শিরোনাম
◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত

প্রকাশিত : ০৬ নভেম্বর, ২০১৭, ০১:০৬ রাত
আপডেট : ০৬ নভেম্বর, ২০১৭, ০১:০৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চুয়াডাঙ্গায় ভুয়া সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. রফিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

শামসুজ্জোহা পলাশ, চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় সার্জারি বিশেষজ্ঞ না হয়েও প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় এআর হাসপাতালের পরিচালক ডা. রফিউদ্দিন রফিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ রবিবার তার বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি নিয়মিত মামলা রজু হয়েছে।

ডা. রফিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ না হয়েও গত ১ আগস্ট এক প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন করেন। প্রসূতি অপারেশনের মাধ্যমে পূত্র সন্তান প্রসব করেন। চিকিৎসকের অদক্ষতার কারণে অপারেশনের মাধ্যমে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। তার চারদিন পরেই মারা যায় নবজাতক।

সার্জারি চিকিৎসক সেজে প্রতারণামূলক অপারেশন ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় এআর হাসপাতালের পরিচালক ডা. রফিককে আসামী করে গত ৩ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা সদর থানার বিজ্ঞ আমলি আদালতে-০১ এ একটি মামলা দায়ের করেন জেলার আলমডাঙ্গার পারলক্ষ্মীপুরের মৃত পটল মন্ডলের ছেলে আব্দুল লতিফ। পরে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসিকে এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট। গত ১১ অক্টোবর আদেশটি সদর থানায় পৌছায়। তবে দীর্ঘ একমাস পর গতকাল শনিবার রাতে কোর্ট পিটিশনটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে সদর থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে। মামলায় আসামী করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গার থানা কাউন্সিলপাড়ার হাবিবুর রহমান মালিতার ছেলে এআর হাসপাতালের পরিচালক ডা. রফিউদ্দিন রফিক। মামলা নং-১৩, তারিখ- ৫ নভেম্বর ২০১৭ ইং। মামলার ধারা: ৪১৭/৪১৮/৪১৯/৩৮৫/৪২৭/৩৪ দন্ডবিধি।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের গত ১ আগস্ট প্রসব বেদনা নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়কের এআর হাসপাতালে যান আলমডাঙ্গার পারলক্ষ্মীপুর গ্রামের আব্দুল লতিফের স্ত্রী মহিমা খাতুন। সেখানে গেলে রোগীর পরিক্ষা নিরিক্ষা শেষে ডা. রফিউদ্দিন রফিক বলেন, দ্রুত সিজার করাতে হবে, নইলে বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যাবে। এ সময় মহিমা খাতুনের স্বামী লতিফ সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. তারিক হাসান শাহীনকে দিয়ে সিজার করাতে চাইলে, ডা. রফিক নিজেকে সার্জারি বিশেষজ্ঞ বলে পরিচয় দেন।নিজে সার্জারি বিশেষজ্ঞ সেজে রোগী মহিমার সিজার করাতে ৬ হাজার টাকা দাবি করেন তিনি। তার কথা বিশ্বাস করে সেখানেই স্ত্রীর অপারেশন করাতে রাজি হন লতিফ। পরে সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পূত্র সন্তান প্রসব করেন মহিমা। চিকিৎসকের অদক্ষতার কারণে প্রসূতির নাভির সাথে সন্তানের পা জড়িয়ে যাওয়ায় গুরূতর অসুস্থ অবস্থায় ভূমিষ্ট হয় পুত্র সন্তান। এর চার দিন পর মারা যায় নবজাতক। পরে রোগীকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি ফিরতে বলেন ডা. রফিক। যন্ত্রণা নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়। বাড়ি ফিরেও যন্ত্রণা শেষ হয় না। অপারেশনের ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বের হতে শুরু করে। এরপর গত ৭ আগস্ট আবারও এআর হাসপাতালে যান প্রসূতি মহিমা। ওই সময় ডা. রফিক বিভিন্ন পরিক্ষার জন্য রোগীর স্বজনের নিকট ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। এতে প্রতিবাদ করলে তিনি বলেন, টাকা না দিলে রোগীর কোন পরিক্ষা করা হবেনা, ফলে সে মারা যেতে পারে। একথা শুনে একপ্রকার বাধ্য হয়েই ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন প্রসূতির স্বামী লতিফ। পরে রোগীর পরিক্ষা নিরিক্ষা করে ভালোমন্দ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন ডা. রফিক।

এদিকে, ডা. রফিকের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে রোগীর স্বজনরা জানতে পারে, ডা. রাফিউদ্দিন রফিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ নন। তিনি সার্জারি বিশেষজ্ঞের রূপ ধারণ করে প্রতারণামূলক রোগীর সিজার করেন। তিনি শুধুমাত্র এমবিবিএস ডিগ্রীধারী জেনারেল প্রাকটিশনার। এ বিষয়ে সন্দেহ হলে গত ৯ আগস্ট, ২৪ আগস্ট ও ১৯ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়নের নিকট এবং ১৬ সেপ্টেম্বর ডা. জিন্নাতুল আরার নিকট চিকিৎসা নেন রোগী মহিমা। এসময় ডা. নয়নের কাছে বিস্তারিত খুলে বলেন রোগী মহিমা। চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে বলেন, আবারও অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে। ভুল অপারেশনের কারণে রোগীর সন্তানের নাড়িতে ইনফেকশন হয়েছে। পরে ডা. নয়ন একপর্যায়ে রোগীর সেলাই কেটে ক্ষত স্থান থেকে পুঁজ বের করে দেন এবং নিয়মিত ড্রেসিং করার পরামর্শ দেন।

এজাহারে আরও উল্লেখ্য করা হয়েছে, রোগী মহিমার প্রাণহানী ঘটতে পারে। ডা. রফিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ সেজে প্রতারণামূলক ভুল অপারেশন করেন। একইসাথে জীবনহানীর ভয় দেখিয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে জোরপূর্বক টাকা আদায় করেন। ডা. রফিকের এরুপ কর্মকান্ডের ফলে রোগীর জীবন বাঁচানোর তাগিদে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিয়ে তাদের আনুমানিক দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও উল্লেখ্য করা হয়।

এ বিষয়ে এআর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রফিউদ্দিন রফিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সিজার আমি করিনি। করেছেন ডা. তারিক হাসান শাহিন। কিন্তু ডা. তারিক হাসান শাহিনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ওই ধরনের কোনো রোগীর সিজার করেছি কিনা তা আমার মনে নেই। তাছাড়া আমি এআর হাসপাতালে কোন অপারেশন করি না।

সজিব

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়