শিরোনাম
◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক

প্রকাশিত : ০১ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৩৭ দুপুর
আপডেট : ০১ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৩৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দুদক হোক পক্ষপাতহীন

রাহাত : দুর্নীতি দমন কমিশনকে কাজ করতে হবে পক্ষপাতহীনভাবে; কারো আঙ্গুলের নির্দেশে নয়। রাডার ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলা আপিল করে না, অন্যান্য গুরুত্বপূণ ব্যক্তির মামলা আপিল করে না, অথচ বিচারপতিদের মামলা নিয়ে ঁেখাজাখোঁজি শুরু করেছে। এমন পক্ষপাতিত্ব উচিত নয়। শুধু মাত্র বিরোধী দলকে টার্গেট করতে হবে এমনটা উচিত নয়। সরকারি দলের মধ্যে দুর্নীতির তদন্ত করতে হবে। আমাদের দেশে সাধারণত সরকারি দলের লোকেরাই বেশি দুনীতি করে অর্তীতেও দেখা বর্তমানে দেখা গেছে। সেই জন্য দুদক চেয়্যামানকে ভয় পেলে চলবে না।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান বন্ধে রুলের ওপর শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন আদালতে এসব কথা বলেছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে তৃতীয় দিনের শুনানি শেষে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষামাণ (সিএভি) রাখেন।
এর আগে আদালতের নিয়োগ করা অ্যামিকাস কিউরি (আাদলতের বন্ধু) অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী ও অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। গতকাল মতামত দেন অপর অ্যামিকাস কিউরি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।
গত ৯ অক্টোবর আপিল বিভাগের বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান বন্ধে দুদক সুপ্রিম কোর্টের দেয়া চিঠি নিয়ে রুল জারি করে আদালত। একই সঙ্গে এ বিষয়ে বক্তব্য শুনতে সুপ্রিম কোর্টর তিনজন আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি (আদলতের বন্ধু) হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর গত ১৯ অক্টোবর রুলের ওপর প্রথম শুনানি হয়। দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে দুদকের কাজের গতি নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করে আদালত বলেছিলেন সংস্থাটি ‘কচ্ছপ’ গতিতে চলছে। ওই দিন বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, দুদক অনুসন্ধান কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের তথ্য দিয়ে থাকে। মূলত ‘মিডিয়া ট্রায়ালের’ জন্য দুদক এটা করে থাকে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যখন দুদককে হয়রানি করাতে ব্যবহার করানো হত বলে অভিযোগ রাজনীতিকদের। শুনানি শেষে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য এ দিন নির্ধারণ করে ছিলেন আদালত।
মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন তার অভিমত তুলে ধরেন। এসময় আদালতে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের পক্ষে ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন, দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান এবং সুপ্রিম কোর্টের চিঠি আদালতের নজরে আনা আইনজীবী বদিউজ্জামান তরফদার উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সাধারণ আইনজীবী ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
শুনানির শুরুতে জয়নুল আবেদীন বলেন, এ চিঠি সুপ্রিম কোর্ট বা প্রধান বিচারপতির আদেশ নয়। দুদককে দেয়া চিঠিতে ‘সুপ্রিম কোর্ট মনে করে’-এ কথাগুলোও লেখা ঠিক হয়নি। কারণ এটা সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিভাগের (আপিল বিভাগ বা হাইকোর্ট বিভাগ) আদেশ নয়। প্রধান বিচারপতির নির্দেশক্রমে এ চিঠি দেয়া হলো, এমন কথাতো বলা হয়নি। এসময় আদালত তার কাছে জানতে চান যে, সুপ্রিম কোর্টের সকল প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রধান বিচারপতির হাতে। তাই যেকোনো প্রশাসনিক আদেশতো তার নির্দেশেই হবার কথা। জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, এখানে প্রধান বিচারপতির কথাতো বলা হয়নি। তিনি বলেন, এ চিঠি লেখার পরও দুদক চুপ করে বসে থাকেনি। তারা অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে। পরে সুপ্রিম কোর্ট সব তথ্য দিয়েছে। তাই এ চিঠির আর কার্যকারিতা নেই। এসময় আদালত বলেন, এটা নিয়ে মিডিয়ায় লেখালেখি হয়েছে। তাই হয়তো তাদের বোধদয় হয়েছে। এরপর সব তথ্য দিয়েছে। জয়নুল আবেদীন বলেন, যেহেতু চিঠিতে সুপ্রিম কোর্টের কথা বলা হয়েছে তাই সুপ্রিম কোর্টের কাছেই জানতে চাওয়া উচিত ছিল তারা এ জাতীয় কোনো চিঠি দিয়েছে কীনা। কিন্তু তা না যেয়ে হাইকোর্টে আসা ঠিক হয়নি। এসময় আদালত বলেন, সুপ্রিম কোর্টের কথা শুনলেইতো সকলেই ভয় পায়। তাই হয়তো- জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, আদালতের কথা শুনে ভয় পেলে চলবে না। আদালতকে ভয় পান এমন ব্যক্তির দুদকের চেয়ারম্যান হিসেবে থাকা উচিত নয়। তাকে সকল ভয়ভীতির উর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সরকার বা অন্য কোউকে ভয় পেলে চলবে না। আদালত বলেন, এখনতো শুনছি,বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায়ও দুর্নীতি হয়।
আদালত থেকে বেরিয়ে এসে অ্যামিকাস কিউরি অ্যাডভোকেট জয়নুল সাংবাদিকদের বলেছেন, ভয় পেলে দুদকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা উচিত নয়। দুদককে দায়িত্ব পালন করতে হবে এই দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে দুর্নীতির কথা চিন্তা করে। বিশেষ দলের কথা চিন্তা করা যাবে না। ডান দিকেও তাকাবেন না বাম দিকেও তাকাবে না। দুদক কাজ করেব সংস্থাটির আইন মোতাবেক। সুতরাং তারা কেন অন্যের কথা শুনেন ? এটি করা যাবে না। দুদকের তো এই্ দায়িত্ব না। তিনি আরো বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীন বলা হয়ে থাকে তারা স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। এটা জাতি চাই আমরাও চাই। কারণ দেশটা দুর্নীতি ভরে গেছে। এই দুর্নীতি থেকে জাতিকে উদ্ধার করতে হবে। এজন্য একমাত্র দুদক যদি স্বাধীনভাবে কাজ করে, কোন দলের কথা দিকে না তাকায়। তিনি আরো বলেন, শুধু মাত্র বিরোধী দলকে আক্রমণ করতে হবে এমনটা ঠিক নয়। সরকারি দলের মধ্যে দুর্নীতির তদন্ত করতে হবে। আমাদের দেশে সাধারণত সরকারি দলের লোকেরাই বেশি দুনীতি করে অর্তীতে দেখা বর্তমানে দেখা গেছে। সেই জন্য দুদক চেয়্যামানকে ভয় পেলে চলবে না।
পরে সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেস্টা ও জয়নুল আবেদীনের আইনজীবী ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সংবাদিকদের বলেন, দুদক পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। কারণ মিডিয়ার একটি প্রতিবেদেন প্রকাশিত হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে বিচারপতি জয়নুল আবেদীন বিদেশী অর্থ পাচার করেছেন। আমি বলেছি, দুদক অনুসন্ধান পাচার যে তথ্য আছে। সেটা আমাকে দেন। পরে দুদক আইনজীবী বলেছেন, এটা অভিযোগ। তথ্য নয়। তাহলে এটা কি দুদকের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য নয়? এটা আমার ক্লাইন্ড এর জন্য বিভান্তিকর।
শুনানির এক পর্যায়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান একটি লিখিত বক্তব্য দাখিল করে বলেন, আদালত আগের শুনানির দিন জানতে চেয়েছিলেন যে দুদক এতদিন কি করেছে, তার জবাব এতে রয়েছে। দুদক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিষয়ে ২০১০ সালের পর গত সাত বছরে খুব সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে। দুদক একদিনও ঘুমায়নি। এরপর একটি জাতীয় দৈনিকের একটি প্রতিবেদন পড়ে আদালতকে শোনান ব্যরিস্টার মইনুল হোসেন। এরপর আদালত রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখার আদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত বলেন, দ্রুত মামলাটির রাযের জন্য আসবে।
দুদককে গত ২৮ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া চিঠিটি হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বদিউজ্জামান তরফদার। এরপর আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। রুলে ওই চিঠি কেন অবৈধ ঘোষনা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের রেজিষ্ট্রার জেনারেল, দুদক চেয়ারম্যান, আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিষ্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী ও বিচারপতি জয়নুল আবেদীনকে দশ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এ রুলের ওপর গত ১৯ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়।
বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক। একারণে তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে গত ২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টকে চিঠি দেয়া হয়। এর জবাবে তদন্ত না করতে গত ২৮ মার্চ দুদককে পাল্টা চিঠি দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তীর স্বাক্ষরে এ চিঠি দেয়া হয়। এ চিঠি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও জাতীয় সংসদে আলোচনা হয়। এনিয়ে কয়েকদিন আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এরপর গত ৩১ জুলাই ওই বিচারপতির বিষয়ে মোট ২৩ ফর্দ নথি দুদকের কাছে সরবরাহ করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এরপর থেকে দুদক জোরেসরেই অনুসন্ধান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বলে জানা গেছে। ইনকিলাম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়