শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ০১ নভেম্বর, ২০১৭, ১১:০২ দুপুর
আপডেট : ০১ নভেম্বর, ২০১৭, ১১:০২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গৌরবোজ্জ্বল ছাত্র রাজনীতিকে ভয়ানকভাবে কলুষিত করছে কিছু যুবক

সারোয়ার জাহান : পুরান ঢাকার দর্জি দোকানদার বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, দেশের গৌরবোজ্জ্বল ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত করছে কিছু যুবক। ছাত্র রাজনীতির নামে তারা সংঘবদ্ধভাবে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত।

বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এই পর্যবেক্ষণ দেন হাইকোর্ট।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর স্বাক্ষরের পর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৮০ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়।

প্রকাশিত রায়ে বলা হয়,রাজনৈতিক নেতাদের নিজস্ব এলাকায় আধিপত্যকে ধরে রাখার জন্য মাঝে মাঝে প্রকাশ্যে এবং হিংস্রভাবে শক্তি প্রদর্শনের প্রয়োজন হয়।

আদালত বলেন, কিছু তথাকথিত রাজনৈতিক নেতা তাঁদের নিজস্ব স্বার্থে ছাত্রদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন।

‘আমরা সংবাদপত্রে দেখেছি যে, সরকারি পরীক্ষায় নকল করার অনুমতি না দেওয়ায় তাদের হাতে শিক্ষকরা প্রহৃত হোন। অনেক ছাত্র হলে তারা প্রশাসনিক ক্ষমতা নিজ হাতে নিয়ে নেন এবং সাধারণ ছাত্রদের ভাড়ার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ দেন। বিপুল অংশগ্রহণকারী প্রকাশের মাধ্যমে তাদের অতিরিক্ত ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করেন। এটি খুবই ভয়ানক, বিপজ্জনক ও হতাশামূলক অবস্থা। জাতি এখান থেকে মুক্তি পেতে চায়।’

আদালত রায়ে বলেন, ‘যদিও প্রত্যাশা ছিল যে, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের দায়িত্বশীল জাতীয় নেতারা এসব সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করবেন। বিরোধী দলের কার্যক্রমকে দমনের জন্য অবশ্যই যুবক ও ছাত্রদের আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা উচিত নয়, যেহেতু এগুলো সাংঘর্ষিক, নৈরাজ্যকর এবং আইনে অনুমোদন নেই। বিরোধী দলের হিংস্র ও অপরাধীমূলক কার্যক্রম বন্ধ করতে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট। আমাদের উচিত এ মামলার আরো একটি দিক তুলে ধরা,যা আমাদের অপরাধমূলক বিচারব্যবস্থার ভুল তদন্ত প্রতিরোধ করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

আদালত আরো বলেন, ‘আমরা এমন একটা সমাজে বাস করি, যেখানে অভিজাত এবং ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা কিছু দায়মুক্তি ভোগ করে থাকেন এবং তাঁরা সহজে যেকোনো অপরাধ করার পর ওই ঘটনায় তদন্তের ফলাফলের ওপর সহজে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ এবং অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থা এবং ডাক্তার বিশেষজ্ঞরা এগিয়ে আসেন অপরাধীকে সাহায্য করার জন্য। এসব ব্যক্তি অপরাধীকে নিখুঁত প্রমাণ করতে মিথ্যা রিপোর্ট প্রদান করে থাকেন।’

গত ৬ আগস্ট বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। অন্য ছয়জনের মধ্যে চারজনের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন এবং অপর দুজনকে খালাস দেওয়া হয়।

এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে যে দুজন আপিল করেছিলেন, তাঁরা খালাস পেয়েছেন। অপর ১১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রয়েছে।

২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ বি এম নিজামুল হক এ রায় ঘোষণা করেন।

এ রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন রফিকুল ইসলাম শাকিল, কাইয়ুম মিঞা টিপু, এমদাদুল হক এমদাদ, জি এম রাশেদুজ্জামান শাওন, মাহফুজুর রহমান নাহিদ, সাইফুল ইসলাম, রাজন তালুকদার এবং মীর মো. নূরে আলম লিমন। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন এ এইচ এম কিবরিয়া, ইউনুস আলী, তারিক বিন জোহর তমাল, গোলাম মোস্তফা, আলাউদ্দিন, ওবায়দুর কাদের তাহসিন, ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান, আল-আমিন, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক পাভেল, মোশাররফ হোসেন ও কামরুল হাসান। এ ছাড়া তাঁদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়।

পরে রায় কার্যকরে মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। একই সঙ্গে নিম্ন আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামিরা।

বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ মার্চ ছাত্রলীগের ২১ কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই ২১ আসামির মধ্যে আটজন কারাগারে এবং বাকিরা পলাতক রয়েছেন।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রলীগ ক্যাডাররা নির্মমভাবে খুন করেন দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাসকে। শাঁখারী বাজারে বিশ্বজিতের টেইলার্স ছিল। তিনি থাকতেন লক্ষ্মীবাজারে। তাঁর গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে।

সূত্র : এনটিভি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়