজ্ঞ থাকতাম। আর আল্লাহ তাআলা হযরত আদম আ.-কে যেসব বৈশিষ্ট্য ও জ্ঞান দান করেছেন সে-সম্পর্কেও সম্পূর্ণ অনবহিত থাকতাম। কারণ, আমাদের তো পানাহারের প্রয়োজন হয় না, যার জন্য আমরা জমিনের মধ্যে নিহিত খাদ্য-দ্রব্য ও ধনভান্ডরের অনুসন্ধান করতাম। পানিতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কাও আমাদের নেই, যার জন্য আমরা নৌকা ও জাহাজ নির্মাণ করতাম। আমাদের রোগ-ব্যাধির আশঙ্কাও নেই যে এর জন্য আমরা বিভিন্ন ওষুধ জাতীয় বস্তুর বৈশিষ্ট্য, রাসায়নিক যৌগ, পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যা উপকারিতা, চিকিৎসাশাস্ত্রের উদ্ভাবন, দেহবিদ্যা ও মনোবিজ্ঞান প্রভৃতি অংসখ্য প্রকারের বিদ্যা ও বিষয়ের রহস্য ও হেকমত সম্পর্কে অবহিত হতে পারতাম। নিঃসন্দেহে এটা শুধু মানুষের জন্য উপযোগী যে সে পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলার প্রতিনিধি হবে এবং ওইসব তত্ত¡, পরিচয়-জ্ঞান, বিদ্যা ও বিষয় সম্পর্কে অবহিত হয়ে আল্লাহ তাআলার প্রতিনিধিত্বের যথাযথ অধিকার আদায় করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়