নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বাড্ডায় প্রাইভেটকার চালক জামিল শেখ ও মেয়ে নুসরাতকে হত্যার ঘটনায় শাহীন নামে এক সন্দেহভাজন ও তার স্ত্রীকে খুলনা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টায় খুলনা নগরীর লবনচোরা থানার মোহাম্মদনগর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
খুলনা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার মনিরা সুলতানা যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, মোহাম্মদনগরে ভাই শামীমের ভাড়া বাসা থেকে বাড্ডার জোড়া খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন শাহীন ও তার স্ত্রীকে আটক করেছে ঢাকার বাড্ডা থানার পুলিশ।
আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও জানান মনিরা সুলতানা।
গত বুধবার গভীর রাতে বাড্ডা হোসেন মার্কেটের পেছনে ময়নারটেক এলাকার একটি বাসায় বাবা প্রাইভেটকার চালক জামিল শেখ (৪১) ও তার স্কুল পড়য়া মেয়ে নুসরাতকে (৯) নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনার জন্য জামিল শেখের সঙ্গে সাবলেট ভাড়া থাকা শাহীন জড়িত বলে সন্দেহ করে আসছে পুলিশ।
পুলিশের সন্দেহ, স্ত্রীর পরকীয়াকে কেন্দ্র করে এ খুনের ঘটনা ঘটেছে। এজন্য জামিল শেখের স্ত্রী আরজিনা বেগমকে আটক করেছে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরজিনা বেগমের দাবি, ডাকাতরা তার স্বামী ও মেয়েকে খুন করেছে। এমনকি তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। তবে পুলিশ তার এসব দাবি বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করছে না।
নিহত জামিল শেখ প্রাইভেটকার চালক ছিলেন। পুলিশের ধারণা, পরকীয়ার জের ধরেই তিনি ও তার মেয়ে নুসরাত খুন হয়েছেন।
এর সঙ্গে ওই বাড়ির বাসিন্দা ও নিহত জামিল শেখের প্রতিবেশীসহ (সাবলেট) তিন থেকে চারজন জড়িত রয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে বৃহস্পতিবার বাড্ডা থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, ঘটনাটি রহস্যজনক। বিশেষ করে গৃহবধূ আরজিনার অসংলগ্ন কথাবার্তা সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বাড়ির মালিককে প্রথমে চারজন সন্ত্রাসীর কথা বলেছিলেন। তবে ওই বাড়ির বাসিন্দাদের কেউ কিছুই দেখেননি। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে তিনি (আরজিনা) ধর্ষণের শিকার হয়েছেন দাবি করলেও জেরার মুখে পরে সেখান থেকে সরে আসেন। পরকীয়া অথবা অন্য কোনো কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওসি জানান, জামিল শেখের শরীরে শক্ত কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন ছাড়াও ধরালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অন্যদিকে মেয়েটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পাঠান ভিলা নামক ওই ভবনের সামনে শত শত লোক জড়ো হয়েছেন। তিনতলা ওই বাড়িতে ছোট ছোট অনেক রুম। তৃতীয়তলার চিলেকোঠায় ভাড়া নিয়ে থাকতেন গাড়িচালক জামিল। ওই বাড়ির বাসিন্দারা জানান, গত কোরবানির ঈদের পর স্ত্রী আরজিনা, মেয়ে নুসরাত ও ছেলে আলফিকে নিয়ে ওই বাসায় ওঠেন জামিল।
নিহত জামিল শেখের বড় ভাই দুলাল শেখ বৃহস্পতিবার বাড্ডা থানায় জানান, তিনি নিজেও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রাইভেটকার চালান। ডিউটি শেষে বুধবার বিকালে তিনি তার ভাই জামিল শেখকে গুলশানে নামিয়ে দেন।
তিনি জানান, তার ভাইয়ের সঙ্গে স্ত্রীর সম্পর্ক ভালো ছিল না। বিয়ের পর থেকেই তাদের পরিবারে অশান্তি লেগে ছিল। আরজিনা মোবাইলে বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলত। এ নিয়ে তাদের ঝগড়াও হয়েছে অনেক। নতুন এই বাসায় ওঠার আগে আরজিনা রাগ করে সাভারের ইপিজেড এলাকায় তার মায়ের বাড়িতে গিয়ে দুই মাস অবস্থান করে। পরে গত মাসে তার (জামিল শেখ) ভগ্নিপতি মহসিন শিকদার সাভার গিয়ে আরজিনাকে বাড্ডায় তার স্বামীর কাছে ফিরেয়ে আনেন।
নিহতের স্বজনরা জানান, জামিল শেখের বাবার নাম বেলায়েত শেখ। তাদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের বনগ্রামে। সাত ভাইয়ের মধ্যে জামিল শেখ ছিলেন মেঝো।
আপনার মতামত লিখুন :