সাঈদা মুনীর: লেদারের জ্যাকেট গায়ে ও দস্তানা হাতে দ্রুত বাইক নিয়ে ছুটে চলেন তিনি। নাম মারালা ইয়াজারলু। ইরান থেকে ভারতে এসেছেন। এমবিএ ও পিএইচডি করে পেশা জীবনের শুরু সেখানেই। ফ্যাশনে আগ্রহী ইয়াজারলু মোটরবাইক চালিয়ে ৪৫টি দেশ ভ্রমণ করতে চান। দেড় বছরে ৭টি মহাদেশ পাড়ি দেওয়ার এ গল্পের শুরু এ বছরের ১৫ মার্চ। কয়েকটি দেশ পাড়ি দিয়ে এখন লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুতে অবস্থান করছেন। সুপারবাইক চালিয়ে বাঁধ ভাঙার গল্প তিনি শোনাতে চান সবাইকে। কাজ করতে চান নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে
ইয়াজারলু যে শুধু দুঃসাহসিক কাজ পছন্দ করেন, তা নয়। তাঁর পছন্দ অনন্য কর্মজীবন। তিনি বিপণনে এমবিএ করেছেন। পুনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রিধারী এই নারী বাইকার ভারতের আবাসন প্রতিষ্ঠান পঞ্চশীলে ১১ বছর ধরে কাজ করছেন। তিনি এখন প্রতিষ্ঠানটির বিপণন বিভাগের প্রধান।
বিপণন পেশায় ব্যস্ত সময় পার করলেও করা মারাল ইয়াজারলু ২০১২ সালে একটি ফ্যাশন ব্র্যান্ড মা- ইয়া চালু করেন। শিশু এবং বিয়ের জন্য বৈচিত্র্যপূর্ণ পোশাকের ফ্যাশন ব্র্যান্ড মা-ইয়া’। তিনি পুনের হার্লি ওনার্স গ্রুপের (এইচওজি) সদস্য।
ইরানে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ইয়াজারলু ২০০৪ সালে আসেন ভারতের পুনেতে। তিনি ভারতে আসার পরই মোটরবাইক চালানো শুরু করেন। কারণ ইরানে নারীদের বাইক চালানোর অনুমতি নেই। ৮০০ সিসির বিএমডব্লিউ জিএস বাইকে চড়ে তিনি ১ লাখ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে চান। ১০ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার অবিশ্বাস্য গল্প অনেক সীমাবদ্ধতাকে হার মানিয়েছে।
তিনি যাত্রাপথে ইরানেও যেতে চান। যদিও যেখানে নারীদের মোটরসাইকেল চালানোর কোনো অনুমতি নেই।রোমাঞ্চকর দুঃসাহসিক অভিযানের প্রতি বরাবরই আগ্রহী ইয়াজারলু। তার ভ্রমণ সঙ্গী ছিলেন আলোকচিত্রী তথ্যচিত্র নির্মাতা ৪২ বছর বয়সী পঙ্কজ ত্রিবেদী। সমস্যা সংকুল অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। তবে এরপরও ব্যাকআপ গাড়ি এবং বিপদে সাহায্যের জন্য তার সমর্থনে কাউকে সঙ্গে নেননি ইয়াজারলু।
পঙ্কজ ত্রিবেদীকে নিয়ে এ বছরের ১৫ মার্চ যাত্রা শুরু করেন মারাল ইয়াজারলু। দুজনের এ মিশনের প্রথম পর্যায় শেষ হয় মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দেওয়ার পর। ইয়াজারলা ও ত্রিবেদী এই সময়ে পেরুতে অবস্থান করছেন। এ যাত্রায় তাঁরা কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো পাড়ি দেবেন।
তৃতীয় পর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকা, সুদান ও মিসরে যাবেন। এরপর তাঁরা চতুর্থ পর্যায়ে যাবেন গ্রিস, তুরস্ক, রাশিয়া, চীনে। চীন থেকে ফিরে আসবেন ভারতে।
যাত্রাপথে ইয়াজারলু আর ত্রিবেদী আবহাওয়া এবং পথ এবড়োখেবড়োর মতো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু রেস্তোরাঁ থেকে নিরামিষ খাবার সংগ্রহ করেছেন (ত্রিবেদী মাংস খান না)।
একবার মোটরবাইক নিয়ে ইয়াজারলু ইরানে যেতে চান। ইরানের নারীদের মোটরবাইক চালানোর অনুমতি না থাকায় দেশটির নেতাদের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানানোই তাঁর ইচ্ছা। কারণ তাঁর ভাষ্য হলো, বাইক চালানো কোনো ধর্ম বা সামাজিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে নয়।
এর আগে এ বছরে এক খবরে জানা যায়, ইরানে দুই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বাইক চালানোয়। এমনকি গত বছর মোটরসাইকেল চালানো থেকে নারীদের বিরত রাখতে ফতোয়া জারি করা হয় ইরানে।
ইয়াজারলু বলেন Avমার চাওয়ার (ইরানে নারীদের বাইক চালানোর অনুমতি) ব্যাপারটি সরকারের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধ নয়। আমি সরকারবিরোধী বা বিদ্রোহী নই। এটা শুধু আমার একটি অনুরোধ এবং আমি এ বিষয়ে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত। আমি এ ব্যাপারে ইতিবাচক এবং আশা করি, শিগগিরই ইরানি নারীরা বাইক চালাবে।’ তিনি বলেন, আমি ভারতে আসার পরই বাইক চালানো শুরু করি। ইরানে নারীদের মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি যে নেই, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না।’
নারীর ক্ষমতায়নের কাজে আগ্রহী ইয়াজারলু বর্তমানে বিশ্বভ্রমণে আছেন। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পোশাক এবং পোশাকে চলতি ধারা নিয়ে প্রচার চালাবেন। বিশ্ব সফর শেষে ভারতে ফেরার পরে তিনি ফ্যাশন শোর আয়োজন করতে চান।৩5 eQi বয়সী এই ইরানি নারী বাইকার।
সূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস
আপনার মতামত লিখুন :