শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী 

প্রকাশিত : ০১ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:২৯ দুপুর
আপডেট : ০১ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:২৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঘরে-বাইরে নরক যন্ত্রণা

ডেস্ক রিপোর্ট : নরক যন্ত্রণা শুধু ঘরেই নয়। বাইরেও যন্ত্রণায় দগ্ধ হচ্ছে মানুষ। প্রতিদিনের দুঃখ-কষ্ট এখন তাদের গা-সওয়া। প্রতিবাদ করারও জায়গা নেই। সবকিছু নীরবে সহ্য করে নিতে হয়। আশরাফ চৌধুরী সুমন।
পলমল গ্রুপের একজন কর্মকর্তা। তার অফিস বাড্ডার শাহজাদপুরে। আগে বাসা নিয়ে বাড্ডায় থাকতেন। এখানে বাসা ভাড়া বেশি। সব মিলিয়ে খরচও বেশি পড়ে যায়। তাই তিনি একটু সচ্ছলভাবে চলার জন্য বাসা ভাড়া নিয়েছেন মাতুয়াইলের তুষারধারা এলাকায়। গতকাল লাব্বাইক বাসে তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, সিটিং বলে বাসগুলো আমাদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। আবার প্রতিদিন দাঁড় করিয়ে মানুষ নেয়। কিছু বলাও যায় না। উল্টো কথা শুনতে হয় কন্ডাক্টরের। সুমন জানান, তিনি লাব্বাইক বাসে মালিবাগ রেলগেইট পর্যন্ত আসেন। এখানে ভাড়া নেয় ২৫ টাকা। আবার এখান থেকে শাহজাদপুরে যান অন্য বাসে। সেখানে ভাড়া দিতে হয় ১৫ টাকা। এছাড়া মাঝেমধ্যে অনাবিল পরিবহনেও শাহজাদপুর পর্যন্ত যান। অনাবিল পরিবহনও ৪০ টাকা ভাড়া নেয়। এতে প্রতিদিন তার আসা-যাওয়ায় খরচ হয় ৮০ টাকা। মাসে প্রায় আড়াইহাজার টাকা। অথচ এক বছর আগেও ভাড়া লাগতো এর অর্ধেক। তিনি বলেন, হঠাৎ একদিন বাসে ওঠার পর ভাড়া ১৫ টাকা দিলে কন্ডাক্টর বলে ২৫ টাকা ভাড়া। কেন? উত্তর দিলো ‘সিটিং তাই’। অনেকক্ষণ তর্কবিতর্ক করেও লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত সব যাত্রীই এই কন্ডাক্টরের কাছে হার মানলো। মাত্র দুই থেকে তিন দিন সিটিং চলেছে। এরপর থেকে আবার যেই সেই। এমনও দিন যায় ঝুলে পর্যন্ত যাত্রী যায়। কারো কিছু বলার থাকে না। কেউ কিছু বললেও ড্রাইভার, হেলপার শোনে না। ওদের কাজ ওরা করে।

মানুষের গাদাগাদিতে অনেক সময় দেখা যায় সিটে বসে আছি, দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীর হাত থেকে ঘামের ফোঁটা পড়ছে আমার উপর। ভাবি আমাদের কপালে এমন যন্ত্রণা লেখা রয়েছে। তা মেনেই চলতে হবে। সুমন বলেন, কোনো কোনো দিন রাত হয়ে গেলে বন্ধু পরিবহন কিংবা গ্রামীণ পরিবহনে গুলিস্তান পর্যন্ত যাই। বছরখানেক আগেও তারা শাহজাদপুর থেকে ভাড়া নিতো ১২ টাকা। এখন ক’মাস ধরে নেন ২৫ টাকা। সুপ্রভাত নামে আরেকটি পরিবহন ভাড়া নেয় ৩০ টাকা। তারা এক বছর আগে নিতো ১৫ টাকা। সুমন জানান, যতই দিন যায় পকেটে টান পড়ে। খরচ বাড়ে। কথায় কথায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। গাড়ি ভাড়া বাড়ছে। কথায় কথায় বেতন তো আর বাড়ে না। ফলে সংসার চালাতে হয় টেনেটুনে। কখনো ধারকর্জ করতে হয়। কখনো কখনো কৌশল করে চলতে হয়। এটাই আমাদের নিয়তি।

কথা হয় আরেক যাত্রী আবদুল গফুরের সঙ্গে। তিনিও চাকরি করেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে। বলেন, রাজধানীর কোনো রাস্তায় আর এখন লোকাল বাস নেই। সব হয়ে গেছে সিটিং। এই সিটিং বলে তারা ভাড়া বাড়িয়েছে দ্বিগুণ। অথচ যাত্রী নিচ্ছে লোকালের মতো। এতে তাদের লাভ হয়েছে। এখন গাড়িতে উঠে এক কিলোমিটার দূরে পাশের স্ট্যান্ডে নামলেও ১০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। গফুর বলেন, রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় থাকি। অফিস মতিঝিলে। আগে যেখানে ভাড়া লাগতো ১৫ টাকা। এখন ৩০ টাকার নিচে কোনো ভাড়া নেই। যাত্রাবাড়ী থেকে বাসে উঠেছেন রফিকুল হক। মেশকাত পরিবহনে উঠেছেন। ভাড়া ২৫ টাকা। এ পরিবহনটি আগে ১২ নম্বর বাস হিসেবে পরিচিত ছিল। চিটাগাং রোড থেকে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত চলাচল করে বাসটি। রফিকুল জানান, হঠাৎ একদিন দেখি ১২ নম্বর বাস হয়ে গেছে মেশকাত পরিবহন। সঙ্গে সঙ্গে লোকাল থেকে সিটিং। ভাড়া বাড়িয়েছে ১২ টাকা থেকে ২৫ টাকা। আশ্চর্য হয়ে গেলাম।

গাড়ি সিটিং হয়েছে, কিন্তু চলে লোকালের মতোই। তার কথা ভাড়া বাড়ানোর জন্য বাসগুলোর এ ফন্দি। কাউন্টার সার্ভিসগুলোর অবস্থা আরো শোচনীয়। আজাদ নামের এক যাত্রী প্রতিদিন মেঘলা বাসে রায়েরবাগ থেকে বাংলামোটর আসেন। বাংলামোটরে তিনি টাইলসের দোকানে ম্যানেজারের চাকরি করেন। বলেন, রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভেতরে মেরাজনগরে থাকি। বাসা ভাড়া কম তাই সেখানে বসবাস করি। কিন্তু সেই আশা এখন দূরাশায় পরিণত হয়েছে। যে বেতন পাই তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাই। তার উপর কোনো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে প্রভাব পড়ে সংসারে। গত এক বছর ধরে বাস ভাড়া লাগে প্রতিদিন ৭০ টাকা। মাসে দুই হাজার টাকা। আগে যেখানে লাগতো মাত্র ৬০০ টাকা। কি করবো বুঝতে পারছি না। ঢাকায় সংসার নিয়ে থাকার চিন্তা করেছিলাম সন্তানদের নিজের কাছে রেখে মানুষ করব বলে।

সংসারের খাওয়া খরচই ডাবল হয়ে গেছে। কিভাবে কি করি বুঝতে পারছি না। পরিবার বলছে, বাড়ি পাঠিয়ে দিতে। চোখে অন্ধকার দেখছি। তিনি বলেন, বিশেষ করে বাস ভাড়ার অরাজকতা থেকে মুক্তি পেলে মাসে হাজার টাকা বেঁচে যেতো। যা সংসারে লাগাতে পারতাম। বসুন্ধরা সিটিতে কাপড়ের ব্যবসা করেন রাজীব। আগে থাকতেন কাঁঠালবাগানে। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর চলে যান শনিরআখড়ায়। তিনি বলেন, ভেবেছিলাম কম ভাড়ায় ভালোভাবে এখানে থাকবো। কিন্তু এখন দেখছি ভুল করেছি। যে হারে বাস ভাড়া বেড়েছে তাতে আগের জায়গায়ই ভালো ছিল। রাজীব বলেন, দেশে কোনো কিছুতেই কর্র্র্তৃপক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যে যেভাবে পারে সেভাবে চলছে। নিয়ন্ত্রণ থাকলে পরিবহন খাতে এমন অরাজকতা চলতে পারে না। তিনি বলেন, কাপড় আনতে মাঝেমধ্যে ভারত যাই। সেখানে সুশৃঙ্খল বাস চলাচল। ভাড়াও সহ্যের মধ্যে। মানুষজনের কোনো অভিযোগ নেই। বরং চালকরা নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে চলছে। তাদের কিছু বলেও দিতে হয় না। পাশেই বাংলাদেশ। দু’দেশের দু’চিত্র। অবাক হই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদারকি করলে অরাজকতা এখনো বন্ধ করা সম্ভব বলে মনে করেন রাজীব।

রংয়ের ব্যবসা করেন মজিদুল ইসলাম। তার তিন কন্যা। বড় কন্যা দনিয়া একে উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করতেন। কিন্তু গতবছর টাকার অভাবে ফরমফিলাপ করাতে পারেননি। তাই তার এসএসসি পরীক্ষাও দেয়া হয়নি। মজিদ বলেন, আমার মেয়ের বান্ধবীরা এখন কলেজে পড়ে। আর আমি মেয়েকে লেখাপড়া বন্ধ করে পরিবারকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। তিনি বলেন, সংসার চালাতেই কষ্ট হয়। লেখাপড়া কিভাবে করাবো। তিনি বলেন, আমাদের কথা কেউ ভাবে না। আমাদের জন্য কোনো মায়াও নেই কারও। সব খাতে খরচ বেড়েছে। কিন্তু আয় বাড়েনি। ফলে সংসারেও যন্ত্রণা, সমাজেও যন্ত্রণা। ঘরেও যন্ত্রণা, বাইরেও যন্ত্রণা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়