লিহান লিমা: সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস আর্থার বেলফোর ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর ফিলিস্তিনের ভুখণ্ডে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ব্রিটেনের সমর্থনে ‘বেলফোর ঘোষণা’ দেন। ২ নভেম্বর ‘বেলফোর ঘোষণা’র শতবর্ষকে একটি ‘সঙ্কটজনক অধ্যায়’ বলে আখ্যা দিয়েছে এএফপি। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনের ভুখণ্ডে ইহুদিদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে আর ফিলিস্তিনিরা একটি নির্যাতিত জাতির পরিণতি ভোগ করছে।
বেলফোর ঘোষণার ৩১ বছর পর ১৯৪৮ সালে আমেরিকা ও ব্রিটেনের সহযোগিতার আত্মপ্রকাশ করে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল। দ্য গার্ডিয়ানে লিখা এক কলামে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, ‘অনেক ব্রিটিশ মানুষ স্যার আর্থারকে চেনেন না, কিন্তু ২০শতকের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা ১২ মিলিয়ন ফিলিস্তিনি খুব ভালভাবেই জানেন। কারণ বেলফোর ঘোষণা ভুলে যাওয়ার মত নয়। সারা বিশ্বে ১২ মিলিয়ন ফিলিস্তিনি নাগরিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় তাদের বিতাড়িত করা হয়েছিল। এদের মধ্যে ৬ মিলিয়ন ফিলিস্তিনি আজ পর্যন্ত নির্বাসিত। ১.৭৫ মিলিয়ন ইসরায়েলে বৈষম্য আর নিপীড়নের শিকার হয়ে জীবনযাপন করে। পশ্চিম তীরে বসবাস করা ২.৯ মিলিয়ন নাগরিক সামরিক বাহিনীর আগ্রাসনের শিকার। জেরুজালেমে বসবাস করা ৩ লাখ ফিলিস্তিনিদের চলাফেলা পুলিশ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। গাজায় বসবাস করা ২ মিলিয়ন নাগরিক একটি মুক্ত কারাগারে বসবাস করছে।
আব্বাস ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে একত্রে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র বেলফোর শতবর্ষ উপলক্ষ্যে উৎসবের ঘোষণা দেয়ার সমালোচনা করে বলেন, থেরেসা মে’র মন্তব্য ফিলিস্তিনিদের মাঝে ঝড় তুলেছে, কারণ তারা যুক্তরাজ্যের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা দাবি করে। ১ লাখ ফিলিস্তিনি ছাত্র-ছাত্রী থেরেসা মে’র কাছে তাদের সঙ্গে চলা নির্যাতনের বিবরণ দিয়ে চিঠি লিখেছে।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়, এই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্য ও এই অঞ্চলে একটি স্থায়ী অস্থিতিশীলতার জন্ম দিয়ে গিয়েছে। এই ঘোষণায় ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য রাজনৈতিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে, আর ফিলিস্তিনি আরবদের, স্থানীয় সংখ্যাগরিষ্ঠদের নাগরিকদের অধিকারের সঙ্গে আপস করতে হয়েছে, তাদের নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ফ্রান্সের ইতিহাসবিদ ফিলিপ প্রিভোস্ট বলেন, ‘ইহুদিরা এখানে অধিকার ও আত্মনিয়ন্ত্রণ পেয়েছে আর আরবরা অইহুদি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তারা আরব নয়, অইহুদি হিসেবে পরিচিত। তাদের ধর্মীয় ও নাগরিক অধিকার সীমাবদ্ধ, আর রাজনৈতিক অধিকার বলতে কিছুই নেই।’
মাহমুদ আব্বাস বলেন, ব্রিটেনের এই ঘোষণার জন্য প্রায়শ্চিত করা উচিত। ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস বলেছে, ব্রিটেন বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জাতির প্রতি একটি ঐতিহাসিক অপরাধ করেছে। সূত্র: গার্ডিয়ান, আল জাজিরা, ব্লুমবার্গ।
আপনার মতামত লিখুন :