শিরোনাম
◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের

প্রকাশিত : ০৬ নভেম্বর, ২০১৭, ০৭:০২ সকাল
আপডেট : ০৬ নভেম্বর, ২০১৭, ০৭:০২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কমছেই না পিয়াজের দাম

ডেস্ক রিপোর্ট :গত কয়েক সপ্তাহ থেকে হুঁ হুঁ করে বাড়তে শুরু করা পিয়াজের দাম আর কমছে না। প্রথমদিকে দেশজুড়ে টানা বৃষ্টিকে দায়ী করলেও; বর্তমানে দেশি ও আমদানি করা পিয়াজের ব্যাপক ঘাটতিকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। গত একমাসের ব্যবধানে পিয়াজের কেজি
বেড়ে ১০০ টাকা ছুঁই ছুঁই। পাইকারি বাজারে এ পণ্য কেজিপ্রতি ৮০ টাকা হলেও খুচরা বাজারগুলোতে ৯০-১০০ দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। বাধ্য হয়ে বেশি দামে ক্রয় করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। বাজারে কোনো ধরনের মনিটরিং না থাকায় পিয়াজের বাজার লাগামহীন বলে অভিযোগ করছেন স্বল্প আয়ের ক্রেতারা।
ভোক্তাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা কোনো ধরনের কারণ ছাড়াই নিজেদের ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছেন। এতে করে তাদের মধ্যে দেখা গেছে ব্যাপক হতাশা আর চাপা ক্ষোভ। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল, শান্তিনগর, পূর্ব রাজাবাজার ও কাওরানবাজার ঘুরে এসব চিত্র পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আমদানিকারক ও বড় বড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণেই পিয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখা যাচ্ছে না। পাশাপাশি বাজারে পিয়াজের সরবরাহ বাড়াতে সরকারের আগাম উদ্যোগের অভাবও দায়ী।
হাতিরপুল বাজারের ব্যবসায়ী সবুজ বলেন, নতুন মৌসুমের অল্পস্বল্প পিয়াজ উঠতে শুরু করবে কিছুদিন পর। তখন কিছুটা কমতে পারে। তবে পিয়াজের ঘাটতি পূরণ হতে সময় লাগবে। তাই দ্রুত দাম নাও কমতে পারে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মূল্যতালিকা অনুযায়ী সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি ও আমদানি করা দুই ধরনের পিয়াজের দামই বেড়েছে। দেশি পিয়াজ কেজিপ্রতি ৮০-৯০ টাকা এবং আমদানি করা ভারতীয় পিয়াজ ৬০-৭০ টাকা। গত সপ্তাহে উভয় মানের পিয়াজই ছিল কেজিতে ৫ টাকা কম।
পিয়াজ ব্যবসায়ীদের মতে, আমদানি করা পিয়াজের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। বিদেশে দাম বাড়ার কারণে দেশের বাজারেও পিয়াজের দাম বেড়েছে। দক্ষিণ ভারতে বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে পিয়াজের ফলন এবার কম হয়েছে। ফলে চড়ামূল্যে ভারত থেকে আমদানি করতে হচ্ছে পণ্যটি, যা স্থানীয় বাজারে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, হিলি ও সোনামসজিদ- এ চার স্থলবন্দর দিয়েই পিয়াজ আমদানি কমে গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বার্ষিক ২০-২২ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে দেশে পিয়াজ উৎপাদন হচ্ছে ১৭ লাখ টনের মতো। দুই অর্থবছর ধরেই একই জায়গায় আটকে আছে উৎপাদন। ফলে ৪-৫ লাখ টন পিয়াজের ঘাটতি থাকছে দেশে। এ ঘাটতি পূরণ করতে হচ্ছে আমদানির মাধ্যমে। এ আমদানির সিংহভাগই আবার হচ্ছে ভারত থেকে। জানা গেছে, এক দশকের ব্যবধানে জনপ্রতি পিয়াজের চাহিদা দৈনিক ৪.১৮ থেকে বেড়ে প্রায় ১৭ গ্রামে উন্নীত হয়েছে। চাহিদা যে হারে বাড়ছে, ঠিক সে হারে উৎপাদন না বাড়ার কারণেই আমদানিনির্ভরতা থেকে বের হতে পারছে না বাংলাদেশ।
কাওরানবাজারে পিয়াজের পাইকারি দোকানে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ মানভেদে ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে একই বাজারের খুচরা বিক্রেতারা একই পিয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি করছেন একদর ৯০ টাকায়।
পাইকারি ব্যবসায়ী আজমত আলী বলেন, এখন তো পিয়াজের দাম একটু কমার দিকে। এই পিয়াজ গত কয়েকদিন আগে প্রতি কেজি ৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন বলে জানান পাইকারি এ ব্যবসায়ী। কাওরানবাজারের এসব পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে পিয়াজ কিনে একই বাজারে খুচরায় বিক্রি করছেন ইয়াকুব আলী। তিনি বলেন, দেশি পিয়াজ কেজি প্রতি ৯০ টাকার এক পয়সা কমে বিক্রি হবে না। যেখানে কম পান সেখান থেকে পিয়াজ কিনেন। ভালো লাগলে নিতে পারেন। না হলে চলে যান। সে তার ইচ্ছামতো পিয়াজ বিক্রি করবে বলে জানান এ খুচরা বিক্রেতা।
এই বাজারের আরেক খুচরা পিয়াজ বিক্রেতা হারুন বলেন, দেশি পিয়াজের নানা রকম ভাগ থাকার কারণে দোকানিরা নিম্নমানের পিয়াজ কেজিপ্রতি ৯০ টাকার কমে বিক্রি করছেন। তবে একটু ভালো মানের পিয়াজ প্রতি কেজি ৯০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি।
এদিকে ফার্মগেটের পূর্ব রাজাবাজারের পিয়াজের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পিয়াজের মানভেদে ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি করছেন দোকানিরা। কাওরান বাজারে ইন্ডিয়ান পিয়াজ প্রতি কেজি ৬০ টাকা বিক্রি করলেও তারা বিক্রি করছেন ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। এছাড়া দেশি ভালো পিয়াজ বিক্রি করছেন ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। পিয়াজ বিক্রেতা রাশেদুল ইসলাম বলেন, আসলে ভালো দেশি পিয়াজ প্রতি কেজি ৯০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব না। পারলে কেজিতে কয়েক টাকা বেশি দরে বিক্রি করে থাকেন বলে জানান তিনি।
এদিকে শান্তিনগরের বাজারে চড়া দামে পিয়াজ বিক্রি করতে দেখা যায়। বাজারটিতে ভালো মানের প্রতি কেজি পিয়াজের দাম হাঁকা হচ্ছে ১০০ টাকা। তবে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়।
বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী লাবলু বলেন, বাজারে যেসব পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে তা বীজের জন্য জমানো পুরাতন পিয়াজ। বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পিয়াজ না থাকার দরুন পিয়াজের দাম বাড়ছে বলে জানান তিনি। তবে এসব খুচরা পিয়াজ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ক্রেতাদের রয়েছে কড়া অভিযোগ। তারা বলেন, প্রত্যেক জিনিসের দাম বাড়ার পেছনে একটি কারণ আছে। কিন্তু প্রতিদিন দুয়েক টাকা করে খাবার পণ্যটির দাম বাড়ানোর পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ দেখছেন বলে ক্রেতারা জানান।
পিয়াজের বাজারে শান্তিনগরের বাসিন্দা ক্রেতা আবদুর রশিদ বলেন, এক কেজি পিয়াজ চালের চেয়ে বেশি টাকা দরে কেনা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই কম দামের নিম্নমানের ইন্ডিয়ান পিয়াজ কেনার চেষ্টা করি। তা সত্ত্বেও দেশি পিয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কম দামের ইন্ডিয়ান পিয়াজের দাম বেড়েই চলছে বলে জানান তিনি। শান্তিনগরের বাজারে ইন্ডিয়ান পিয়াজ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রয়ের কারণ জানতে চাইলে ইব্রাহীম জানান, বেশি দামে পিয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে মনে হলেও আসলে তা নয়। লাভ-খরচ মিলিয়েই পিয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। তবে বাজারে পিয়াজের দাম তুলনামূলক একটু বেশি বলে স্বীকার করেন শান্তিনগরের এ খুচরা পিয়াজ বিক্রেতা। মানবজমিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়