আশিক রহমান : ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছিল। ৭ দলকে বিলুপ্ত করে ৫ দল নিয়ে বাকশাল গঠন করে বলা হলোÑ দেশে রাজনৈতিক দল একটাই থাকবে। সেই জায়গায় জিয়াউর রহমান নিঃসন্দেহে একটা পরিবর্তন এনেছিলেন। চতুর্থ সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছিলেন। একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় শাসনব্যবস্থায় ফিরেছিল দেশÑ আমাদের অর্থনীতিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. শাহদীন মালিক।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের শাসনামল ভালো ছিল, নাকি খারাপ ছিল সেটা ভিন্ন ইস্যু। যেভাবে তিনি ক্ষমতা দখল করেছেন তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে, এ নিয়েও কোনো সন্দেহ নেই। তবে একজন মানুষ ৫টা খারাপ করেছে বলে ১টাও ভালো কাজও করেননি তা তো সঠিক কথা হতে পারে না। আমরা ফেরেস্তা নই, মানুষ। প্রতিটি কাজের আলাদা আলাদা মূল্যায়ন হতে পারে। ৫টা খারাপ কাজ করেছে বলে তার সব কাজই যে খারাপ তা তো সঠিক নয়। ।
তিনি আরও বলেন, বাকশালে যারা স্থান পায়নি তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন, তারা কী বলেন। তাদের রাজনৈতিক দল ছিল, নাকি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। চতুর্থ সংশোধনীর কথা এখন সবাই ভুলে গেছেন। এটা একটা ভয়াবহ সংশোধনী ছিল। ৭৩ সালের মার্চ মাসে সংসদ নির্বাচন হলো। কতদিনের জন্য হলো, ৫ বছরের জন্য। ১৯৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বলা হলো সংসদ এখন থেকে ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছে ধরে নেওয়া হবে। যেটা আমাদের ইতিহাসে আছে। টেকনিক্যালি এখন যে পার্লামেন্ট রয়েছে সংবিধান সংশোধন করতে পারে। চতুর্থ সংশোধনীর মতো সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে যদি এখন তারা বলেন, এই সংসদ আরও ৫ বছর থাকবে তাহলে আইনগতভাবে বলার কিছু নেই। কারণ তাদের সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। এরকম ব্যবস্থায় তো পড়েছিল দেশ ৭৫ সালে।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. শাহদীন বলেন, আমার মনে হয়, জনগণের বিচারে ষোড়শ সংশোধনী বিতর্কে সরকার লাভবান হয়নি। এতে বরং বিচারব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে। প্রধান বিচারপতির যদি এই অবস্থা হয় তাহলে অন্যদের কী হবে। এই বিতর্ক থেকে কেউ আসলে লাভবান হবেন না। প্রধান বিচারপতি আবারও স্বপদে আর ফিরে আসতে পারবেন না, এ ধরনের একটি মন্তব্য করেছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। এখন প্রশ্ন হচ্ছেÑ অ্যাটর্নি জেনারেল যদি নির্ধারণ করে দেন, প্রধান বিচারপতি স্বপদে থাকবেন কী থাকবেন না আইনের শাসনের জন্য তা সুখকর নয়। দেশের জন্যও ভালো নয়।
তিনি বলেন, যেকোনো জিনিসের একটা প্রক্রিয়া রয়েছে। এই প্রক্রিয়াটাই হচ্ছে আইনের শাসন। প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে যখন বলা হয় তখন তা আইনের শাসনের পরিপন্থী। আইনের শাসন নয়। প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকতেই পারে, তদন্ত হতেই পারে, কিন্তু এ বিষয়ে তো আইনে সবকিছু বলে দেওয়া আছে। কিন্তু সেটা যখন অনুসরণ করা হয় না তখন পুরো জিনিসটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। এখানে কতটা দুর্নীতি, কতটা রাজনৈতিক সে প্রশ্নটা সামনে চলে আসে।
আপনার মতামত লিখুন :