শিরোনাম
◈ গাজীপুরে হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু  ◈ বিশৃঙ্খলার পথ এড়াতে শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী ◈ তাপপ্রবাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা ◈ সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৮৪০ টাকা ◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সেই সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও)

প্রকাশিত : ০১ নভেম্বর, ২০১৭, ০৬:১১ সকাল
আপডেট : ০১ নভেম্বর, ২০১৭, ০৬:১১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাকশাল, বহুদল এবং সিইসির ‘ধারণ-প্রসব’

আনিস আলমগীর : রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা কথা বেশি-বেশি বলবেন– এটা তাদের পেশার দাবি। কিন্তু যারা শাসনতান্ত্রিক পদে অধিষ্ঠিত তারা বেশি কথা বলবেন কেন! তারা কোন মত ‘ধারণ’ করেন, কী ‘প্রসব’ করেন– তা শুনতে তো জাতি রাজি নয়। তারা কর্তব্য নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছেন কিনা জাতি তাই দেখতে চায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার কাছেও মানুষের চাওয়া সেটি।
নুরুল হুদা সাহেবকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। বিএনপি নির্বাচন কমিশন গঠন করলে আওয়ামী লীগ মানবে না, আর আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশন গঠন করলে বিএনপি মানবে না- এটা বাংলাদেশের নিয়তি। তারা নিজেরা যে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ লোক নিয়োগ দিতে পারেন তাও নয়।
আমি আগেও বলেছি, সমাজে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পাওয়ার মতো উপযুক্ত ব্যক্তি যারা আছেন তাদের মধ্যে নিরপেক্ষ লোক পাওয়া কঠিন বিষয়। বিভক্তি বেশি তাদের মধ্যে। সুতরাং নিরপেক্ষ না খুঁজে, লোকটি যে রাজনৈতিক মতেরই হোন না কেন, শাসনতান্ত্রিক পদে বসে তিনি নিজের মতকে চাপা দিয়ে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম কিনা- সেটাই দেখার বিষয়।

এ প্রসঙ্গে ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের চিফ ইলেকশন কমিশনার বিচারপতি আব্দুস সাত্তার সাহেবের কথা আবারও উল্লেখ করেছি আজ। সাত্তার মোহাজের ছিলেন। মোহাজেররা ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানে বিশ্বাস করতেন। তিনিও ব্যতিক্রম ছিলেন না। পাকিস্তানি নেতারা বক্তৃতা দিয়ে বলতেন যে, শেখ মুজিবকে ভোট দিলে শেখ মুজিব ৬ দফা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন আর এমন উদ্যোগ নিলেই পাকিস্তান ভেঙে যাবে। কথাটা সাত্তার সাহেবও জানতেন। তবুও দেখা গেছে ১৯৭০ সালের ভোট ছিল সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। আর এমন নিরপেক্ষতা নিশ্চিত ছিল বলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাত্তার কমিশনের বিরোধিতা করেননি।

সাত্তার সাহেব নির্বাচন কমিশনার যখন ছিলেন তখন ‘ধারণ’ করা, ‘প্রসব’ করার কথাও কখনও বলেননি। বিচারপতি রউফ প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে মাগুরা উপ-নির্বাচনে নিজে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ব্যাপক কারচুপি দেখে ঢাকায় পালিয়ে এসেছিলেন। তিনি নিজে সব কিছু দেখার পরও উপ-নির্বাচন বাতিল করেননি। বিচারপতি রউফ সাহেব মাগুরার উপ-নির্বাচন বাতিল করে পুনঃনির্বাচন করলে– বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসই অন্য রকম হয়ে যেত। তিনি বিএনপি মতাদর্শের লোক ছিলেন বলে তার পক্ষে তা করা সম্ভব ছিল না। কারণ তিনি মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে কিছু করার হিম্মৎ সম্পন্ন লোক ছিলেন না। সেদিন দেখলাম তিনিও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে পরামর্শ দিতে গেছেন!

আমাদের বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমাণ করার জন্য বহু গল্প কাহিনি আর ইতিহাস বলা আরম্ভ করেছেন। বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপকালে অকারণে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে তার মন্তব্যের কারণে চারিদিকে সমালোচনা হলেও ২৬ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে সিইসি হুদা বলেছেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা এটা এখনও ওন (ধারণ) করি।’ প্রথমবার তিনি বলেছিলেন, বহুদলীয় ব্যবস্থার প্রবর্তক জিয়া।

বেগম জিয়া যখন দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন তখন হুদা সাহেবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছিলেন। তিনি সরকারের এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছিলেন এবং কোর্টের সিদ্ধান্তে পুনঃবহাল হয়েছিলেন। অবসরে যাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। বিএনপি সরকার হুদা সাহেবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছিলেন কারণ বিএনপির ধারণা হুদা জনতার মঞ্চের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুতরাং সব কিছু মিলিয়ে হুদা সাহেব ধরে নিয়েছেন যে, বিএনপি তার বিরোধিতা করবে। একারণেই মনে হচ্ছে তিনি বিভ্রান্তিমূলক এবং বিতর্কিত ইতিহাস বলা আরম্ভ করেছেন।

১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর ১৭ থেকে ২০ আগস্ট খন্দকার মোস্তাক সর্বপ্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাকশাল ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে বহুদলীয় ব্যবস্থার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ অবজারভার-এর ‘বাকশাল গোস’ শিরোনামে পরিবেশিত সংবাদটা এখনও অনেকের চোখের সামনে ভাসছে। দৈনিক বাংলায় ব্যানার হেডলাইন করা হয়েছিল এ খবরের। এইসবতো কোনও বিলুপ্ত তথ্য নয়, যে কেউ ন্যাশনাল আর্কাইভে গিয়ে দেখতে পারেন। আগারগাঁও এর ন্যাশনাল আর্কাইভ সিইসির অফিসের পাশেই, তিনিও দেখে আসতে পারেন। আমি ১৯৯৭ সালে দেখে এসেছি সেখানে।

হিসাবটা খুব সোজা। বহুদলীয় গণতন্ত্র এই দেশে স্বাধীনতার আগেও ছিল, পরেও ছিল। বঙ্গবন্ধুর বাকশাল গঠন যদি সেই থাকার কবর রচনা হয় তাহলে সেটা যিনি বাতিল করেছেন সেই মুশতাকইতো বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবক্তক হবেন, জিয়া কী করে হন! মুশতাকতো পার্লামেন্টও বাতিল করেননি ক্ষমতা দখলের পর।

আরও সত্য হচ্ছে, খন্দকার মুশতাক বাকশাল বাতিলের ঘোষণার কিছুদিন পর ২৬ রমজানের রাতে রেডিও, টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সাধারণ নির্বাচনের তারিখও ঘোষণা করেছিলেন। এটাও ছিল মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত। বরং জিয়াদের ষড়যন্ত্রে এসব বাস্তবায়িত হতে পারেনি। তারা মোশতাককে উৎখাত করে, চার নেতাকে জেলে হত্যা করে, পার্লামেন্ট বাতিল করে, প্রধান বিচারপতি সায়েমকে রাষ্ট্রপতি ও চিফ মার্শাল ল এডমিনিসট্রেটর করে ১৯৭৬ সালের ঘোষিত নির্বাচনকে ১৯৭৯ সালে নিয়ে এসেছিলেন।

ইতিহাস যতই নির্মম হোক, সত্য তার আপন পথেই হাঁটবে। যার যা ভূমিকা তাই থাকবে। রাজনৈতিক দলের রেজিস্ট্রেশন প্রথা চালু করা যদি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন হয়, তাহলেতো সহি গণতন্ত্রের প্রবর্তক বলতে হবে মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনদের। এক এগারো আমলেই বাংলাদেশে প্রকৃত রাজনৈতিক দলের প্রকৃত রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়। এর আগে স্বামী-স্ত্রী-পরিবারের দু’চার জনকে নিয়ে রাজনৈতিক দল করা যেত, মার্কা একটা নিয়ে নির্বাচনও সম্ভব ছিল, যার সঙ্গে কোনও জনসম্পৃক্ততা ছিল না। সামরিক সরকাররা এসব ‘দোকানের’ মালিকদের খরিদ করে জনগণকে ধোকা দিয়েছিল।

হুদা সাহেব সাংবাদিকদের বলেছেন, জিয়াকে তিনি যে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক বলেছেন তা তিনি ‘ধারণ’ করেন। আমি তাকে একটা প্রশ্ন করবো- জিয়া যেই ‘ইয়েস-নো’ ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট হলেন সেই ভোটে ‘ইয়েস’ জিতে গেলে জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, যদি ‘নো’ জিততো কে প্রেসিডেন্ট হতেন? কোনও সেনাপ্রধান পদত্যাগ না করে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে পারেন?

একটি লোক অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করলেন, অবৈধ হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে দেশ শাসন করে গেলেন– তিনি হলেন গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক? পরিতাপের বিষয় হচ্ছে– গণতন্ত্র নিয়ে যারা তামাশা করেছেন হুদা সাহেব তাদেরকে বলছেন গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক! জিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকারও যদি তিনি প্রশংসা করতেন অনেকেই হজম করতে পারতো।

এই দেশে বাকশাল একটা গালি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের প্রজন্মের কাছে এটিতো সবচেয়ে ঘৃণিত রাজনৈতিক শব্দ হিসেবে তুলে ধরেছেন রাজনীতিবিদরা। বর্তমান প্রজন্মও জানে সেটি খারাপ। কিন্তু সবারতো জানা দরকার ‘গণতন্ত্র হত্যাকারী’ বাকশালটা আসলে কী? এ পদ্ধতিটা প্রবর্তন হলে কী হতো– জাতিতো তার কিছুই দেখেনি বলা চলে।

ইতিহাস বলে, বাকশাল প্রতিষ্ঠার ৬৪টি মহকুমাকে জেলা ঘোষণা করা হয়েছিল আর ৬৪ জেলায় গভর্নর নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এ সময়ে কিশোরগঞ্জে একটা উপ-নির্বাচন হয়েছে। উপ-নির্বাচনে কোনও দলীয় প্রার্থী ছিল না। কোনও দলীয় নেতা নির্বাচনি প্রচারে শরীক হননি। বাকশালেরও কোনও প্রার্থী ছিল না। যার ইচ্ছা সে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পেরেছে।
কথা ছিল যে নির্বাচিত হবে সেই বাকশালের এমপি। পার্লামেন্টেও সব সদস্য সব বিষযে তাদের স্বাধীন মতামত প্রদান করার অধিকার রাখেন এবং বিলের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন। ফ্লোর ক্রসিং এর জন্য সদস্য পদ হারাবার কোনও সম্ভাবনাও ছিল না। এটাইতো ছিল একদলীয় বাকশালের মোটামুটি রূপ।

ইতিহাস আরও বলে, কিশোরগঞ্জের উপ-নির্বাচনে সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছোট ভাই আর এক স্কুলের গরিব মাস্টার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। সৈয়দ নজরুলের ছোট ভাই মাস্টার সাহেবের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। ওই উপ-নির্বাচনে টাকার কোনও ছড়াছড়ি ছিল না কোথাও কোনও মাস্তানি ছিল না। মানুষ স্ব-উদ্যোগে কেন্দ্র গিয়ে, ভোট দিয়েছিলো। পান, বিড়ি, চা- কেউ কাউকেও খাওয়াতে হয়নি। এত কম খরচের নির্বাচন আর কেউ কখনও দেখেনি। হুদা সাহেব যেই গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের কথা বললেন, কিশোরগঞ্জের নির্বাচনে তো দেখি গণতন্ত্রের কোনও হেরফের হয়নি। বাকশাল তো গণতান্ত্রিক পদ্ধতির নির্বাচন রহিত করে নমিনেশন পদ্ধতির প্রবর্তন করেননি।

এখন বাকশাল নেই। এখন কোনও গরিব রাজনৈতিক কর্মী নির্বাচন করার কথা কল্পনা করতে পারে? পারে না। কারণ এখন এমপি নির্বাচন করতে ৩/৪ কোটি টাকার প্রয়োজন হয়। আওয়ামী লীগ আর বিএনপির নমিনেশন বোর্ড প্রথমেই প্রার্থীকে জিজ্ঞেস করেন, আপনাকে নমিনেশন দিলে নির্বাচনে কত কোটি টাকা খরচ করতে পারবেন।

শোনাকথা, একজন প্রার্থীর আর্থিক সামর্থ্য নমিনেশন বোর্ড বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল বলে তিনি চেক কেটে দিতে চেয়েছিলেন। কারণ প্রথম জীবনে উনি একটি ‘বাম’ (balm)-এর হকার ছিলেন। তিনি নমিনেশনেও পেয়েছিলেন আর নির্বাচিতও হয়েছিলেন। আগামীতে এরূপ ব্যবস্থা টিকে থাকলে সংসদ চেম্বার অফ কমার্স-এর রূপ নেবে। তখন দুর্নীতির মহা-উৎসব হবে। সংসদ হবে ভাগ ভাটোয়ারার কেন্দ্রবিন্দু।

সুতরাং, হুদা সাহেব ভুল ইতিহাস ধারণ করে ভুল কথা না বললেই আমরা খুশি হবো। কোনও দলকে নির্বাচনে আনা কোনও কমিশনের দায়িত্ব নয়। কঠিনভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করাতেই তার স্বার্থকতা। তাকে অনেকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, আমি আর নতুন করে বলতে চাই না যে– সাম্প্রতিক সময়ে বেশি কথা বলতে গিয়ে প্রধান বিচারপতির করুণ পরিণতি হয়েছে। বিচারবিভাগ নিয়ে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অনরূপ পরিণতির দিকে তিনি যেন পা না বাড়ান।

লেখক: শিক্ষক ও সাংবাদিক

[email protected]। বাংলাট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়