শিরোনাম
◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ০২ নভেম্বর, ২০১৭, ০৮:১৭ সকাল
আপডেট : ০২ নভেম্বর, ২০১৭, ০৮:১৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কেন রোহিঙ্গা সংকটে ভারত, চীন রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র নির্বিকার?

মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে : বাংলাদেশের স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক রেহমান সোবহান ২০১৫ সালে তার ৪৮৬ পৃষ্ঠার ‘আনট্রাঙ্কুইল রিকালেকশনস : দ্য ইয়ার্স অব ফুলফিলমেন্ট’ গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। এতে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অজানা সব ঐতিহাসিক ঘটনাবলি রয়েছে। সেখানে ‘অ্যান অ্যাডভোকেট ফর বাংলাদেশ’ অংশে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন চীনে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত খাজা মোহাম্মদ কায়সারের সঙ্গে তার একটি জরুরি গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় হয়। তাতে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের আনুষ্ঠানিক যুদ্ধের আগে আগস্টের শেষে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে চীন রাজনৈতিক সমাধা চায়। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে অস্ত্র ও কূটনৈতিক সমর্থন জোগালেও পাকিস্তান রক্ষায় কোনো সামরিক হস্তক্ষেপ করবে না এমন তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিতটি ছিল, যা তিনি যথাসময়ে মুজিবনগর সরকারকে দেন। আর এই কৌশলের ভিত্তিতেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভেতরে ও বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও পাকিস্তান সম্মিলিত বাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণটি চূড়ান্ত করে।

তবে উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হচ্ছে, এই রাষ্ট্রদূত খাজা মোহাম্মদ কায়সারই চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন, যার সুবিধাভোগী হিসেবে আজও যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছে ঋণী। তবে এখন ভূরাজনীতিগত ও বাণিজ্যিক স্বার্থে কূটনীতি ভিন্নমাত্রায় ধাবমান। তাতে খাজা কায়সারের মতো উদ্ভাবনী মেধায় সুষমা স্বরাজ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে সমাসীন। তারই সফরের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থিন কাউ পঞ্চাশ বছরের উপরে প্রথম ৪ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে গিয়ে দ্বিপক্ষীয় সংযোগ ত্বরান্নয়ন ও সন্ত্রাস দমনে ৪টি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। সেই চুক্তির ভিত্তিতে তখন থেকেই দিল্লি ৬৯টি সেতু নির্মাণসহ অতিমাত্রায় ১৯৯৭ সালে গৃহীত ‘ইন্ডিয়া-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড’ বা আইএমটি মহাসড়কে ‘তামু-কায়োগন-কেলওয়া’ সংযোগসাধন এবং ‘কেলওয়া-ইয়ারগি’ মহাসড়কের উন্নয়নে একনিষ্ঠ হয়। এই সুদীর্ঘ ১৪০০ কিলোমিটার মহাসড়কটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মনিপুর অঙ্গরাজ্যের মরেহ থেকে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ডের মি সটে যুক্ত হচ্ছে, যা সড়কপথে ভারতকে দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে প্রথম একান্নবর্তী করছে। এ ছাড়াও মিয়ানমারে বহুবিধ অবকাঠামো নির্মাণে সম্পৃক্ত রয়েছে ভারত। লক্ষ্য একটাই, মিয়ানমারের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, দুই প্রতিবেশীর মাঝে সংযোগ সাধন এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও ভ্রমণের সুযোগ বৃদ্ধি। পাশাপাশি অনুন্নত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলোর উন্নয়নে ভারতের ‘চিকেন-নেক’ বলে পরিচিত শিলিগুড়ি করিডোরের পরিবর্তে মিয়ানমার সরাসরি সমুদ্রপথে কলকাতা বন্দর থেকে রাখাইন রাজ্যের সিটউয়ি বন্দর অবধি স্বল্প দূরত্বের সংযোগটি উন্মুক্ত করেছে। সেই সমুদ্রসংযোগ এক মহাকর্মযজ্ঞই বটে, যদিও আইএমটি মহাসড়ক সংযোগটি কম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনাম পর্যন্ত সুবিস্তৃত করাই ভারতের শেষাবধি লক্ষ্য। তবে সমুদ্রপথের সংযোগটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম নদী, কালাদান নদীর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, যা ভারতের মিজোরাম অঙ্গরাজ্যের ‘তাইয়ো ও বৈনু’ নদী থেকে সরাসরি মিয়ানমারের চিন অঙ্গরাজ্য হয়ে রাখাইনের সিটউয়ি বন্দর পর্যন্ত সংযুক্ত রয়েছে।

সেজন্য ভারত ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত মিয়ানমারে ২২৫ মিলিয়ন ডলারের উপরে বিনিয়োগ করেছে, যেখানে চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। বলাবাহুল্য, রাখাইনে আবিষ্কৃত জ্বালানি সম্পদের বিষয়টি ২০০৪ সালেই চীনের নজর কেড়েছে। তাতে ২০১৩ সালে চীন সেখানে তেল ও গ্যাসের প্রয়োজনীয় সংযোগ সম্পন্ন করে, যা মিয়ানমারের কায়াউকফিউয়ি বন্দর থেকে নিজের ইউনান প্রদেশের কুনমিংয়ের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। এতে বেইজিং মালাক্কা উপকূল দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার পরিশোধিত তেল বাণিজ্যের পাশাপাশি গ্যাস পাইপলাইনে মিয়ানমারের ‘হাইড্রোকার্বনস’ আহরণ করছে।

ফলে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন অঙ্গরাজ্যে কালাদান নদীপথ ও আইএমটি মহাসড়ক কার্যকরভাবে দ্রুত ব্যবহার যেমন ‘লুক ইস্ট’ নীতিতে ভারতের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, তেমনি চীনের ‘ওয়ান চায়না’ নীতিতে তেল ও গ্যাসের নির্বিঘœ সংযোগ রক্ষায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বাণিজ্য ও পণ্যবিপণনের স্বার্থে পরস্পরকে ভূখ-প্রসারী প্রতিযোগিতায় প্রলুব্ধ করেছে। এতে রোহিঙ্গা বিতাড়নে ‘বাংলাদেশের বাঙালি’ এক অজুহাত মাত্র। সেখানে বিশ্বের মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক কমিউনিটির সাহায্যবিহীন গণতন্ত্র টেকসই হতে পারে না এমন অজুহাতে মিয়ানমারের ধর্মীয়, সামাজিক ও জাতিগত বিভেদের একটি সম্মিলিত অথবা পৃথকীকৃত মডেল প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টিতে খুঁজছে। উপরন্তু তাদের নিয়ন্ত্রিত বিশ্বায়িত অর্থনীতি চাইছে আসিয়ানভুক্ত দেশে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বাঁধিয়ে দেশগুলোর সমৃদ্ধিকে স্থবির করা। সেখানে চীনের সহযোগী হিসেবে রাশিয়া সামরিক সহযোগিতায় অধিকতর মনোযোগী, বিশেষ করে ২০১৮ সালে ৭০ বছর পূর্তিতে ‘আসিয়ান গেটওয়ে’ সৃষ্টিতে। এসব কারণেই রোহিঙ্গা নিষ্পেষণকে তথাকথিত সন্ত্রাস দমনের নামে আইনসিদ্ধ করে ভারত, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র নির্বিকার রয়েছে। তবে ত্রাণে কসুর করছে না, যেমনটা একাত্তরে ভারতে আশ্রিত বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র করেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়